এক বছরে ৩১ ট্রান্সফরমার চুরি, আতঙ্কে গ্রাহক

মোহাম্মদ মারুফ, লোহাগাড়া | শনিবার , ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ

লোহাগাড়ায় গত এক বছরে ৩১টি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। বিদ্যুৎসংযোগ ও ভোল্টেজ স্থিতিশীল রাখার জন্য এসব ট্রান্সফরমার বসানো হয়। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অধীনে স্থাপিত এসব ট্রান্সফরমার বার বার চুরির ঘটনায় স্থানীয় গ্রাহকরা যেমন আতঙ্কে আছেন, তেমনি বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি১ লোহাগাড়া জোনাল অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩১টি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে রয়েছে ২৫ কেভিএ ৩টি, ১৫ কেভিএ ১টি, ১০ কেভিএ ১৪টি ও ৫ কেভিএর ১৩টি ট্রান্সফরমার। সর্বশেষ গত ১৫ আগস্ট রাতে আমিরাবাদ ইউনিয়নের বার আউলিয়া কলেজের সামনে থেকে ৫ কেভিএ একটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি চুরি হয়েছে পদুয়া ইউনিয়ন থেকে। চুরি হওয়া ট্রান্সফরমারগুলোর মূল্য প্রায় ২০ লাখ টাকা। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নিয়ম অনুযায়ী, প্রথমবার চুরি হওয়া ট্রান্সফরমার পুনরায় স্থাপন করতে গ্রাহককে অর্ধেক মূল্য পরিশোধ করতে হয়। পুনরায় চুরি হলে গ্রাহকদের ট্রান্সফরমারের মূল্য পুরোটাই দিতে হয়। ট্রান্সফরমার চুরি হলে মূল্য পরিশোধের পরও নতুন করে প্রতিস্থাপন করতে এক সপ্তাহ থেকে এক মাস পর্যন্ত সময় লেগে যায়। এ সময়টা গ্রাহকদের বিদ্যুৎবিহীন থাকতে হয়।

স্থানীয়রা জানান, পদুয়া, চুনতি, বড়হাতিয়া ও আমিরাবাদ এলাকায় ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা বেশি ঘটেছে। চোরচক্র গভীর রাতে ট্রান্সফরমার খুলে বা তেল বের করে নিয়ে যায়। একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন ধরে এই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। এতে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের বিপুল টাকার সম্পদ ক্ষতির মুখে পড়েছে। পাশাপাশি জনজীবনে দেখা দিয়েছে চরম ভোগান্তি। এই বিষয়ে প্রশাসনের কঠোর অভিযান ও ট্রান্সফরমার এলাকায় সিসিটিভি স্থাপনসহ নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। অপরদিকে, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। এর পেছনে পল্লী বিদ্যুতের কিছু অসাধু কর্মচারী জড়িত থাকতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন। এছাড়া দিনের পর দিন বিদ্যুৎহীন অবস্থায় থাকতে হচ্ছে গ্রাহকদের। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এমনকি কৃষিকাজও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নিরাপত্তার অভাবে অনেকে রাতের বেলা ঘর ছেড়ে বের হতে ভয় পাচ্ছেন।

পদুয়ার ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম সিকদার জানান, পদুয়া ইউনিয়ন থেকে গত ১২ মাসে ৫টি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। ট্রান্সফরমার চুরি হলে বিদুৎবিহীন থাকে এলাকা। ফলে এলাকার রাইচমিলসহ বিভিন্ন ধরনের কলকারখানা বন্ধ রাখতে হয়। এছাড়া এখানকার কৃষির অনেকাংশ সেচ নির্ভর হওয়ায় ট্রান্সফরমার চুরির কারণে কৃষকদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। নিজেদের টাকা দিয়ে বারবার ট্রান্সফরমারের মূল্য পরিশোধ করছেন। এতে তাদের কৃষি পণ্য উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

আধুনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন জানান, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরির সাথে এলাকার ও বাইরের সংঘবদ্ধ একটি চক্র জড়িত থাকতে পারে। সাধারণ মানুষের পক্ষে ট্রান্সফরমার চুরি করা সম্ভব না। ট্রান্সফরমার চুরির কারণে শুধু বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ নয়, সরকারি সম্পদের অপচয় ও নিরাপত্তার বড় হুমকি। এ ব্যাপারে এলাকায় জনসচেতনার পাশাপাশি আইন শৃক্সখলাবাহিনীকে আরো তৎপর হওয়া দরকার।

চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি১ লোহাগাড়া জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) রফিকুল ইসলাম খান জানান, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করেও প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। চুরি হওয়া ট্রান্সফরমারের বিষয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না। তবে ট্রান্সফরমার চুরির ক্ষেত্রে পল্লী বিদুতের কর্মচারী জড়িত থাকার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

লোহাগাড়া থানার ওসি আরিফুর রহমান জানান, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো মামলা দায়ের করেননি। মামলা দায়ের করলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচসিকের ৩৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় ভবনে আগুন
পরবর্তী নিবন্ধজাতিসংঘে নেতানিয়াহুর ভাষণ, প্রতিবাদে প্রতিনিধিদের ওয়াকআউট