যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফার গাজা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় বেশ কিছু অস্পষ্ট বিধান রয়েছে যা ফিলিস্তিন এবং ওই অঞ্চলের ভবিষ্যতের জন্য নির্ণায়ক হয়ে উঠতে পারে। বিস্তারিত পরিকল্পনায় এমন কিছু বিষয় আছে যা বাস্তবায়ন করা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই ট্রাম্পের নতুন পরিকল্পনাকে ঘিরে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যার কোনও জবাব নেই। প্রশ্নগুলো হল–
গাজা কীভাবে শাসিত হবে : ট্রাম্পের পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, যুদ্ধের পর গাজায় একটি অরাজনৈতিক এবং টেকনোক্র্যাটভিত্তিক ফিলিস্তিনি কমিটির অস্থায়ী অন্তর্বর্তী শাসনব্যবস্থা থাকবে। এই কমিটিই গজার যাবতীয় বিষয় দেখভাল করবে। তবে এই কমিটি কীভাবে গঠিত হবে এবং এর সদস্যদেরকে কারা বাছাই করবে সে সম্পর্কে পরিকল্পনায় কিছু বলা হয়নি। শান্তি পরিকল্পনায় উল্লেখ করা শান্তি বোর্ড এবং ফিলিস্তিনি কমিটির মধ্যকার সম্পর্কের স্বরূপ কেমন হবে এবং নিত্যদিনের সিদ্ধান্ত কোন পর্যায়ে নেওয়া হবে তা পরিকল্পনায় ব্যাখ্যা করা হয়নি। খবর বিডিনিউজের।
ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ কি গাজার অন্তর্বর্তী প্রশাসনে যুক্ত হবে : ট্রাম্পের পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। তবে সেক্ষেত্রে শর্ত হল, পিএ–কে নিজেদের অভ্যন্তরীণ সংস্কার শেষ করতে হবে এবং নিরাপদ ও কার্যকরভাবে গাজার শাসনভার ফিরিয়ে নিতে হবে। যতদিন তা না হচ্ছে, ততদিন গাজার শাসনভার থাকবে অন্তর্বর্তী কর্তৃপক্ষের হাতে। কিন্তু ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ যে গাজার শাসনভার হাতে নিতে প্রস্তুত সেই সার্টিফিকেট কে দেবে কিংবা শাসনভার চালাতে গেলে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকে কী মানদণ্ড পূরণ করতে হবে সেটি এখনও স্পষ্ট নয়। এর কোনও সময়সীমাও নির্ধারণ করা হয়নি, কেবল অস্পষ্ট একটি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। শান্তি পরিকল্পনায় গাজাকে ফিলিস্তিনের অংশ নয় বরং স্বতন্ত্র সত্তা হিসাবেই বিবেচনা করা হয়েছে এবং গাজাকে বাদবাকি ফিলিস্তিন অঞ্চলের সঙ্গে একীভূত করার কথা বলা হয়েছে। নেতানিয়াহু এই পরিকল্পনায় রাজি হলেও তিনি গাজায় ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের শাসন ফিরিয়ে আনার বিষয়টি নাকচ করেছেন। ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউজের সংবাদ সম্মেলনে দাঁড়িয়ে নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজায় হামাস কিংবা ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ কারও শাসনই থাকতে পারবে না।
আন্তর্জাতিক বাহিনী কিভাবে গঠিত হবে : ট্রাম্পের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গাজার নিরাপত্তা দেবে ‘অস্থায়ী আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলকরণ বাহিনী’। কিন্তু এ বাহিনী কোথা থেকে আসবে এবং তাদের এখতিয়ার কী হবে? কোন কোন দেশ গাজায় সেনা পাঠাতে আগ্রহী হবে, আর পরিকল্পনার আওতায় কোনটি গ্রহণযোগ্য হবে সেটিও স্পষ্ট নয়। তাছাড়া, হবু শান্তিরক্ষীদের দায়িত্ব ও ভূমিকা নিয়েও কিছু বলা হয়নি। তারা কি সেনা, পুলিশ নাকি পর্যবেক্ষকের ভূমিকা পালন করবে? তাদেরকে কি হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে? তারা কি ফিলিস্তিনিদেরকে রক্ষা করতে ইসরায়েলি সেনাদের বিরুদ্ধেও লড়তে পারবে?
ইসরায়েলি সেনা কখন প্রত্যাহার হবে : ট্রাম্পের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘মানদণ্ড, মাইলফলক এবং অসামরিকীকরণের সময়সীমার ভিত্তিতে’ ইসরায়েলের সেনারা গাজা থেকে সরে যাবে। কিন্তু কবে বা কীভাবে ইসরায়েলের সেনারা সরে যাবে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। উল্টো প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইসরায়েল গাজায় একটি ‘নিরাপত্তা এলাকা’ বজায় রাখবে যতক্ষণ না তারা ‘সন্ত্রাসের হুমকি থেকে যথেষ্ট নিরাপদ’ হয়। তবে এ শর্ত পূর্ণ হয়েছে কি না তা শেষ পর্যন্ত কে নির্ধারণ করবে সে প্রশ্নও রয়ে গেছে।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কি প্রতিষ্ঠা পাবে : প্রস্তাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হলেও তা রয়ে গেছে নানা শর্ত পূরণ, যোগ্যতা অর্জনের বেড়াজাল আর ঘন ধোঁয়াশার আড়ালে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, যখন গাজার পুনর্গঠন ও উন্নয়নে অগ্রগতি হবে এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের অভ্যন্তরীণ সংস্কার কার্যক্রম বিশ্বাসযোগ্যভাবে মান অর্জনে সক্ষম হবে, তখনই হয়ত ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য পথ তৈরি হতে পারে, যা আমরা ফিলিস্তিনি জনগণের আকাঙ্ক্ষা বলে স্বীকার করি। অর্থাৎ, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য গাজার উন্নয়ন ও ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের সংস্কারকে শর্ত হিসেবে রাখা হয়েছে প্রস্তাবে। এমনকি সেগুলো পূরণ হলে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আলোচনা হয়ত হতে পারে। তবে এর কোনও নিশ্চয়তা নেই।
তাছাড়া, প্রস্তাবে ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি, বরং রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে ফিলিস্তিনিদের ‘আকাঙ্ক্ষা’ হিসেবে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে।