ভ্রমণ মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। সভ্যতার সূচনা লগ্ন থেকেই মানুষ এক জাযগা থেকে আরেক জায়গায় ছুটে চলেছেন নতুন অজানাকে জানতে, অদেখাকে দেখতে কিংবা সৌন্দর্যকে উপভোগ করতে। নতুন কিছু জানা, দেখা, আবিষ্কার ও অর্জনের মাধ্যমে মানুষ প্রশান্তি লাভ করে এবং মানুষের চিত্ত বিনোদিত। একজন ভ্রমণকারী বা পর্যটককে ঘিরে আবর্তিত অর্থনৈতিক কর্মকান্ড থেকেই আসে পর্যটন শিল্পের ধারণা। বিশ্বের অনেক দেশ রয়েছে যারা তাদের পর্যটন শিল্পকে নিজেদের অর্থনীতি সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী করতে অন্যতম নিয়ামক হিসাবে কাজে লাগিয়েছে। তারা বিশ্বের নজর কাড়তে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পর্যটন শিল্পকে বিকাশের নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। নেপাল, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ এর মত অনেকেই বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধানতম খাত হিসেবে পর্যটনকে গড়ে তুলে সাফল্যের মুখ দেখেছে। সেদিক বিবেচনা করলে, আমাদের দেশে প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও পযটন শিল্পকে কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের জায়গায় আমরা নিয়ে যেতে পারিনি। খাল, বিল, নদী, পাহাড়, সমুদ্র নিয়ে গঠিত আমাদের বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দয ঋতু বৈচিত্র্য নানান রূপে ধরা দেয়। মধ্যযুগেও এদেশের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য আকৃষ্ট হয়েছেন ইবনে বতুতা ও হিউয়েন সাঙ এর মত বিশ্ববিখ্যাত পর্যটকগণ। এছাড়া ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, পৌরাণিক স্থাপনা আমাদের রয়েছে যা বিশ্বের পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। আমাদের প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বিশ্বের দৈর্ঘতম সৈকত ও অন্যতম আশ্চর্য। সেন্ট মার্টিন প্রবাল দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপসহ অসংখ্য ছোট বড় দীপাঞ্চল, খুলনার সুন্দর বন ও ম্যানগ্রোভ বন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটের পাহাড়ের গহীনে লুকিয়ে থাকা প্রকৃতিক ঝর্ণা ধারার মায়াময় সৌন্দর্য, পাহাড়ের বুক চিরে নেমে আসা চপলা নদীর কলতান, শান্ত স্নিগ্ধ লেক, কুমিল্লার ময়নামতি, শালবন, ঢাকার বিক্রমপুর, উত্তরের পার্বতীপুর. মহাস্থানগড়সহ অসংখ্য পুরাকীর্তি রয়েছে আমাদের। রয়েছে লালবাগের কেল্লা, আহসান মঞ্জিল, সোনারগাঁ, কান্তজী দীঘি ও মন্দির, ষাটগম্ভুজ মসজিদ এর মত প্রাচীন স্থাপত্য ও নিদর্শন। রয়েছে হাকালুকি, নিকলী, হাকালুকি ও টাঙ্গুয়ার হাওড়ের মত দিগন্তজোড়া স্বচ্ছ জলরাশির মোহনীয় হাতছানি। দেশের বিল, হাওড়, বাওড়, পাহাড়, নদী, সমুদ্র ও কৃষিকে ঘিরে আবহমান ধরে চলে আসা বৈচিত্রময় সংস্কৃতি বিশ্ববাসকে সহজেই মুগ্ধ করে। আমাদের এই পর্যটন সম্পদকে বিশ্বের পযটকদের কাছে আরো বেশী করে তুলে ধরতে আরো উদ্যোগী হতে হবে। এক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ব্লগের মাধ্যমে আমাদের তরুণদের অনেকেই দেশের পর্যটনকে বিশ্বের কাছে ও দেশের ভ্রমণ পিয়াসীদের কাছে তুলে ধরতে অসামান্য সহায়ক ভূমিকা রাখছেন। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় মান সম্মতভাবে তুলে ধরতে পারলে আমাদের পর্যটন খাত উন্নয়নের পথে আরো গতিশীলতা পেত। তাছাড়া পযটকদের যাতায়াতকে আরো সহজ করতে এবং বিশ্রামের জন্য আরো সাশ্রয়ী সহজ ও সাচ্ছন্দ্যময় প্রয়োজনীয় রিসোর্ট, হোটেল, মোটেল গড়ে তুলতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রযোজন। পর্যটকরা যাতে কোন প্রকার হয়রানীর শিকার না হন, যাতে নিরাপত্তাহনিতায় না ভুগেন সেদিকে বিশেষ নজর দেয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও নানান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে পারলে এবং বিশ্ববাসীর কাছে আমাদের পর্যটনকে যথাযথভাবে তুলে ধরতে পারলে পর্যটন খাত দেশের অর্থনীতিতে অনেক বড় অবদান রাখতে সক্ষম হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে জানাই বিশ্ব পর্যটন দিবসের প্রাণময় শুভেচ্ছা।
লেখক প্রাবন্ধিক : জেনারেল ম্যানেজার ওয়েল পার্ক রেসিডেন্স