প্রবীণ জনগোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে

| বুধবার , ১ অক্টোবর, ২০২৫ at ১০:৩২ পূর্বাহ্ণ

আজ ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও ‘আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস ২০২৫’ উদযাপিত হবে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ১৯৯০ সালের ১৪ ডিসেম্বর প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যুগান্তকারী এ সিদ্ধান্তের আলোকে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও ১৯৯১ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

বিজ্ঞান, প্রযুক্তি তথা চিকিৎসা শাস্ত্রের উন্নয়নের ফলে আমাদের গড় আয়ু বেড়ে যাওয়ায় একদিকে শিশু মৃত্যুর হার কমছে অন্যদিকে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। বিশ্বে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ১০০ কোটিতে পৌঁছেছে। বাংলাদেশে এ সংখ্যা এখন প্রায় দেড় কোটি। বাংলাদেশের মতো দরিদ্রপ্রবণ দেশে খাদ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাসস্থানসহ বিভিন্ন সমস্যায় প্রবীণরা প্রতিনিয়ত জর্জরিত হচ্ছে।

জাতিসংঘের মতে, পৃথিবীর জনসংখ্যা এখন ৮ বিলিয়ন বা ৮০০ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। অভূতপূর্ব বৈশ্বিক জনসংখ্যার এ বৃদ্ধি ঘটেছে মূলত জনস্বাস্থ্যের উন্নতি, পুষ্টি, উন্নত জীবনযাপন রীতি, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও ওষুধের কারণে মানুষের গড় আয়ু বাড়ায়, বাংলাদেশও যার ব্যতিক্রম নয়। তবে কিছু দেশের বেলায় উচ্চ ও স্থির উর্বরতার অবদান আছে। যাহোক, আগামী ২০৩৭ সালে বিশ্ব জনসংখ্যা ৯০০ কোটিতে গিয়ে দাঁড়াবে বলে প্রক্ষেপণে বলা হচ্ছে। কাজেই বৈশ্বিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের সম্পর্কটি সাদা চোখে স্পষ্টতই দেখা যায় অর্থাৎ বেশি মানুষ বেশি অভিঘাৎ। আরো লক্ষণীয় যে, সামপ্রতিক দশকগুলোয় বিশ্ব জনসংখ্যায় যে নাটকীয় পরিবর্তন হয়েছে তাতে বয়স্কদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে প্রায় ৯০ কোটি মানুষ ষাটোর্ধ্ব, ২০৫০ সাল নাগাদ ২০০ কোটি হবে, যা বিশ্বের জনসংখ্যার ২২ শতাংশ। উল্লেখ্য, সে বছরই মানব ইতিহাসে প্রথম বারের মতো ষাটোর্ধ্ব বয়স্কদের সংখ্যা শিশুদের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যাবে। জাতিসংঘ অনুযায়ী ১৯৫০২০১০ সময়ে বিশ্বব্যাপী প্রত্যাশিত আয়ু ৪৬ বছর থেকে ৬৮ বছরে উন্নীত হয়েছে, এ শতকের শেষে তা ৮১ বছরে ঠেকবে। বাংলাদেশের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী ২০৫০ সালে দেশের প্রবীণ জনসংখ্যা দাঁড়াবে ৩ কোটি ৬০ লাখে অর্থাৎ জনসংখ্যার ২২ শতাংশ।

সমাজবিজ্ঞানীরা বলেন, আমাদের দেশে একটা বিরাট সরকারিবেসরকারি অবসরপ্রাপ্ত কর্মজীবী জনগোষ্ঠী রয়েছে যাদের অবসর গ্রহণের পর আর কিছুই করার থাকে না। পরিবারের জীবনজীবিকা নির্বাহের জন্য তাদের মধ্যে অনেকেই সারা জীবনের সঞ্চয়ের বা বলা যায় চাকরিতে জমানো আয়ের একটি অংশ দিয়ে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করে থাকেন। এটাই অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ নরনারীদের আর্থিক সক্ষমতার উৎস। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, সরকার প্রবীণ বা বয়স্কদের জন্য ভাতা প্রদান করলেও প্রবীণদের সঞ্চয়ের এ মুনাফা থেকে বিগত দুই অর্থবছর থেকে ৫ শতাংশ হারে মুনাফার কর কেটে রাখা হচ্ছে। এ নিয়ে বহু আবেদননিবেদন জানানো হলেও সরকার এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না বা বিষয়টি বিবেচনায় নিচ্ছে না যা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং অমানবিকও বটে। শুধু তাই নয়, বর্তমান সরকার জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা ২০১৩ এবং পিতামাতার ভরণপোষণ আইন ২০১৩ পাস করলেও এখনো আমরা এর যথাযথ বাস্তবায়ন দেখছি না।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা সমস্যায় পড়েন প্রবীণেরা। প্রবীণদের ভাতা দেওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থান কিংবা আয়ের সুযোগ তাঁদের ক্ষমতায়ন করবে। পরিবারের সদস্যদেরও প্রবীণ অধিকার সুরক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। কারণ, পরিবার ছাড়া প্রবীণদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা অসম্ভব। এতেই সমাজে প্রবীণের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে।

তাঁরা বলেন, প্রবীণদের সম্মানের সঙ্গে দেখভাল করতে হবে। প্রবীণেরা পরিবারের বাইরের কেউ নন। প্রবীণ নারীর চেয়ে প্রবীণ পুরুষ সামলানো সহজ। প্রবীণেরা কথা বলতে চান, কিন্তু কেউ শুনতে চায় না। অথচ এই প্রবীণদের হাত ধরেই সবাই বড় হয়েছে। প্রবীণদের জন্য চারটি বিষয় দেখা প্রয়োজন, তা হলো ২৪ ঘণ্টা থাকাখাওয়ার নিশ্চয়তা, চিকিৎসা, সমবয়সী বন্ধুবান্ধবের সাহচর্য এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। প্রবীণদের অবহেলা করা হয়। এ জন্য অনেক প্রবীণ নিবাস প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, প্রবীণ মানেই দুর্দশাগ্রস্ত নন। প্রবীণদের নিজেদেরও অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। পরিবার ছাড়া প্রবীণদের এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা অসম্ভব। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে সমান্তরালে সচেতন হতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধসাফিল মিয়া বীরোত্তম : অসম সাহসী বীর মুক্তিযোদ্ধা