প্রবাসী ছাড়াও দেশে কারা কীভাবে ভোট দেবেন

পোস্টাল ভোটিং অ্যাপ

| বৃহস্পতিবার , ২ অক্টোবর, ২০২৫ at ৬:১৩ পূর্বাহ্ণ

জাতীয় নির্বাচনের আগ দিয়ে লাখ দশেক প্রবাসীকে ভোটের আওতায় আনতে পোস্টাল ভোটিংয়ের ‘এলাহী কাণ্ড’ চললেও তাতে ফল মেলে যৎসামান্যই। যদিও এসব প্রবাসী ভোটার ছাড়াও দেশের ভেতরেই ভোটকেন্দ্রের বাইরে থেকে যায় ভোটারদের একটি বড় অংশ।

সরকারিবেসরকারি চাকরিজীবী, নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাকর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য আর জেলখানার কয়েদিরা ভোটকেন্দের বাইরে থেকে যান। সব মিলিয়ে সেই সংখ্যা কত, তার সঠিক হিসাব না পাওয়া গেলেও প্রতি বছর কেবল ভোটের কাজেই নিয়োজিত থাকে প্রায় আটদশ লাখ মানুষ। খবর বিডিনিউজের।

প্রবাসীদের মত তারাও চাইলে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারে, তবে এর জন্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবেদন ও অন্যান্য জটিল কালাকানুনের ঘেরাটপে তাতে আগ্রহই দেখা যায়নি কারও।

এবারের ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ডাকযোগে ভোটদানের সেই প্রক্রিয়া সহজ করছে নির্বাচন কমিশন। বিদেশে ব্যালট পাঠানো ও বিদেশ থেকে আনাসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার উদ্যোগ নিয়েছে কমিশন। এতে প্রথমবারের মত তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর পোস্টাল ভোটিং পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে। পোস্টাল ভোটিং সহজ করতে একটি অ্যাপ চালু করছে ইসি। প্রাবাসী ছাড়াও নির্বাচনি এলাকার বাইরে থাকা ভোটাররাও সেই অ্যাপে নিবন্ধন করে এবার ভোট দিতে পারবেন।

এ বিষয়ে নির্বচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ বলছেন, সরকারি কর্মকর্তা যারা নিজ নির্বাচনি এলাকার বাইরে থাকেন, তারা পোস্টাল ভোটিংয়ের জন্য নিবন্ধন করতে পারবে।

প্রশাসন, পুলিশসহ অনেকে যারা নিজ জেলার বাইরে নিয়োজিত, তাদের জন্য এ সুযোগ। ভোটের কাজে নিয়োজিত ও আইনি হেফাজতে থাকার ব্যক্তিরাও সেই সুযোগ পাবেন। নিবন্ধন অ্যাপ চালুর সময় এ ব্যাপারে বিস্তারিত তুলে ধরার কথা বলছেন ইসি সচিব।

এতে প্রতীক বরাদ্দের পর যারা নির্ধারিত অ্যাপে নিবন্ধন করবেন, তাদের কাছে প্রার্থীর প্রতীকের ছবিসহ ব্যালট পেপার খামে পৌঁছে যাবে। ভোট দেওয়ার পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা ভোটারের নির্বাচনি এলাকার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পৌঁছে যাবে। ভোটের দিন গণনা করা হবে এসব পোস্টাল ব্যালটের ভোট।

সবশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে রাষ্ট্রপতি পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিয়েছিলেন। পোস্টাল ব্যালট পাওয়ার যোগ্য ভোটারদের আবেদনের নিয়ম আগেও ছিল, কিন্তু সাড়া মেলেনি কারও। এবার নতুনভাবে প্রযুক্তি সহায়ক ব্যবস্থা আসায় শুধু নিবন্ধন করেই পাওয়া যাবে পোস্টাল ব্যালট। ব্যালট কোথায় যাচ্ছে, তা অনলাইনে ট্র্যাকও করতে পারবেন ভোটাররা।

পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ : ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের কথা রয়েছে। সেজন্য ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল দেবে এ এম এম নাসির উদ্দিন নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। এরই মধ্যে নির্বাচনি আইন সংস্কারের জন্য পোস্টাল ব্যালটে ভোট নেওয়ার বিষয়টি যুক্ত করে সরকারের কাছে পাঠিয়েছে কমিশন। পোস্টাল ভোটিং নিবন্ধন প্রক্রিয়া ও ভোটিং প্রক্রিয়া ইসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। পোস্টাল ব্যালটের প্রচারও শুরু হয়েছে প্রবাসে।

গতকাল বুধবার ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপ নভেম্বরের মাঝামাঝি চালু হবে। এ অ্যাপের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটার ও দেশের ভেতরে নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের পোস্টাল ভোটিংয়ের জন্য নিবন্ধন করতে হবে। অ্যাপ একটি।

এই অ্যাপের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশি ও দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত সরকারি চাকরিজীবী, ভোটের দিন যারা নির্বাচনি দায়িত্বে থাকবেন কিংবা আইনি হেফাজতে থাকা ব্যক্তিরা নিবন্ধন করতে পারবেন এবং পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন।

তিনি বলেন, দেশের ভেতরে ও বাইরের পদ্ধতি একই, তবে সময়ের পার্থক্য হবে। প্রবাসীদের জন্য আগে। দেশে যারা, তাদের জন্য আরেকটু পরে। প্রবাসে যিনি আছেন এবং দেশে যিনি আছেননিবন্ধনটা একই। নিবন্ধনম করতে হবে এনআইডি দিয়ে।

জানাবেন কোন ঠিকানায় আছেন। প্রবাসের ঠিকানা প্রবাসী দিবেন, আর দেশের অভ্যন্তরে যিনি নিবন্ধন করবেন, তার ঠিকানাটা এখানে দিবেন।

পার্থক্যটা এই শুধু। কারাগারে বা আইনি হেফাজতে থাকা ব্যক্তিদের চেহারা শনাক্ত করাসহ সার্বিক সহযোগিতার বিষয়টি কারা কর্তৃপক্ষ দেখবেন।

পোস্টাল ভোটের নিবন্ধনের জন্য সব মিলিয়ে দেশের ভেতরে কত ভোটার রয়েছে সে ধারণা দেননি ইসি কর্মকর্তারা। দেশের ৭১ কারাগারে কত ভোটার রয়েছে, নিজ নির্বাচনি এলাকার বাইরে ভোটের সময় কত সরকারি কর্মকর্তা থাকবে, তাও আগাম বলা সম্ভব নয়।

তবে ভোটে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীসহ ভোটের কাজে নিয়োজিত থাকে প্রায় আটদশ লাখ। ডাক বিভাগের মাধ্যমে ব্যালট পাঠানো হবে এবং ফেরত আসবে ভোটের খাম। কারা কর্তৃপক্ষ আইনি হেফাজতে থাকা ব্যক্তিদের বিষয়টি দেখভাল করবে আর অন্যদের ঠিকানায় নির্দেশনাসহ ব্যালট পেপার যাবে আর নিকস্ট পোস্ট বঙের মাধ্যমে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ফেরত যাবে।

অ্যাপ চালুর পর ডিসেম্বরে তফসিল ঘোষণার সময়কাল বিবেচনা করে নিবন্ধন শুরু ও পোস্টাল ব্যালট পাঠানোর সময় জানানো সম্ভব হবে বলে জানান ইসি সচিব। আখতার আহমেদ বলেন, এটাও বলতে পারব নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে, অ্যাপটা লঞ্চ হওয়ার পরে। অ্যাপটা চালুর পরে বলব আপনারা রেজিস্ট্রেশনটা করেন। ‘ফ্লো অফ রেজিস্ট্রেশন’ প্রথম দিকে একটু বেশি থাকে, আস্তে আস্তে এটা স্তিমিত হয়।

পোস্টাল ভোটিংয়ের জন্য যে অ্যাপ চালু করা হচ্ছে সেখানে নিবন্ধনের জন্য সর্বোচ্চ ১০ মিনিট সময় লাগতে পারে বলে ইসি সচিব জানিয়েছেন। বলেন, মধ্য নভেম্বরে অ্যাপ চালু হবে ধরুন। রেজিস্ট্রেশন করতে আমার ধারণায় একজনের লাগবে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট।

এনআইডি কার্ডটি লাগবে। নিবন্ধন ধরেন ১৫ মিনিটও লাগল। ১৫ দিন সময় দিলে কত রেজিস্ট্রেশন হবে ধারণা নেই। এটা তখন দেখা যাবে। সচিব বলেন, প্রবাসে ও দেশে কতজন ভোটের জন্য আবেদন করবে, সেটা সময়ই বলে দেবে। এখন কতজন এই সুযোগটা উপভোগ করবেন, নিবেন; এটা তো নির্ভর করে যার সুযোগ আছে।

নিবন্ধন প্রক্রিয়া : প্রথমে অ্যাপটি চালু করে মোবাইল নম্বর দিয়ে নতুন অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। মোবাইলে একটি ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ডওটিপি যাবে। ওটিপি ব্যবহার করে নম্বর যাচাই করতে হবে। ছবি তুলতে হবে ভোটারের। ‘লাইভ ফেস ভেরিফিকেশন’ সম্পন্ন করতে হবে।

জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে নিয়ে সেলফি তুলতে হবে। রেজিস্ট্রেশনের জন্য এনআইডির ছবি তুলতে হবে, যা যাচাই হবে। ঠিকানা দিতে হবে, যে ঠিকানায় পোস্টাল ব্যালট পেপার যাবে। অ্যাকাউন্ট যাচাই করার পর নিবন্ধিত হবে। এরপর পোস্টাল ব্যালট ডাকযোগে পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করবেন ভোটার।

ভোট দেবেন যেভাবে : ব্যালট পেপার পৌঁছাতে অ্যাপে দেওয়া ঠিকানা তুলে ধরা হবে। ভোট দিতে ইসির নির্দেশনাবলী থাকবে। মোবাইল নম্বর নিশ্চিত করতে হবে। নিজের ছবি তুলতে হবে। খামের উপরে থাকা কিউআর কোড স্ক্যান করতে হবে। ব্যালট পেপারে ক্রস বা টিক চিহ্ন দিয়ে ভোট দিতে হবে। ব্যালট পেপারের নমুনা।

খামের ভেতরে থাকা ঘোষণাপত্রে সই করতে হবে। ভোট দিয়ে রিটার্ন খামে ব্যালট পেপার রেখে তা বন্ধ করতে হবে এবং নিকটস্থ পোস্ট অফিসে জমা দিতে হবে। নিবন্ধনের সময় কখন শুরু হবে এবং কোন সময়ের মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠাতে হবে, সেটি পরে জানিয়ে দেবে নির্বাচন কমিশন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইন্দোনেশিয়ায় স্কুলের খাবারে ৯ হাজারের বেশি শিশু বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে
পরবর্তী নিবন্ধউসকানিতে পা দিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করা যাবে না