কর্ণফুলীর পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে কঠোর হতে হবে

দমাতে হবে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের

| মঙ্গলবার , ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৮:১০ পূর্বাহ্ণ

দখলে দূষণে কর্ণফুলী বিপর্যস্ত। অথচ কর্ণফুলীর স্রোত, নাব্যতা ও পানি আমাদের অর্থনীতির প্রাণ।এ নদীর প্রতি দায়িত্বশীল হওয়া, নদীকে জীবন্ত রাখা দেশের সমৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশের অর্থনীতির প্রাণপ্রবাহ কর্ণফুলী বর্তমানে দখলে দূষণে বিপর্যস্ত। নানাভাবে দখল হয়েছে নদী এবং এখনো হচ্ছে। আমরাই লিখেছি আজাদীতে, ‘দূষণ থেমে নেই বহু বছর ধরে। অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে নদী উদ্ধারে বিভিন্ন সময় বহু আলোচনা হয়েছে। উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। শোনা গেছে, অনেক প্রতিশ্রুতি, আশ্বাস বাণী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেউ কথা রাখেনি। বিপর্যস্ত কর্ণফুলীর শেষ রক্ষা আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন কর্ণফুলী গবেষক এবং বিশেষজ্ঞরা’। এখন এই কর্ণফুলী থেকে চলছে বেপরোয়া বালু উত্তোলন। গত ২৪ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীতে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কর্ণফুলী নদী ও আশপাশের এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বেপরোয়াভাবে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন ও বেচাকেনা। রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক বালুমহাল। ড্রেজারভলগেট দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার ঘনফুট বালু তোলা হচ্ছে। এতে নদী ও পরিবেশ মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছে। হুমকির মুখে পড়েছে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প, নদীর তীরবর্তী সড়ক, বসতি ও কৃষিজমি। প্রশাসন মাঝে মাঝে অভিযান ও জরিমানা করলেও প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের কারণে এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড থামছে না। কর্ণফুলীর কালুরঘাট, চৌধুরীহাট, ফখিরাখালী ঘাট, চৌধুরী খালের মুখ, খরণদ্বীপজ্যৈষ্ঠপুরা এলাকায় রয়েছে অন্তত ৩০৩৫টি বিক্রয়কেন্দ্র। প্রতিদিন এখান থেকে শত শত ট্রাক ও ট্রাক্টরে বালু পাচার হচ্ছে। শুধু নদী নয়, পাহাড়ি ছড়াগুলোও রেহাই পাচ্ছে না। জ্যৈষ্ঠপুরা ভাণ্ডালজুড়ি খাল ও বিভিন্ন ছড়া থেকে ট্রাক্টরে বালু তুলে বিক্রি করছেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা। স্থানীয়দের অভিযোগ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতারা সমঝোতার মাধ্যমে এ অবৈধ ব্যবসায় জড়িত। একসময় ক্ষমতাসীন দলের লোকজন এককভাবে বালু ব্যবসা চালালেও এখন ভাগাভাগি ভিত্তিতে চলছে এ বাণিজ্য। কোথাও ৬০৪০ শতাংশে, কোথাও সমান অংশীদারিত্বে বালু তোলার টাকা ভাগ হচ্ছে। ফলে প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ কার্যকর হচ্ছে না। নগরীর বাকলিয়াবলিরহাট থেকে ফিশারিঘাট পর্যন্ত এলাকার চিত্রও একই। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, এসব পয়েন্টে দিনেরাতে ড্রেজার বসিয়ে মাটি ও বালু তোলা হচ্ছে। প্রতি রাতে অন্তত ২০০ গাড়ি বালু ও মাটি পাচার হচ্ছে। এতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) শত কোটি টাকার প্রকল্প চাক্তাইকালুরঘাট সড়ককাম বাঁধ মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তারা। নদীর তীর ঘেঁষে যেভাবে বালু কাটা হচ্ছে, তাতে বাঁধে বড় ধরনের ক্ষতির শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন তারা।

প্রতিবেদক সরেজমিনে গিয়ে দেখেছেন যে, ড্রেজার বসিয়ে বালু তুলছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। তাদের ভয়ে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করতে পারছে না। বরং যারা ভিন্নমত প্রকাশ করছে তাদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। সমপ্রতি বাকলিয়ার বলিরহাট এলাকায় স্থানীয়রা বালু তোলার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হলেও তাদের দমাতে পারেনি।

সাম্প্রতিক সময়ে কেমন যেন বেপরোয়া হয়ে উঠছে লোকজন। আইন মানছে না। নিজের ইচ্ছে মতো চলছে। এভাবে তো দেশ চলতে পারে না। প্রশাসনকে আরো কঠোর হতে হবে। প্রভাবশালী সিন্ডিকেট যত ক্ষমতাধর হোক না কেন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। অবৈধ বালু বাণিজ্যের কারণে কর্ণফুলী নদীর তীর ও বাঁধের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ।

বলা জরুরি যে, জনসাধারণের অসচেতন ও বেপরোয়া ব্যবহারের কারণে দিন দিন কর্ণফুলী নদী অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। দখল ও ভরাটের করাল গ্রাসে এই নদীর মতো অনেক নদী মরে গেছে। নদী বাঁচলে জীবন বাঁচবে। নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে। তাই নদীকে বাঁচাতে জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্য নিয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। দখলদূষণে কর্ণফুলী যদি গতিপথ হারায় তখন বন্দর বন্ধ হয়ে যাবে। তাই এ বিষয়ে প্রশাসনের পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। দমাতে হবে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের। পরিবেশ এবং প্রকৃতির বিপর্যয় ঠেকাতে কঠোর হতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে