তাওবার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর দরবারে গুনাহ মাফ চেয়েছি। আল্লাহর মেহেরবানিতে গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। এর মাধ্যমে যারা বায়াত গ্রহণ করেছে তাদের জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। জীবন অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। এ সংক্ষিপ্ত জীবনে আমাদের এমন কাজ করতে হবে যাতে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন। হজরত মুছা আলাইহিসসালামের যুগের একটি ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়, জীবন যদি নয়শত বছরও হয়, তাও সংক্ষিপ্ত। যেমনটি একটি কক্ষে একদিকে প্রবেশ অন্যদিকে বের হওয়া। এ জীবন মহান আল্লাহর এক বড় নিয়ামত, এ নিয়ামতকে সুরক্ষা করতে হলে আমাদের অবশ্যই ভালো কাজ করতে হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে। ভালো কাজের প্রথম কাজ হচ্ছে আল্লাহর ইবাদত করা, আল্লাহর নির্দেশ ও হকুম অনুযায়ী চলা। দেখেন আল্লাহ আমাদের কত নিয়ামত দেয়েছেন, জীবনে বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য দিয়েছেন, যা উৎপাদনের জন্য জমিন দিয়েছেন, যেখানে বীজ বপন করার পর ফসল হচ্ছে। ফসল ভালো হলে আমাদের কতই না আনন্দ দেয়। যদি ফসল ভালো না হয় তবে সমস্ত পরিশ্রম ব্যর্থ। মনে কষ্ট নিয়ে জীবন চলতে হয়। ঠিক আমাদের জীবনটা এমন। আমরা আজ যে তাওবা করেছি, যে ওয়াদা করেছি তা আমাদের বাকি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মেনে চলতে হবে। তখন জীবন সফল হবে।
গতকাল সোমবার জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা ময়দানে নামাজে এশায় ইমামতির পর আনজুমান–এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট আয়োজিত দোয়া মাহফিলে হাজার হাজার মুসল্লির উদ্দেশে আওলাদে রাসুল, পীর–এ বাঙাল আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ্ (মা.জি.আ) সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আওলাদে রাসুল, সাহেবজাদা সৈয়্যদ মুহাম্মদ কাসেম শাহ্। বিশেষ অতিথি ছিলেন সৈয়্যদ মেহমুদ আহমদ শাহ্ (মা.জি.আ)।
আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ্ (মা.জি.আ) মানুষের সমালোচনা তথা গীবত থেকে নিজেদের মুক্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, গীবত কবিরা গুনাহ। আপনি গীবত যার করেছেন তার গুনাহ হাল্কা হবে, কিন্তু আপনার গুনাহ বেড়ে যাবে। তিনি বলেন, গুনাহ নিয়ে কবরে গেলে আমাদের উপর আল্লাহর শাস্তি অবধারিত। কবরের জিন্দেগি দীর্ঘ। সুতরাং এ দুনিয়ায় আমাদের গুনাহ থেকে মুক্ত থাকতে হবে, আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন এমন সব কাজ থেকে মুক্ত থাকতে হবে। তিনি বলেন, আজ বায়াতের মাধ্যমে আমাদের অতীতের গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, সাথে সাথে আমাদের আল্লাহ ও রাসুলের পথে ও মতে চলতে হবে। আল্লাহর ওয়াহদানিয়াতের ওপর অটল থাকতে হবে। রেসালত আমাদের ঈমানের অংশ। রাসুলে করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মুহাব্বত রাখতে হবে, দরুদ শরীফ পড়তে হবে, কোরআন তিলাওয়াত করতে হবে, দান খয়রাত করতে হবে। জামেয়া আনজুমানের সাথে সম্পর্ক রাখতে হবে।
হুজুর কেবলার বিদায়ী ভাষণে একসময় আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলাইহির বাগানে এসে আপনাদের যে ভালোবাসা পেয়েছি তা আমাদের অভিভুত করেছে। আপনাদের শোকরিয়া আদায় করছি। তিনি বলেন, এ সম্পর্ক ও ভালোবাসার বীজ বপন করেছে হজরত সৈয়দ আহমদ শাহ সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলাইহি। হজরতের মাধ্যমে আমরা সিলসিলা, আনজুমান, জামেয়া, গাউসিয়া কমিটি ও দাওয়াতে খায়ের পেয়েছি। আমাদের জন্য সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলাইহি প্রদত্ত এসব নিয়ামতের শোকরিয়া আদায় করতে হবে। আপন মুর্শিদ ও পীরের প্রতি ভালোবাসা, তরিকতের সাথে সম্পর্ক রাখতে হবে। তিনি বলেন, এ দুনিয়াটি একটি বাজার, যেখানে হরেক রকম মামুষ থাকে, ভালোমন্দ সব থাকে, মন্দ থেকে বাঁচার জন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আপন পীর মুর্শীদের প্রতি ভালোবাসা ও মুহব্বত রাখতে হবে।
এতে বক্তব্য দেন, আনজুমান ট্রাস্টের সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ হাফেজ কাজী আবদুল আলীম রেজভী, প্রধান ফকিহ কাজী আবদুল ওয়াজেদ, আরবি প্রভাষক হাফেজ আনিসুজ্জামান আল–কাদেরী, সাইফুদ্দীন খালেদ বাদশাহ। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আনজুমান ট্রাস্টের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মনজুর আলম (মনজু), এডিশনাল সেক্রেটারি মোহাম্মদ সামশুদ্দীন, জয়েন্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ সিরাজুল হক, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এস এম গিয়াস উদ্দীন (সাকের), ফাইন্যান্স সেক্রেটারি মোহাম্মদ কমর উদ্দীন (সবুর), প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন সেক্রেটারি মোহাম্মদ গোলাম মহিউদ্দীন, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসার চেয়ারম্যান আবুল মহসিন মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান, আনজুমান সদস্য পেয়ার মোহাম্মদ, মোহাম্মদ নুরুল আমিন, শাহাজাদ ইবনে দিদার, আনোয়ারুল হক, আবদুল হামিদ, নুর মোহাম্মদ কন্ট্রাক্টর, আবদুল হাই মাসুম, মাহবুবুল আলম, সাদেক হোসেন পাপ্পু, মাহবুব ছাফা, মোহাম্মদ হোসেন খোকন, মুখপাত্র অ্যাড. মোছাহেব উদ্দীন বখতিয়ার, গাউসিয়া কমিটি আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাহমুদ নেওয়াজ, মোহাম্মদ ইলিয়াছ প্রমুখ। শেষে আনজুমান, জামেয়া, গাউসিয়া কমিটি সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য, বাংলাদেশসহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনায় দোয়া করেন পীর আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ্ (মা.জি.আ)।
উল্লেখ্য, আজ বিকালে হুজুর কেবলাগণ চট্টগ্রাম হতে ঢাকার উদ্দেশ্যে এবং ঢাকা হতে ২৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্বদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।