ডেঙ্গু : স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে

| সোমবার , ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৮:১৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামসহ দেশের ৬৪টি জেলাতেই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে। দৈনিক আজাদী গত ১৯ সেপ্টেম্বর সংবাদ প্রকাশ করেছে এভাবে– ‘চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্তের ৬০ শতাংশই গত দেড় মাসে’। এতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত দুই হাজার ছড়ালো। যার মধ্যে গত দেড় মাসে আক্রান্ত হয়েছে ৬০ শতাংশ। এছাড়া মোট মৃত্যুর অর্ধেকই হয়েছে এই দেড় মাসে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চট্টগ্রামে বর্তমানে কখনো মাঝারি ও কখনো থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া ভ্যাপসা গরমও রয়েছে। এমন আবহাওয়া ডেঙ্গুর বংশবিস্তারের জন্য বেশ উপযোগী। এছাড়া বৃষ্টিতে বিভিন্ন জায়গায় স্বচ্ছ পানি জমছে। বিশেষ করে ফুলের টব ও ডাবের খোসা, গাড়ির টায়ারসহ বিভিন্ন পরিত্যক্ত বস্তুতে পানি জমার কারণে ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা প্রজননে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। এতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীও বাড়ছে। তাই সবাইকে বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখাসহ কোথাও যাতে তিনদিনের বেশি পানি না জমে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। এছাড়া রাতে ছাড়াও দিনের বেলায়ও মশারি টানাতে হবে। এদিকে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে গতকাল পর্যন্ত মোট ডেঙ্‌গু আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ১২০ জন। যার মধ্যে গত আগস্টে আক্রান্ত হয়েছেন ৭০৫ জন এবং সেপ্টেম্বরে গতকাল পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৫৪০ জন। এছাড়া এই দুই মাসে মোট মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। অপরদিকে চলতি বছর মোট মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৩৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৭ জন, ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে ৫ জন, ২৫০ শয্যার চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৫ জন এবং বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে আরো ৫ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়া গতকাল মারা গেছেন ১ জন। অন্যদিকে সারাদেশে গতকাল ডেঙ্‌গু আক্রান্ত একদিনে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সঙ্গে এই ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে নতুন করে ৬৪৭ জন ভর্তি হয়েছেন।

ডিজিএইচএস এর তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে প্রতি পাঁচজন রোগীর মধ্যে একজন ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু। এই পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যায় ডেঙ্গুর সংক্রমণে শিশুরা কতটা অসহায়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে তুলনামূলক উষ্ণ আবহাওয়ার দরুন মশার বংশবিস্তার, মানুষকে মশা কামড়ানোর হার এবং মশার শরীরে ভাইরাস জীবাণুর উন্মেষ পর্ব (ইনকিউবেশন পিরিয়ড)- এ সব কিছুই বাড়তে পারে।

মশাবাহিত এই রোগ নিয়ন্ত্রণে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে সচেতনতা তৈরিতে (অ্যাওয়ারনেস) ক্যাম্পেইন, মশার বংশবিস্তারের স্থান নির্মূল ও লার্ভা নিধন। তাছাড়া বয়স ও এলাকা ভিত্তিতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী এবং এতে মৃত্যুর তথ্য শ্রেণিবিন্যাস করছে সরকার। দেশজুড়ে ডেঙ্গু রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য সব হাসপাতালে আলাদা ইউনিট করা হয়েছে। অ্যাওয়ারনেস ক্যাম্পেইনের আওতায় সরকারের বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল, ডিজিটাল ও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ক্রমাগত ডেঙ্গু পরিস্থিতি সম্পর্কিত তথ্য প্রচার এবং কীভাবে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে সে বিষয়ক প্রচারণা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা প্রাকবর্ষা, বর্ষাকালীন ও বর্ষাপরবর্তী সময়ের জরিপের মতো নানামুখী কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ। যা এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। আগে আমরা জানতাম এডিস মশা পরিষ্কার ও স্বচ্ছ পানিতে হয় কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে নোংরা পানিতেও এ মশা ডিম পাড়ে। আগে ধারণা করা হতো এ মশা দিনের বেলা কামড়ায় কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে এ মশা দিন রাত উভয় সময়ই কামড়াচ্ছে। আগে বর্ষাকালে ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকত কিন্তু এখন প্রায় সারা বছরই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বর্তমানে এ রোগের লক্ষণেও কিছু পরিবর্তন এসেছে। চিকিৎসকদের মতে, বর্তমান ডেঙ্গুতে তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা ও বমির লক্ষ্মণ দেখা যাচ্ছে না। এখন ডেঙ্গু হলেই হার্ট, কিডনি ও ব্রেইন আক্রান্ত হচ্ছে। ডেঙ্গুর নতুন লক্ষ্মণগুলোর সঙ্গে অধিকাংশ মানুষই পরিচিত নয়। যার কারণে ডেঙ্গুতে মৃত্যুসংখ্যা বেড়েই চলেছে। তাই জ্বর হলেই ঘরে বসে না থেকে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে এবং ডেঙ্গু জ্বরের পরীক্ষা করাতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে বেশি বেশি তরল খাবার যেমন স্যালাইন, ডাবের পানি, ফলের রস, লেবুর শরবত ইত্যাদি খাওয়াতে হবে। জ্বর ভালো হওয়ার পরও ডেঙ্গুজনিত নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে এবং নিয়মিত ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।

চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চট্টগ্রামে গত দুই মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী। তবে আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে আমরা সফলভাবে ডেঙ্গু মোকাবেলা করে আসছি। ডেঙ্গু মোকাবেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে