মরক্কোয় সামাজিক ন্যায়বিচার ও সংস্কারের দাবিতে তরুণদের শুরু করা আন্দোলনের আরও বিস্তৃতি ঘটে সহিংস হয়ে উঠেছে। খবর বিডিনিউজের।
এ পর্যায়ে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে দুইজন নিহত হয়েছেন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, বুধবার রাতে আগাদির শহরের কাছে লকলিয়ায় একদল ব্যক্তি নিরাপত্তা বাহিনীর অস্ত্র চুরি করার চেষ্টা করলে তাদের বাধা দিতে নিরাপত্তা বাহিনী গুলি চালায়, এতে দুইজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হন। রয়টার্স লিখেছে, সামাজিক ন্যায়বিচারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হলেও এই ঘটনায় তা প্রাণহানির দিকে মোড় নিয়েছে।
সামাজিক ন্যায়বিচার, উন্নত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দাবিতে শিথীলভাবে গঠিত ‘জেন–জি ২১২’ বলে নিজেদের পরিচয় দেওয়া অনলাইনভিত্তিক তরুণদের একটি গোষ্ঠী শনিবার থেকে এ আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনের প্রচার চালাতে তারা টিকটক, ইনস্টাগ্রাম এবং গেইমিং অ্যাপ ডিসকর্ড ব্যবহার করে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আন্দোলনকারীরা আধাসামরিক বাহিনীর একটি স্থাপনায় ভাংচুর চালানোর সময় নিরাপত্তা বাহিনী কাঁদুনের গ্যাস ব্যবহার করে তাদের ঠেকানোর চেষ্টা করে, কিন্তু তা ব্যর্থ হওয়ার পর আত্মরক্ষার্থে তারা গুলি চালায়। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ধারালো অস্ত্রে সজ্জিত আন্দোলনকারীদের দলটি আধাসামরিক বাহিনীর ওই স্থাপনার একটি অংশে আগুন ধরিয়ে দেয়, এতে নিরাপত্তা বাহিনী গুলি চালাতে বাধ্য হয়। তবে এ ঘটনায় কতোজন আহত হয়েছেন তা নির্দিষ্ট করে জানায়নি তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বুধবার রাতে রাজধানী রাবাতের নিকটবর্তী সালেতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। জনবহুল এলাকাগুলোতে তরুণদের কয়েকটি দল পুলিশের দিকে পাথর নিক্ষেপ করতে শুরু করে, দোকানপাটে লুটপাট চালায়, ব্যাংকে আগুন দেয় এবং পুলিশের গাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। জিব্রাল্টার প্রণালীর ট্যানজিয়ার শহরে তরুণরা নিরাপত্তা বাহিনীর দিকে পাথর ছোড়ে। আগাদিরের কাছে সুস অঞ্চলের ছোট শহরগুলোতে টানা দ্বিতীয় রাতের মতো তীব্র অস্থিরতা দেখা গেছে।
সিদি বিবি শহরে মুখোশ পরা তরুণরা আঞ্চলিক সদরদপ্তরগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয় আর প্রধান সড়ক অবরোধ করে, রয়টার্সকে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা হাসান বারকুজ। আগাদিরের দক্ষিণে বায়োগরায় একটি ব্যাংকে ভাংচুর চালানো হয় ও কয়েকটি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মরক্কোর জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য মারাকেশে পুলিশের সঙ্গে তীব্র সংঘর্ষের পর আন্দোলনকারীরা একটি পুলিশ স্টেশন জ্বালিয়ে দেয়। আগাদিরের পূর্ব দিকের এমনিতে শান্ত শহর তারুদান্তেও সহিংসতা হয়েছে। এখানে আন্দোলনকারীরা নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়, দোকানপাটে হামলা চালায় ও বেশ কয়েকটি গাড়ি জ্বালিয়ে দেয়।
এর বিপরীতে মরক্কোর অর্থনৈতিক রাজধানী কাসাব্লাঙ্কায় এবং পূর্বাঞ্চলীয় শহর ওজদা ও তাযায় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হয়েছে। আগাদিরের হাসপাতালের খারাপ অবস্থাকে কেন্দ্র করে প্রাথমিক প্রতিবাদ শুরু হওয়ার পর দ্রুতই তা ছড়িয়ে পড়ে, দেশজুড়ে ক্ষুব্ধ তরুণরা রাস্তায় নেমে আসে।