জাবেদের স্ত্রীর ড্রাইভারের বাড়ি থেকে ২৩ বস্তা নথি উদ্ধার

সাবেক ভূমিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা, কর্ণফুলীতে অভিযান ভারতসহ আরো ৫ দেশে সম্পদের তথ্য

কর্ণফুলী প্রতিনিধি | সোমবার , ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৭:৩৮ পূর্বাহ্ণ

আনোয়ারাকর্ণফুলী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের স্ত্রী রুকমিলা জামানের ড্রাইভারের বাড়ি থেকে ২৩ বস্তা গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার করে জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল রোববার ভোরে কর্ণফুলীর শিকলবাহা ফকিরা মসজিদ তালুকদার বাড়ি এলাকার গাড়ি চালক ইলিয়াসের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে এসব নথি জব্দ করা হয়। এসব নথি থেকে দুবাই, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রের পর এবার ভারত, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়াসহ আরো পাঁচটি দেশে জাবেদের সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। মূলত সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ব্যক্তিগত দুই কর্মকর্তা উৎপল ও আব্দুল আজিজকে গ্রেপ্তারের পর তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রুকমিলা জামানের ড্রাইভারের বাসায় অভিযান চালানো হয়েছে জানিয়ে অভিযান পরিচালনাকারী দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মশিউর রহমান বলেন, অভিযানে আমরা ২৩ বস্তা নথি জব্দ করেছি। এসব নথিতে ভারত, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পদের তথ্য পেয়েছি।

তিনি বলেন, এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, দুবাই ও সিঙ্গাপুরে তার সম্পদের তথ্য পেয়েছিলাম। আজ আরো পাঁচটি দেশের তথ্য পেয়েছি। জব্দকৃত নথিগুলো আরো যাচাইবাছাই করা হবে। আশা করছি, আরো নতুন তথ্য বের হয়ে আসবে। জব্দ করা নথিগুলোর মধ্যে বিভিন্ন দেশে কেনা সম্পদের তথ্য, আয়কর, ভাড়ার রশিদসহ বিভিন্ন ধরনের তথ্য রয়েছে বলে জানান তিনি।

দুদক জানায়, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ২৪ জুলাই সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে দুদকের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার উৎপল দীর্ঘদিন জাবেদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে বিদেশে সম্পদ ব্যবস্থাপনায় যুক্ত ছিলেন। তার ল্যাপটপ ও মোবাইল থেকে পাচারের তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। দুদকের দাবি, দুবাই হয়ে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারের মূল পরিকল্পনাকারী তিনিই। অন্যদিকে আব্দুল আজিজ আরামিট থাই অ্যালুমিনিয়ামের এজিএম হিসেবে জাবেদের সম্পদ কেনাবেচা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন।

মামলায় বলা হয়, জাবেদ ও তার পরিবারের সদস্যরা আরামিটের কর্মকর্তাদের নামে পাঁচটি নামসর্বস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলেন। এর মধ্যে একটির নামে ইউসিবিএল থেকে ‘টাইম লোন’ সুবিধায় ২৫ কোটি টাকা নেওয়া হয়। পরে সেই টাকা একই ব্যাংকে খোলা অন্য প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করে বিদেশে পাচার করা হয়। গ্রেপ্তার আব্দুল আজিজের নামে খোলা ইম্পেরিয়াল ট্রেডিং নামের প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টেও ওই অর্থের অংশ পাওয়া গেছে।

দুদক বলছে, ২০১৯২০ সালে ভূমিমন্ত্রী থাকাকালে জালিয়াতির মাধ্যমে এ অর্থ আত্মসাৎ ও পাচার করা হয়। সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ২০১৪১৮ মেয়াদে ভূমি প্রতিমন্ত্রী এবং ২০১৯২৩ সাল পর্যন্ত ভূমিমন্ত্রী ছিলেন। তবে ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়ার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এরপর তাকে আর মন্ত্রিসভায় দেখা যায়নি। গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগমুহূর্তে তিনি স্ত্রীসন্তানদের নিয়ে লন্ডনে চলে যান বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়। তার ও স্ত্রী রুকমিলা জামানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারির আবেদন করে দুদক। রেড নোটিশ জারির জন্য আদালত নির্দেশও দিয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের নতুন জেলা প্রশাসক আব্দুল আউয়াল
পরবর্তী নিবন্ধসাবেক ভূমিমন্ত্রী জাবেদ ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির নির্দেশ