‘রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি এক হওয়ায়’ দেশে ১০–১৫টি ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির’ জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে তাদের ‘শাস্তি’ দাবি করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। শুধু সম্পদ জব্দ না করে তা সরকারের অধীনে নিয়ে আনার সুপারিশ করে তিনি বলেছেন, তারা ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এসব গ্রুপকে বাংলাদেশ ব্যাংক শনাক্ত করে ফেলেছে। এখন তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বনানীতে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআরআই) ও অস্ট্রেলিয়ার ডিপার্টমেন্ট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেড (ডিএফএটি) এর যৌথ উদ্যোগে ‘মান্থলি ম্যাক্রোইকোনমিক ইনসাইটস (এমএমআই)’ এর জুলাই–আগস্ট সংস্করণের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন ফরাসউদ্দিন। খবর বিডিনিউজের।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক শক্তি ও অর্থনৈতিক শক্তির স্বার্থটা যখন এক হয়ে যায়, তখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মত অনেক কোম্পানি তৈরি হয়। শুধু তাদের সম্পদ জব্দ করাই যথেষ্ট না, এই সম্পদ উদ্ধার করে সরকারের খাতায় নিয়ে আসতে হবে।
অনুষ্ঠানে জুলাই–অগাস্ট সময়ে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির পরিস্থিতি নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিআরআই এর মুখ্য অর্থনীতিবিদ আশিকুর রহমান। সেখানে তিনি ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’ প্রসঙ্গের অবতারণা করে বলেন, আমরা কিছু ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জন্ম দিয়েছি। ওই সব ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে তলানির দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মত প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা ও দক্ষতা যদি আমরা রক্ষা না করতে পারি, তাহলে বাংলাদেশে আবারও নতুন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি জন্মগ্রহণ করতে পারে।
পরে সাংবাদিকরা ফরাসউদ্দিনের কাছে জানতে চান, নতুন জন্ম নেওয়া ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির’ সঙ্গে সরকারের আচরণ কেমন হওয়া উচিত। তার উত্তরে ফরাসউদ্দিন তার মতামত দেন। ব্যাংক একীভূতকরণের বিষয়ে ফরাসউদ্দিন বলেন, আশির দশকে যুক্তরাষ্ট্রেও এমন উদ্যোগ নিয়ে কোনো ফল আসেনি। ব্যাংক মার্জারের বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমি একমত না। কিন্তু বাংলাদেশে বাস্তবতা হল ব্যাংক মার্জার। এর আগেরবার উদ্যোগ নেওয়ার সময়ে দ্রুত করে ফেলার পক্ষে ছিলাম। এখন যারা ব্যাংক খাতের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তারা সৎ ও দক্ষ। আশা করি তারা ভালোভাবে কাজটি করতে পারবেন।
ফরাসউদ্দিন বলেন, কোনো একজন কুলাঙ্গারের সম্পদ থেকে স্ত্রী–পুত্র–কন্যা যদি স্বাধীন থাকেন, তাহলে তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার কী কারণ আছে? কিন্তু এটা হচ্ছে এবং এটা ভালো ফল দেবে বলে মনে করি না। এতে ব্যাংকের প্রতি আস্থা কমে যাবে। তিনি বলেন, আমি সরকারকে বলব, ব্যাংক হিসাব জব্দের বিষয়টি খুব সীমিত রাখতে হবে। ওই যে ১০–১৫ জন কুলাঙ্গারের নাম এসেছে, তাদের মধ্যে এটি সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।