ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া পশ্চিমা দেশের তালিকা ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও পর্তুগালের পর এই স্বীকৃতি দিয়েছে ফ্রান্সও। কিন্তু এরপরও ফিলিস্তিনের গাজায় চলছে ইসরায়েলের জাতিগত নিধন অভিযান। গাজা সিটির গভীর থেকে গভীরে ঢুকছে ইসরায়েলের ট্যাংক। খবর বিডিনিউজের।
ফিলিস্তিনকে পশ্চিমাদের দেওয়া রাষ্ট্রের স্বীকৃতি যুদ্ধের ভয়াবহত থামাতে পারেনি– সেকথাই গাজাবাসীকে মনে করিয়ে দিচ্ছে অগ্রসরমান এই ইসরায়েলি ট্যাংক। বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো এখন এই যুদ্ধ বন্ধ করুক– সেটিই এ মুহূর্তে ক্লান্ত–শ্রান্ত গাজাবাসীর চাওয়া। গাজায় ইসরায়েলের প্রায় দুই বছরের যুদ্ধের পর উল্লেখযোগ্য কূটনৈতিক পরিবর্তন ঘটিয়ে বিশ্ব নেতারা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসাবে স্বাগত জানাতে জাতিসংঘ সম্মেলনে জড়ো হওয়ার পরদিনই ইসরায়েল গাজা সিটি অভিযানে অগ্রসর হয়।
ফিলিস্তিকে স্বীকৃতির এই উদ্যোগ ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে তীব্র সমালোচনার শিকার হচ্ছে। ইসরায়েল বলছে, এই পদক্ষেপ ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের সম্ভাবনা ক্ষুন্ন করবে। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজার বেশিরভাগ এলাকাই এরই মধ্যে ইসরায়েলের লাগাতার হামলায় ধ্বংস হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, মঙ্গলবার ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ১৮ জন গাজা সিটির। সেখানকার হাসপাতালগুলোও প্রয়োজনীয় জিনিসের অভাবের মুখে রয়েছে। গাজা সিটির এক বাসিন্দা চ্যাট অ্যাপের মাধ্যমে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, আমরা অসহায়। আমাদের দক্ষিণের দিকে সরে যাওয়ার অর্থ নেই। আর ইসরায়েল যে আমাদের ওপর বোমা ফেলবে না সে নিশ্চয়তাও নেই।
সেকারণে আমরা এখানেই থাকছি। শিশুরা বিস্ফোরণের শব্দে সবসময় কাঁপছে। আমারও ভয়ে আছি। তারা হাজার বছরের পুরোনো একটি নগরী নিশ্চিহ্ন করে ফেলছে, আর বিশ্ব সাড়ম্বরে একটি রাষ্ট্রের প্রতীকী স্বীকৃতি দিচ্ছে, যে পদক্ষেপ আমাদেরকে হত্যা করা বন্ধ করতে পারবে না। ইসরায়েলি বাহিনী সাবরা এবং তেল আল হাওয়া এলাকায় বিস্ফোরক ভর্তি যানের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। ইসরায়েলের ট্যাংক গাজা সিটির পশ্চিম দিকে অনেকখানি ভেতরে অগ্রসর হয়েছে। বিস্ফোরণের কারণে বহু ঘরবাড়ি এবং রাস্তা ধ্বংস হওয়ার কথা জানিয়েছেন বসিন্দারা।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ সোমবার সৌদি আরবের সঙ্গে আয়োজিত এক বৈঠকে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার মাইলফলক পদক্ষে নিলেও এতে গাজায় মাঠ পর্যায়ের পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ফ্রান্সে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ফ্রান্সের পদক্ষেপ এক বৈরি সিদ্ধান্ত। মাক্রোঁ এবং ইসরায়েল সরকারের মধ্যকার আস্থা আবার নতুন করে গড়ে তুলতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে বহুপ্রতীক্ষিত দ্বিরাষ্ট্র–ভিত্তিক সমাধান প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার আশা করছে পশ্চিমা দেশগুলো। ইসরায়েলুফিলিস্তিন সংকট সমাধানে ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তির মাধ্যমে যে শান্তিপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, তার ভিত্তি ছিল এই দ্বিরাষ্ট্র সমাধান। কিন্তু ইসরায়েল ও এর মিত্র দেশগুলোর অনাগ্রহের কারণে এ উদ্যোগ আজও বাস্তবায়ন হয়নি। এবার এই সমাধানের দিকে আগাতে ইউরোপীয় দেশগুলোর নেওয়া চেষ্টার মাঝেও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী জোরগলাতেই বলেছেন যে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কখনও প্রতিষ্ঠা পাবে না। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ঢুকে হামলা চালিয়েছিল ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী গোষ্ঠী হামাস। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়েছিলেন। সেদিন থেকেই গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এরপর এখন পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ৬৫ হাজার ৩৪৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এই হত্যাযজ্ঞের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র সমালোচনার শিকারও হয়েছে।
তারপরও সমপ্রতি গাজা সিটিতে নতুন করে দখল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। স্থলসেনারা গাজা সিটির গভীরে অগ্রসর হয়েছে। এই অভিযান যুদ্ধবিরতির কোনওরকম সম্ভাবনাই নস্যাৎ করে দিয়েছে। গাজা সিটি গাজা ভূখন্ডের রাজধানী। সেখানে একমসময় হামাসের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যাটেলিয়ন ছিল। ইসরায়েলের হামলার মুখে গাজা সিটি থেকে পালিয়ে যাওয়া বসিন্দা আবু মুস্তফা বলেন, আমরা কি এখন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে হত্যার শিকার হচ্ছি? এটাই কি ঘটছে? আমরা চাই যুদ্ধ শেষ হোক, আমাদের বলিদান বন্ধ হোক। এটাই এখন আমাদের দরকার, কোনও ঘোষণার দরকার নেই।