তিন স্পটেই সীমাবদ্ধ খাগড়াছড়ির পর্যটন সম্ভাবনা

সমির মল্লিক, খাগড়াছড়ি | শনিবার , ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ১০:২৪ পূর্বাহ্ণ

আজ বিশ্ব পর্যটন দিবস। দেশের অন্যতম পর্যটন সম্ভাবনাময় জেলা খাগড়াছড়ি। ‘আলুটিলারিছাংগিরি বৈচিত্র্যময় খাগড়াছড়ি’ এই শব্দযুগলের মতো আলুটিলারিছাং ঝরনাতেই সীমাবদ্ধ খাগড়াছড়ির পর্যটন সম্ভাবনা। পাহাড়, উপত্যকা, ঝিরি অসংখ্য ছোট বড় ঝরনা, আলুটিলার রহস্যময় গুহাসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র নিয়ে বৈচিত্র্যময় খাগড়াছড়ি। আলুটিলার রহস্যময় সুড়ঙ্গ, রিছাং ঝরনা, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ পার্কই মূলত পর্যটকদের ভ্রমণ গন্তব্য। এর বাইরে মানিকছড়ি ডিসি পার্ক ও মায়াবিনী কৃত্রিম লেকে স্থানীয় দর্শনাথীদের ভ্রমণ সীমাবন্ধ। পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য পরিকল্পনাহীনতা, সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকা, পর্যাপ্ত প্রচারের অভাবে খাগড়াছড়ি ভ্রমণে এসে অনেকে হতাশ হন।

খাগড়াছড়িতে ছোট বড় দশটি ঝরনা থাকলেও সেখানে যাতায়াত ব্যবস্থা না থাকায় এসব ঝরনার সৌন্দর্য্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন পর্যটকেরা। বেড়াতে আসা পর্যটকদের গন্তব্য থাকে রাঙামাটির সাজেক পর্যটন কেন্দ্র। খাগড়াছড়ি হয়ে সাজেকে যাতায়াত করার কারণে জেলা শহরের হোটেল ও পরিবহন খাত আর্থিকভাবে লাভবান হয়। তবে কাঙ্ক্ষিত নয় বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। পর্যটনকেন্দ্রগুলো বিকশিত হলে পর্যটকেরা খাগড়াছড়িমুখী হবেন বলে আশা তাদের।

খাগড়াছড়ির পর্যটন উদ্যোক্তা উজ্জ্বল দে বলেন, খাগড়াছড়িতে যারা বেড়াতে আসেন তাদের ৯০ শতাংশ পর্যটকই সাজেকমুখী। ঢাকা বা দেশের অন্যান্য জেলা থেকে পর্যটকরা খাগড়াছড়ি পৌঁছানোর পর এখানে প্রাতঃরাশ করে সাজেক চলে যান। সাজেক থেকে ফেরার পর পর্যটকরা আলুটিলারিছাং ঝরনা ঘুরে পুনরায় ঢাকায় চলে যান। এভাবেই চলছে খাগড়াছড়ির পর্যটন খাত। অথচ পুরো জেলায় বেশকিছু ঝরনা রয়েছে। সেগুলোর ব্র্যাডিংয়ের কোনো উদ্যোগ নেই। ঝরনায় যাতায়াতের জন্য সড়ক নির্মাণ করলে পর্যটকেরা ভ্রমণের সুযোগ পেতেন। পর্যটন কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়লে পর্যটকেরা বেড়ানোর সুযোগ পেতেন। এতে জেলায় পর্যটন খাত লাভবান হতো। লম্বা ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ে এবং তা সাজেককেন্দ্রিক।

তিনি বলেন, খাগড়াছড়িতে পর্যটন কেন্দ্র বাড়লে সাজেকের পাশাপাশি জেলায় পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসা আরো বিকশিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। খাগড়াছড়িতে ক্যাবল কার স্থাপন, ক্যাম্পিং জোন তৈরি করলে তা পর্যটকদের আর্কষণ বাড়াবে। তিনি বলেন, পর্যটন মৌসুমে প্রতি মাসে আমি অন্তত ৭ থেকে ৮ হাজার পর্যটককে সেবা দিই। তাদের সবাই মূলত সাজেকের জন্য আসেন।

খাগড়াছড়িতে পর্যটন কেন্দ্র কম থাকায় হতাশ পর্যটকেরাও। সম্প্রতি খাগড়াছড়ির আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে বেড়াতে আসা পর্যটক জুলফিকার আলীর বলেন, আমি আরো সাত বছর আগে খাগড়াছড়ি বেড়াতে এসেছি। তখন আলুটিলা, রিছাং ঝরনা আর জেলা পরিষদ পার্কে বেড়িয়েছি। এখনো এগুলো আছে। আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের অনেক উন্নয়ন হয়েছে এটা সত্য। তবে পুরো জেলায় বেড়ানোর মতো কোনো স্পট নেই। সাজেকে একরাত ছিলাম। কিন্তু খাগড়াছড়িতে যে বেড়াব সেরকম কোনো নতুন জায়গাই তো নেই।

আরেক পর্যটক নীলুফার তাহিয়া বলেন, পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসলাম। সাজেক ছিলাম একরাত।

খাগড়াছড়িতেও রাতযাপনের ইচ্ছে ছিল। কিন্ত বিকেলের মধ্যে সব স্পট ঘোরা শেষ। তাই এখানে থাকব না। সন্ধ্যায় রাঙামাটিতে চলে যাব। যদি পর্যটন কেন্দ্রের সংখ্যা বেশি থাকত। মানুষ বেড়ানোর সুযোগ পেত।

পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন ঝরনায় ঘুরে বেড়ানো পর্যটক আল কাদেরি বলেন, খাগড়াছড়িতে বেশ কয়েকটা ঝরনা রয়েছে। এর মধ্যে তৈদুছড়া, শিলাছড়ি, তুয়ারি মাইরাং, তৈছামা অন্যতম। তবে এসব নয়নাভিরাম ঝরনায় যাতায়াতের সড়ক যোগাযোগ নেই। তরুণরা ট্রেকিং করে যেতে পারলেও সব বয়সী মানুষের পক্ষে সেটা সম্ভব না। খাগড়াছড়িতে ঝরনা কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্প গড়ে তুলতে পারলে স্থানীয় পর্যটন বেশ বিকশিত হবে।

খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেলের ইনচার্জ উত্তম কুমার মজুমদার বলেন, খাগড়াছড়িতে এখন পর্যটন কেন্দ্রের সংখ্যা খুবই কম। এখানে পর্যটকেরা রাতযাপন করতে চান না। নতুন নতুন টুরিস্ট স্পট বাড়ালে পর্যটকের সংখ্যা আরো বাড়বে।

খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, আমরা জেলার পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের অংশীজনদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছি। সভায় বেশ কিছু প্রস্তাব উঠে এসেছে সেগুলো নিয়ে কাজ করছি। যেহেতু খাগড়াছড়িতে বেশকিছু ঝরনা রয়েছে সেগুলোতে যাতায়াতের রাস্তা কীভাবে করা যায়সেই প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে রিছাং ঝরনা পর্যন্ত পাকা কার্পেটিংয়ের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। যাতায়াত আগের চেয়ে সহজ হয়েছে। এছাড়া রিছাং ঝরনার পাশেই আরেকটা ঝরনা আছে। সেটাতে যাওয়ার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। এছাড়া দীঘিনালার তৈদুছড়া ঝরনায় যাতায়াতের জন্য একটি পাকা কার্পেটিং সড়কের প্রকল্প এলজিইডি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পটি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রটি পর্যটকদের কাছে আরো আর্কষণীয় করার কাজ চলছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকক্সবাজারের পর্যটনে বেড়েছে বিশৃঙ্খলা
পরবর্তী নিবন্ধটানেল চত্বরে বাসের ধাক্কায় মাইক্রো চালক নিহত