নগরীর কালুরঘাট এলাকা থেকে কোটি টাকাসহ গ্রেপ্তার সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর কর্মচারী জাহাঙ্গীর আলম আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি বলেছেন, সাইফুজ্জামান চৌধুরী, উৎপল পাল ও আব্দুল আজিজ ও সৈয়দ কামরুজ্জামান সিন্ডিকেট কর্তৃক বিদেশে হাজার কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। গতকাল চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইব্রাহীম খলিলের আদালতে জাহাঙ্গীর আলম ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক এ জবানবন্দি দিয়েছেন। এদিকে সদ্য গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা সাইফুজ্জামানের কর্মচারী উৎপল পাল ও আব্দুল আজিজকে গতকাল আরো তিনটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দিয়েছে অপর একটি আদালত। দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২২ সেপ্টেম্বর ও গত জুলাইয়ে সাইফুজ্জামানের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া উক্ত তিনটি মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর এ আদেশ দেওয়া হয়েছে। দুদক পিপি মোকাররম হোসেন দৈনিক আজাদীকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
গত বুধবার বিকালে নগরীর কালুরঘাট ভারী শিল্প এলাকায় থাকা সাইফুজ্জামানের প্রতিষ্ঠান আরামিট পিএলসির কার্যালয় থেকে নগদ ১ কোটি ২ লাখ টাকাসহ দুদকের হাতে গ্রেপ্তার হয় প্রতিষ্ঠানটির এজিএম জাহাঙ্গীর আলম।
দুদক জানায়, গত ২৪ জুলাই দায়ের হওয়া ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পাচারের একটি মামলার আসামি জাহাঙ্গীর আলম। এ মামলার আসামি সাইফুজ্জামানও। তথ্য ছিল যে, জাহাঙ্গীর আলম কালুরঘাটের আরামিটের কার্যালয়ে অবস্থান করছেন। এর ভিত্তিতে সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে চেকের মুড়ি (আসল কপি) উদ্ধার করা হয়েছে। দেখা যায় যে, সাইফুজ্জামানের নামীয় আরামিট পিএলসির ১১ টি চেক ব্যবহার করে ৪ টি ব্যাংক থেকে ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। সাইফুজ্জামানের অনুপস্থিতিতে এবং অনুমতি ছাড়া সেটি করা হয়েছে। এছাড়া তার কাছ থেকে নগদ ১ কোটি ২ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
দুদক জানায়, গত এক সপ্তাহের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের কয়েকটি শাখা থেকে ১ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংক থেকে ৩০ লাখ, সোনালী ব্যাংক থেকে ৩৬ লাখ এবং মেঘনা ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা তোলা হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে গত ২৪ জুলাই সাইফুজ্জামানসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা মামলায় গত ১৬ সেপ্টেম্বর জাবেদের ব্যক্তিগত কর্মচারী উৎপল ও আব্দুল আজিজকে গ্রেপ্তার করে দুদক। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ২১ সেপ্টেম্বর ভোরে কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা এলাকায় থাকা জাবেদের স্ত্রী রুকমিলা জামানের গাড়ির চালক ইলিয়াসের বাসায় অভিযান পরিচালনা করে দুদক। অভিযানে নানা তথ্য সম্বলিত ২৩ বস্তা নথি জব্দ করা হয়। এসব নথি থেকে নতুন করে ভারত, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় জাবেদের সম্পদের তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন অভিযান পরিচালনাকারী দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মশিউর রহমান।
আদালত সূত্র আরো জানায়, এ মামলায় গত ২১ সেপ্টেম্বর জাবেদ ও তার স্ত্রী রুকমিলার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করার জন্য নির্দেশও দিয়েছেন চট্টগ্রামের সিনিয়র স্পেশাল জজ (ভারপ্রাপ্ত) মো. আব্দুর রহমান। ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবিএল) পোর্ট শাখা থেকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের উক্ত মামলায় তাদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ চেয়ে গত ১৮ সেপ্টেম্বর দুদকের পক্ষ থেকে করা আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারক এ নির্দেশ দিয়েছিলেন।
দুদক সূত্র জানায়, ইউসিবিএল থেকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে গত ২৪ জুলাই সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রী রুকমিলা জামানসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে করা মামলাটির বাদী দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মশিউর রহমান। মামলাটিতে ব্যাংকের পরিচালক আসিফুজ্জামান চৌধুরী, বোন রোকসানা জামান চৌধুরী ছাড়াও ইউসিবিএল ব্যাংক ও আরামিট গ্রুপের কর্মকর্তারা রয়েছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, সাইফুজ্জামানের মালিকানাধীন আরামিট গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠানের এক কর্মচারীকে মালিক সাজিয়ে নামসর্বস্ব ভিশন ট্রেডিং নামে একটি কোম্পানির কাগজ তৈরি করে গম, মটর, হলুদ, ছোলা আমদানির নামে ২৫ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করা হয় ইউসিবিএল ব্যাংক চট্টগ্রামের পোর্ট শাখা থেকে। সেই টাকা আরামিট গ্রুপের কর্মচারীদের নামে তৈরি করা আলফা ট্রেডার্স, ক্ল্যাসিক ট্রেডিং, মডেল ট্রেডিং ও ইম্পেরিয়াল ট্রেডিং নামে আলাদা চারটি কোম্পানির ব্যাংক হিসেবে স্থানান্তর করা হয়। পরে ওই টাকা পাচার করা হয়। দুদক সূত্র আরো জানায়, গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাইফুজ্জামানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুদক। অনুসন্ধানে তার ও তার স্ত্রীর নামে যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৮টি এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৯টি স্থাবর সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে; যা ইতোমধ্যে আদালত কর্তৃক জব্দের আদেশ হয়েছে। এছাড়া ৫ মার্চ তাদের নামে থাকা ৩৯টি ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশসহ গত বছরের ৭ অক্টোবর এ দম্পত্তির বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।