‘নামসর্বস্ব’ কোম্পানি নাবা অ্যাগ্রো ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের নামে ইসলামী ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ৩৬৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল আলম, নাবিল গ্রুপের এমডি মো. আমিনুল ইসলাম, ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যানসহ মোট ৪৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন–দুদক। দুদকের সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান গতকাল বুধবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা–১ এ মামলাটি দায়ের করেন। পরে মামলার বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।
এস আলম চেয়ারম্যান ও নাবিল গ্রুপের এমডি ছাড়াও এ মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সোনালী ট্রেডার্সের পরিচালক শহিদুল আলম, সেঞ্চুরি ফ্লাওয়ার মিলস লিমিটেডের এমডি মো. আরিফুল ইসলাম চৌধুরী ও পরিচালক মো. হাসানুজ্জামান। এছাড়া নাবা অ্যাগ্রো ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মামুন অর রশিদ এবং চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদকেও আসামি করা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন–এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সাবেক ডিএমডি মিফতাহ উদ্দিন, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আইসি কমিটির সদস্য মুহাম্মদ কায়সার আলী, এফএভিপি মো. মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী, এভিপি ও গুলশান শাখার ইনভেস্টমেন্ট ইনচার্জ মো. আকির হোসেন মিজি, ইডিপি ও শাখা ব্যবস্থাপক এটিএম শহিদুল হক, আইসি কমিটির সদস্য সৈয়দ আবু আসাদ, ডিএমডি ও আইসি কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী (পুনরায়), ইনভেস্টমেন্ট কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলী, নির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ সালেহ জহর, এবং ডিএমডি ও কোম্পানি সেক্রেটারি জে কিউ এম হাবিবুল্লাহ।
পরিচালনা পর্ষদ ও নির্বাহী কমিটির সাবেক দায়িত্বশীলদের মধ্যে রয়েছেন– ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নাজমুল হাসান, মো. সেলিম উদ্দিন, নির্বাহী কমিটির সদস্য তানভীর আহম্মদ ও মো. সামিউল আলম, সদস্য ও সাবেক এমডি মোহাম্মদ মুনিরুল হক, এসইভিপি মো. আলতাফ হোসাইন, এসইভিপি জি এম মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন কাদের, পরিচালক ইয়াসিয় আব্দুল্লাহ আল–রাজি, পরিচালক আব্দুল মতিন, পরিচালক মোহাম্মদ সোলায়মান, পরিচালক আরিফ সুলেমান, পরিচালক মো. সিরাজুল করিম, পরিচালক মো. জামাল উদ্দিন, পরিচালক মো. জয়নাল আবেদীন, পরিচালক কাজী শহিদুল আলম, পরিচালক খুরশীদ উল আলম, পরিচালক মো. কামাল হোসেন গাজী, এবং পরিচালক মো. নাদির উদ্দিন।
আসামির তালিকায় আরও রয়েছেন–এসইভিপি মোহাম্মদ উল্লাহ, এসইভিপি মোহাম্মদ গাজী, ইসলামী ব্যাংকের দোলাইখাল শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মমতাজ উদ্দিন চৌধুরী, সিন্ডিকেট ফাইন্যান্স বিভাগের কর্মকর্তা মীর মোবাশ্বির হোসেন, এভিপি মো. কামরুজ্জামান, এফএভিপি মাসুদ মোহাম্মদ ফারুক, নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. কামরুল হাসান, এবং প্রিন্সিপাল অফিসার কাজী ফারজানা ইশরাত।
এজাহারে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ২৬ জানুয়ারি নাবা এগ্রো ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের নামে একটি সাধারণ হিসাব খোলা হয় ইসলামী ব্যাংকের গুলশান শাখায়। কাগজে–কলমে ট্রেডিং ব্যবসার কথা বলা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে নাবিল গ্রুপের এমডি আমিনুল ইসলাম তার কর্মচারী ও আত্মীয়দের পার্টনার দেখিয়ে ‘প্রতারণার উদ্দেশ্যে’ ওই কোম্পানি তৈরি করেন। এর আগেই, ২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারি নাবা এগ্রো ইসলামী ব্যাংক গুলশান শাখায় ৩০০ কোটি টাকা বাই–মুরাবাহা ঋণের আবেদন করে এবং জামানত হিসেবে ৩০ কোটি টাকার টিডিআর প্রস্তাব দেয়। উদ্দেশ্য দেখানো হয় গম, সয়াবিন তেল, সুপার পাম ওয়েলসহ কৃষিপণ্য ক্রয়–বিক্রয়।
দুদক বলছে, ব্যাংকের কর্মকর্তারা ‘যথাযথ যাচাই–বাছাই না করেই’ প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য সদর দপ্তরে পাঠান। ব্যক্তিগত সম্পদ, ব্যবসার মূলধন, গুদাম, পণ্য মালিকানা বা ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতার প্রমাণ ‘যাচাই না করেই’ ঋণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। ২০২২ সালের ২৩ জানুয়ারি ইসলামী ব্যাংকের ইনভেস্টমেন্ট উইং এর ৩৭তম সভায় প্রস্তাবটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়। ওই দিনই নির্বাহী কমিটির সভায় ‘নেতিবাচক তথ্য জানার পরও’ ঋণ অনুমোদিত হয় এবং ২ ফেব্রুয়ারি গুলশান শাখায় মঞ্জুরিপত্র পাঠানো হয় বলে দুদকের ভাষ্য।
পরে ২০২২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নাবা অ্যাগ্রো বিশেষ সুবিধা হিসেবে ৩৭০ কোটি টাকার ঋণের আবেদন করে। কোনো সুপারিশ ছাড়াই অফিস নোটে তা অনুমোদন দেওয়া হয় এবং কর্মকর্তারা স্বাক্ষর করেন। এর মধ্যে ৩৬৩ কোটি টাকা দুটি ডিলে ব্যবহৃত হয়–সোনালী ট্রেডার্সে ২০০ কোটি টাকা ও সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডে ১৬৩ কোটি টাকা। দুদক বলছে, ওই অর্থ শেষ পর্যন্ত চেকের মাধ্যমে এস আলম অ্যান্ড কোং এর ন্যাশনাল ব্যাংক হিসাবের পুরনো ঋণ পরিশোধে ব্যবহার করা হয়। কোনো বাস্তব পণ্য ক্রয়–বিক্রয়ের প্রমাণ মেলেনি; জাল চালানপত্র ও নথি ব্যবহার করে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।












