সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, যুগে যুগে অনেক কীর্তিমান মানুষের জন্ম হয়েছে যারা মানুষকে কিছু দেয়ার জন্য কাজ করেছেন। নিজে কিছু নেওয়ার জন্য কিংবা স্বার্থের জন্য কোনো কিছু করেনি। এই ধরনের একজন ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবদুল খালেক। তাঁর প্রতিষ্ঠিত কোহিনূর ইলেকট্রিক প্রেস ভাষা আন্দোলনের প্রথম প্রতিবাদী কবিতা মুদ্রণ ও প্রকাশনার জন্য অবিসংবাদিত গর্ব ও মর্যাদার অধিকারী। ১৯৬০ সালে তার প্রতিষ্ঠিত দৈনিক আজাদী হানাদার ও ঔপনিবেশিক দখলদারমুক্ত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের উজ্জ্বল সূর্যালোকের স্পর্শধন্য মাটিতে প্রথম প্রকাশিত দৈনিক হিসেবে আবির্ভাবের অধিকারী।
তিনি গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে ‘মোহাম্মদ আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার, দৈনিক আজাদী এবং গণতন্ত্র’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদীর প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব মোহাম্মদ আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ারের ৬৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক সংস্থা এ সেমিনারের আয়োজন করে। বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক সংস্থার কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে সেমিনারের উদ্বোধক ছিলেন সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক জাহিদুল করিম কচি। মুখ্য আলোচক ছিলেন ওয়ার্ল্ড এসোসিয়েশন অব প্রেস কাউন্সিল নির্বাহী পরিষদ ও বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সাবেক সদস্য মইনুদ্দীন কাদেরী শওকত। বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক সংস্থার সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন, ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস্ কমিশনের প্রেসিডেন্ট এম এ হাশেম রাজু, মা ও শিশু হাসপাতালের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার জাবেদ আবছার চৌধুরী ও কোহিনূর ইলেকট্রিক প্রেসের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ লোকমান হাকিম।
ডা. শাহাদাত বলেন, আমরা দেখেছি গত ১৬ বছর কিছু কিছু সংবাদপত্র অনেক সময় সত্য লিখতে ভয় পেত। এই ভয় ছিল আইসিটি অ্যাক্টের মামলার। কিন্তু ভয় না পেয়ে যে কয়টি পত্রিকা সত্য কথা বলেছে, লিখেছে এবং সত্যের সন্ধান করেছে দৈনিক আজাদী তার মধ্যে অন্যতম। কাজেই আমি মনে করি, ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক–এর রেখে যাওয়া পত্রিকা দৈনিক আজাদী আলোকিত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষে এবং একটি সুন্দর দুর্নীতিমুক্ত সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করেছে।
মেয়র বলেন, ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেকের ৬৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী আমরা উনাকে স্মরণ করছি, মহান রাব্বুল আলামিন উনাকে জান্নাতবাসী করুক।
ডা. শাহাদাত বলেন, ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক–এর সন্তান এম এ মালেক–এর পৃষ্ঠপোষকতায় এবং তাঁর সম্পাদনায় আজকে দৈনিক আজাদী দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা মনে করি, আজাদী মানুষের হৃদয় স্পর্শ করেছে।
সেমিনারের মূল প্রবন্ধকার এস এম জামাল উদ্দিন বলেন, আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ারের জীবন চরিত্র চর্চা করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হবে। ব্যক্তি জীবনে অত্যন্ত সৎ ও ধর্মপ্রাণ আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ারকে কোনো প্রকার সংকীর্ণতা কোনদিন স্পর্শ করতে পারেনি। ধর্ম ও প্রগতির সুষম সমন্বয় তাকে এক অনবদ্য আধুনিকতার প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
জাহিদুল করিম কচি বলেন, চট্টগ্রামের সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা দৈনিক আজাদীর স্বপ্নদ্রষ্টা ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক। ঢাকার অনেক পত্রিকার তুলনায় আজাদী অনেক বেটার, সেটা স্বীকার করতেই হবে। তিনি বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে জনগণ ও রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি চট্টগ্রামের প্রাচীনতম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদী ও অন্যান্য সংবাদপত্রগুলো সূদুরপ্রসারী ভূমিকা পালন করেছে। মোহাম্মদ আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ারের অবদান জাতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মইনুদ্দীন কাদেরী শওকত বলেন, ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক ছিলেন নিরহংকারী মানুষ। উনি তার খামারের কামলাদের সাথে একসাথে বসে সুন্নীয়তের তরিকায় খাবার খেতেন। উনি ভিখারীর হাতকে কর্মীর হাতে পরিণত করেন। সকল মতের মানুষের মধ্যে মৈত্রীর বন্ধন স্থাপন করেছেন ইঞ্জিনিয়ার সাহেব।
এম এ হাশেম রাজু বলেন, চট্টগ্রামকে আলোকিত করেছেন ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক। তাঁর প্রতিষ্ঠিত আজাদী আমাদের গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখিয়েছিল।
লোকমান হাকিম বলেন, ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক বড় মাপের আধ্যাত্বিক লোক ছিলেন।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এনামুল হক। কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন শেখ ফরমান উল্লাহ চৌধুরী। বক্তব্য দেন, কবি আসিফ ইকবাল, তারিকুল ইসলাম ফয়সাল, এস এম সিরাজদৌল্লা চৌধুরী, আবু মোহাম্মদ হোসেন চৌধুরী, সৈয়দ মোহাম্মদ আইয়ুব আলী, মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, অজিত দাশ, বাংলাদেশ সরকারের কর্মচারি সমন্বয় পরিষদ চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নিজাম উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল আউয়াল তারেক, এম এইচ সোহেল।