ফিলিস্তিনকে পশ্চিমা চার দেশের স্বীকৃতি

আরও ৬ দেশ যোগ দেওয়ার পথে

| মঙ্গলবার , ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ১০:৩১ পূর্বাহ্ণ

ফিলিস্তিনকে এরই মধ্যে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে চার পশ্চিমা দেশ। গত রোববার পর্যায়ক্রমে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাজ্য ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার পর একই পথে হেঁটেছে পর্তুগালও। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাওলো র‌্যাঙ্গেল বলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মৌলিক ও স্থায়ী অঙ্গ। দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানই ন্যায্য ও টেকসই শান্তির একমাত্র পথ এখনই যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, হামাস কোনোভাবেই গাজায় বা অন্য কোথাও নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবে না এবং সব জিম্মিকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। চার দেশের এই পদক্ষেপের পর গতকাল সোমবার একই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে চলেছে আরও ছয় দেশ। এই দেশগুলো হল : বেলজিয়াম, ফ্রান্স, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, নিউজিল্যান্ড ও লিশটেনস্টাইন। সোমবার জাতিসংঘের এক বিশেষ সম্মেলনে এই দেশগুলোর আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার কথা রয়েছে। সম্মেলনটি আয়োজন করছে ফ্রান্স ও সৌদি আরব; ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ উপস্থিত থাকলেও সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান উপস্থিত থাকছেন না। খবর বিডিনিউজের।

ওদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতির পদক্ষেপকে ‘লোক দেখানো’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, গুরুতর কূটনীতির ওপরই আমরা মনোনিবেশ করেছি, লোক দেখানোর বিষয়ে নয়। আমাদের অগ্রাধিকার স্পষ্টজিম্মিদের মুক্তি, ইসরায়েলের নিরাপত্তা, এবং হামাসমুক্ত অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি। ‘দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা’ লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের আপত্তির মুখে ১০ দেশের ফিলিস্তিকে স্বীকৃতির এই প্রতীকী পদক্ষেপ আরও সংঘাতের একটি নেতিবাচক আবর্ত তৈরি করতে পারে; বিশেষ করে বদলা হিসাবে ইসরায়েলের পশ্চিম তীরের আরও অংশ দখলের আশঙ্কার মাঝে। তাছাড়া, ইসরায়েলের ওপর ইউরোপীয় বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা, ইসরায়েলের রাজনৈতিকভাবে আরও একঘরে হয়ে পড়া এবং এমনকি জাতিসংঘ থেকে সাময়িক বহিষ্কার হওয়ার ঝুঁকিও বাড়বে।কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি লিখেছেন, কানাডা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে এবং শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ গড়তে অংশীদার হতে চায়। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ বলেন, এটি ফিলিস্তিনিদের নিজেদের রাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের বৈধ আকাঙ্ক্ষার স্বীকৃতি। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান ছাড়া শান্তি সম্ভব নয়। এখন আমাদের কাছে নেই নিরাপদ ইসরায়েল, নেই কার্যকর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস দেশগুলোকে পশ্চিম তীর দখল নিয়ে ইসরায়েলের হুমকিতে ভীত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

ফ্রান্সের উদ্যোগে যে স্বীকৃতির ঢেউ তৈরি হয়েছে, তাতে আরব রাষ্ট্রগুলোর পূর্ণ সমর্থন মিলেছে। এ প্রক্রিয়ার মূল লক্ষ্য হল একটি সংস্কারকৃত, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ গঠন, যারা অস্ত্রবিহীন ও ভেঙে দেওয়া হামাসের জায়গায় গাজার নেতৃত্ব নেবে। ইতালি, জার্মানি ও কয়েকটি বাল্টিক দেশ এখনও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়নি, তবে দেশগুলোর অভ্যন্তরীন চাপে অবস্থান পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ ইসরায়েলি টেলিভিশন চ্যানেল ১২এ বলেন, ইসরায়েলি সরকারের নীতি দুই রাষ্ট্র সমাধান ধ্বংস করছে। নতুন বসতি নির্মাণের কারণে আমরা শেষ মুহূর্তে এসে দাঁড়িয়েছি। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ফিলিস্তিনকে এই স্বীকৃতি হামাসের পুরস্কার নয়। মাক্রোঁ সতর্ক করে বলেছেন, গাজা সিটিতে ইসরায়েলের চলমান হামলায় এত বেশি বেসামরিক মানুষ হতাহতের ঘটনা ঘটছে যে, এতে ইসরায়েলের ভাবমূর্তি ভেঙে পড়ছে বিশ্বজুড়ে।

এদিকে ফ্রান্স, সৌদি আরব, নরওয়ে ও স্পেন একসঙ্গে জরুরি সহায়তা তহবিল গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে, যাতে ইসরায়েলের অর্থনৈতিক চাপেও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ভেঙে না পড়ে। আগামী ছয় মাসে অন্তত ২০০ মিলিয়ন ডলার তোলার লক্ষ্য নিয়েছে তারা।

ইসরায়েল পশ্চিম তীরে দখল আরও বাড়ালে বিশেষ চাপ পড়বে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ওপর, যারা ২০২০ সালের আব্রাহাম চুক্তির মাধ্যমে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পদক্ষেপ নিয়েছিল। সংযুক্ত আরব আমিরাত বলেছে, পশ্চিম তীর দখল করাটা হবে শেষ সীমা (রেড লাইন)। এতে আঞ্চলিক অখণ্ডতার সব সম্ভাবনাই শেষ হয়ে যাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলায়নিজমে পঞ্চাশ বছর পূর্তিতে রূপম কিশোর বড়ুয়াকে সংবর্ধনা
পরবর্তী নিবন্ধপুলিশ আমার ভাইকে গুলি করে হত্যা করে