প্রতিদিন ৪৪টির বেশি ইঞ্জিনের সংকট হচ্ছে। এতে করে হিমশিম খাচ্ছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল। চাহিদার প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি ইঞ্জিন সংকটের মাঝে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখা অনেকটা কঠিন হয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের মেকানিক্যাল ও পরিবহন বিভাগের কর্মকর্তারা। মালবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন এনে কোনোরকমে যাত্রীবাহী ট্রেনে সামাল দেয়ার চেষ্টা করা হলেও ইঞ্জিনের সংকট কাটছে না। যাত্রীবাহী একটি ট্রেন আসার পর ওই ট্রেনের ইঞ্জিনটি পাহাড়তলী ডিজেল শপে (ইঞ্জিন মেরামত কারখানা) এলেও সেটা সার্ভিসিং করার সুযোগ পাচ্ছেন না প্রকৌশলী এবং শ্রমিকরা। সাথে সাথে ইঞ্জিনটি অন্য ট্রেনে লাগাতে হচ্ছে বলে জানান পাহাড়তলী ডিজেল শপের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী এবং শ্রমিকরা। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মেকানিক্যাল ও পরিবহন বিভাগের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, প্রতিদিন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য ১১৯টি ইঞ্জিনের দরকার।
কিন্তু প্রতিদিন গড়ে পাওয়া যাচ্ছে ৭৫টির মতো। মালবাহী ট্রেন চলাচল সীমিত করে মালবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন যাত্রীবাহী ট্রেনে যুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি ইঞ্জিনের আয়ুষ্কাল ফুরিয়ে গেছে।
পাহাড়তলী ডিজেল শপের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, দক্ষ জনবল সংকট এবং ইঞ্জিন মেরামতের জন্য যে মানের যন্ত্রাংশ দরকার সেই মানের যন্ত্রাংশের অভাব রয়েছে। ডিজেল শপে দক্ষ লোকবল না থাকায় নতুন লোকবল দিয়ে ইঞ্জিন মেরামত করে আজকে দেয়ার পর সেটি আবার পরের দিন মেরামতের জন্য ডিজেল শপে ঢোকাতে হয়।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ পাওয়ার কন্ট্রোলার (পাহাড়তলী) প্রকৌশলী রাজেন্দ্র প্রসাদ বলেন, পূর্বাঞ্চলে প্রতিদিন যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ১১৯টি ইঞ্জিন দরকার। কিন্তু এখন আমরা প্রতিদিন গড়ে ৭৫ থেকে ৭৬টি ইঞ্জিন পাই। এখন মালবাহী ট্রেন থেকে ইঞ্জিন এনে কোনোরকমে সামাল দেয়া হচ্ছে। একটা লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) কারখানায় আসার পর ভালোভাবে মেরামত করে দেয়ার মতো সময় পাচ্ছি না। কারণ যাত্রী নিয়ে যে ট্রেনে লোকোমোটিভটা আসছে সেটা অন্য ট্রেনে দিতে হচ্ছে। ফলে পথের মধ্যে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাচ্ছে।
পূর্বাঞ্চলে যাত্রীবাহী ট্রেনে যতগুলো ইঞ্জিন চলছে তার ৫০ শতাংশের বেশি আয়ুষ্কাল ফুরিয়ে গেছে বলে জানান প্রকৌশলী রাজেন্দ্র প্রসাদ। মালবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন যাত্রীবাহী ট্রেন যুক্ত করার ফলে ঠিকমতো মালবাহী ট্রেন চালানো সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ পাওয়ার কন্ট্রোলার মো. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, প্রতিদিন মালবাহী ট্রেনে ১৩টি ইঞ্জিন দরকার। কিন্তু আমরা ৫/৬টার বেশি দিতে পারছি না। যাত্রীবাহী ট্রেনের চাহিদা আছে, কিন্তু চালাতে পারছি না। ইঞ্জিন সংকটের কারণে যাত্রী নিয়ে যে ইঞ্জিনটি শেডে আসছে সেটা সাথে সাথে অন্য ট্রেনে যুক্ত করতে হচ্ছে। ভালোভাবে মেরামত করতে পারছি না।
লোকোমাস্টারদের উদ্বেগ : পথে ট্রেনের লোকোমোটিভ বন্ধ হয়ে গেলে যাত্রীদের রোষানলে পড়েন লোকোমোটিভ মাস্টাররা। একাধিক লোকোমাস্টার বলেন, বর্তমানে লোকোমোটিভগুলো ফেইল করছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে রেল যে–কোনো সময় বসে যাবে। এ পরিস্থিতিতে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন।