বিসর্জনেও ফিলিস্তিন মুক্তির প্রার্থনা

কক্সবাজার সৈকতে লাখো মানুষের সমাগম

আজাদী ডেস্ক | শুক্রবার , ৩ অক্টোবর, ২০২৫ at ৬:২২ পূর্বাহ্ণ

শারদীয় দুর্গোৎসবের বিদায়ের মুহূর্ত এবার ভিন্ন আবেগ ছুঁয়ে গেল কক্সবাজারে। সৈকতের বালুকাবেলায় বিসর্জনের সুরের সঙ্গে মিশে গেল ফিলিস্তিন মুক্তির প্রার্থনা। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে বিজয়া দশমীতে সমুদ্র সৈকতে লাখো মানুষের সমাগমে এমন আবেগঘন দৃশ্য দেখা গেছে। মঞ্চে দাঁড়িয়ে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা অরুপ শর্মা বলছিলেন, আমরা আজ দেবী দুর্গার বিদায় জানাচ্ছি। কিন্তু মানবতার সংগ্রাম চিরন্তন। তাই এই মুহূর্তে আমরা ফিলিস্তিনের মানুষের শান্তি ও মুক্তির জন্য প্রার্থনা করছি।

কঙবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি উদয় শঙ্কর পাল বলেন, এবার দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। শুধু ধর্মীয় সম্প্রীতি নয়, মানবিক মূল্যবোধেরও প্রকাশ ঘটেছে এ আয়োজনের মাধ্যমে। বিদায়ের সুরে ফিলিস্তিনের মুক্তির প্রার্থনা আমাদের সমবেদনা ও সহমর্মিতার বহিঃপ্রকাশ।

বিডিনিউজ জানায়, বিসর্জনের মুহূর্তে সৈকতের বালুচরে একদল তরুণতরুণী হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়ান। তাদের মধ্যে অতসী দে বলেন, বিজয়ার শুভেচ্ছার পাশাপাশি আমরা চাই বিশ্বশান্তি। ফিলিস্তিনের মানুষ যেনো মুক্তভাবে বাঁচতে পারে, সেটাই আমাদের আহ্বান। একই দলে থাকা আবদু রশিদ মানিক বলেন, ধর্মবর্ণের ভেদাভেদ ভুলে মানবতার জয়গানই আজ এখানে শোনা যাচ্ছে। বিজয়ার আনন্দকে আমরা ফিলিস্তিনের মুক্তির প্রার্থনার সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছি।

সাধারণ পুণ্যার্থীরাও ছিলেন আবেগে আপ্লুত। রামু থেকে আসা পুণ্যার্থী সীমা দত্ত বলেন, আজকের দিনটা কেবল বিদায়ের নয়, মানবতার ডাকও শোনা গেল। সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে ফিলিস্তিন মুক্তির আহ্বান শুনে সত্যিই অন্যরকম লাগছে। স্থানীয় দর্শনার্থী নুরুল হাসান বলেন, আমি মুসলিম হয়েও বিজয়া দশমীর এ দৃশ্যে উপস্থিত থেকে অভিভূত হয়েছি। এখানে ধর্মবর্ণের ভেদাভেদ নেই, আছে শুধু সম্প্রীতি।

তবে প্রকৃতি যেন বিদায়ের সুরে বিষণ্নতা ছড়িয়ে দিয়েছে। ভোর থেকে মেঘলা আকাশ ও বৃষ্টিতে আচ্ছন্ন ছিল কক্সবাজার। বিকালে গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে বালুকাবেলায় জমজমাট ছিল লাখো মানুষের সমাগম। যারা বৈরী আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে মেতে উঠেন বিজয়ার আনুষ্ঠানিকতায়। বিদায়ের সুরে শেষ পর্যন্ত উচ্চারিত হয়েছে, সুন্দর আগামীর বাণী– ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।’ আর সেই স্লোগানের সঙ্গে এবার যুক্ত হলো মানবতার প্রার্থনা– ‘ফিলিস্তিন হোক মুক্ত।’

কক্সবাজার জেলা পুলিশের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, এবারের বিজয়া দশমীতে পাঁচ শতাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন ছিল। সেনাবাহিনীও মাঠে ছিল। নিরাপত্তায় কোনো ঘাটতি ছিল না। এত বড় সমাবেশে যেনো কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য পুরো সৈকত এলাকা বুধবার থেকেই নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয় বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।

দৈনিক আজাদীর কঙবাজার প্রতিনিধি জানান, দেশের সর্ববৃহৎ প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান গতকাল বৃহস্পতিবার মেঘাচ্ছন্ন বিকেলে কঙবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্টের উন্মুক্ত মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়। কঙবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি উদয় শঙ্কর পাল মিঠুর সভাপতিত্বে এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক স্বপন দাশের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন কঙবাজার জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন শাহীন, বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি লুৎফর রহমান কাজল, সাবেক এমপি আলমগীর মুহাম্মদ মাহফুজুল্লাহ ফরিদ, কঙবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শামীম আরা স্বপ্না, কঙবাজার শহর জামায়াতের আমীর আবদুল্লাহ আল ফারুক ও সাবেক পৌর মেয়র সরওয়ার কামাল।

এতে বক্তারা বলেন, কঙবাজার হচ্ছে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির তীর্থ কেন্দ্র। যুগ যুগ ধরে প্রতি বছর কঙবাজারের সকল ধর্মের মানুষ শারদীয় দুর্গাপূজাকে উৎসব হিসেবে দেখে আসছে। প্রতিমা বিসর্জনের দিন কঙবাজার সমুদ্র সৈকতের বিশাল বালিয়াড়ি সকল ধর্মের মানুষে ভরে গেছেএটাই সম্প্রীতি, এটিই উৎসবএটিই আন্তঃধর্মীয় সৌন্দর্য।

কঙবাজার হোটেলেমোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, দুর্গাপূজা ঘিরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি হয়ে গেছে। সেই সাথে সরকারি অফিসেও চলছে চারদিনের ছুটি। সব মিলে এই ছুটি উপভোগ করতে কঙবাজার ছুটে এসেছেন সারাদেশের বিভিন্ন স্তরের পর্যটকরা। সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, এই ছুটি উপলক্ষে ১৫ দিন আগে থেকেই হোটেল কক্ষ বুকিং হতে শুরু করে। ক্রমান্বয়ে ছুটির শুরু আগেই প্রায় ৯০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়ে যায়। বাকি কক্ষও এরই মধ্যে বুকিং হয়ে গেছে। ফলে চারদিন ধরে কোনো হোটেলে কক্ষ খালি নেই। এতে অনেক পর্যটক কক্ষ না পেয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসেন্টমার্টিনে পানিবন্দি দুই শতাধিক বাড়িঘর
পরবর্তী নিবন্ধহ্রদ, পাহাড় ও ঝরনা-রাঙামাটিতে বেড়েছে পর্যটকের আনাগোনা