চট্টগ্রামে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। চলতি বছর এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত আড়াই হাজর ছাড়িয়েছে। এছাড়া মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের। যার অর্ধেকই গত দুই মাসে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চট্টগ্রামে বর্তমানে কখনো মাঝারি ও কখনো থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া ভ্যাপসা গরমও রয়েছে। এমন আবহাওয়া ডেঙ্গুর বংশবিস্তারের জন্য বেশ উপযোগী। এছাড়া বৃষ্টিতে বিভিন্ন জায়গায় স্বচ্ছ পানি জমছে। এতে মশার প্রজনন বাড়ছে।
এদিকে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে গতকাল পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ৫৬১ জন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৭০ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২৮ জন, মার্চে ২২ জন, এপ্রিলে ৩৩ জন, মে মাসে ১১৬ জন, জুন ১৭৬ জন, জুলাই মাসে ৪৩০ জন, আগস্টে ৭০৫ জন, সেপ্টেম্বরে ৯৩৫ জন এবং চলতি অক্টোবরে গতকাল পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৪৬ জন। অন্যদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরো ২০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১১ জন, সিএমএইচ হাসপাতালে ১ জন এবং বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে আরো ৮ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, ডেঙ্গু মোকাবেলায় সাধারণ মানুষকে আরো বেশি সচেতন হবে। বিশেষ করে ফুলের টব ও ডাবের খোসা, গাড়ির টায়ারসহ বিভিন্ন পরিত্যক্ত বস্তুতে যাতে পানি না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। রাতে ছাড়াও দিনেরও বেলায়ও মশারি টাঙাতে হবে।
চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের কয়েকজন চিকিৎসক জানান, ডেঙ্গু রোগীর মূল চিকিৎসা হচ্ছে ফ্লুইড ম্যানেজম্যান্ট। অনেক অনেক রোগী এনএসওয়ান রিপোর্ট হওয়ার সাথে সাথে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যাচ্ছেন। এটি আসলে কোনো দরকার নাই। ডেঙ্গুর প্ল্যাটিলাট কাউন্ট ১০ হাজারের নিচে নেমে গেলে তখন ইন্টারনাল ব্লিডিং শুরু হয়। তখন ক্রিটিক্যাল কেয়ার ম্যানেজম্যান্টের প্রয়োজন পড়ে। আবার প্ল্যাটিলেট কমা শুরু হয় জ্বর কমে যাওয়ার পর পর। তখন শারীরিক কিছু অসুবিধা দেখা দেয়। ওই সময় হাসপাতালে ভর্তি হতে পারে। সাধারণ মানুষের মধ্যে প্ল্যাটিলেট নিয়ে আতঙ্ক লক্ষ্য করা যাচ্ছে, আসলে প্ল্যাটিলেট যখন বাড়া শুরু হয় তখন দ্রুতই বাড়ে। কাজেই ডেঙ্গু জ্বর হলেই আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্তের হার কিছুটা বাড়লে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয়। আমরা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে সজাগ রয়েছি। ডেঙ্গুর সমস্যা আমাদের জন্য নতুন নয়। তাই ডেঙ্গু হলে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নাই। এদিকে গত জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) ‘র্যাপিড রেসপন্স টিম’ নগরীর ছয়টি ওয়ার্ডে জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে। জরিপে কীটত্বাত্বিক দলের সদস্যরা নগরীর চট্টেশ্বরী রোড, ও আর নিজাম রোড, আগ্রাবাদ, পাহাড়তলী, হালিশহর এবং ঝাউতলা এলাকায় ১২৮টি বাড়ির মধ্যে ৬২ টিতে এডিস মশার লার্ভা দেখতে পান। পরবর্তীতে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন স্বাক্ষরিত জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সেখানে মশা নিধনে তিনটি সুপারিশ করা হয়। সেগুলো হলো–ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর লক্ষণ বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করা। কীটতাত্ত্বিক জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাসমূহে অনতিবিলম্বে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং পর্যায়ক্রমে সিটি কর্পোরেশনের অন্যান্য ওয়ার্ডসমূহকে উক্ত কার্যক্রমের আওতায় আনা এবং মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে জনগণের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা।
উল্লেখ্য, গত বছর ২০২৪ সালে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৩২৩ জন এবং মারা যান ৪৫ জন। এর আগে ২০২৩ সালে আক্রান্ত হয়েছিল ১৪ হাজার ৮৭ জন। এরমধ্যে মারা যায় ১০৭ জন। এছাড়া ২০২২ সালে মোট আক্রান্ত ৫ হাজার ৪৪৫ জনের মধ্যে মারা যান ৪১ জন এবং ২০২১ সালে আক্রান্ত হয় ২২১ জন এবং মারা যায় ৫ জন।