চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বিতরণের দ্বিতীয় দিনে ১৪১টি ফরম বিক্রি করেছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল সোমবার বিকাল পৌনে ৫টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন চাকসু নির্বাচন পরিচালনার প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন।
চাকসু নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয় গত ১৪ সেপ্টেম্বর রবিবার। যা চলবে আজ বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। প্রথম দিন ২৮ জন এবং দ্বিতীয় দিন ১৪১ জনসহ দুই দিনে মোট ১৬৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
দ্বিতীয় দিনে উৎসবমুখর পরিবেশ: প্রথম দিনের তুলনায় দ্বিতীয় দিনে ক্যাম্পাসজুড়ে বেশি উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সকাল সাড়ে ৯টায় মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রার্থীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। দ্বিতীয় দিনে কেন্দ্রীয় সংসদের জন্য মনোনয়নপত্র নিয়েছেন ৭১ জন প্রার্থী। হল সংসদের জন্য ফরম সংগ্রহ করেছেন ৭০ জন। এর মধ্যে ছাত্র হলে ২৫ জন এবং ছাত্রী হলে ৪৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। এর আগে প্রথম দিনে কেন্দ্রীয় সংসদে ২৬ জন এবং হল সংসদে মাত্র ২ জন মনোনয়ন নিয়েছিলেন।
বিচ্ছিন্নভাবে মনোনয়ন নিল ছাত্রদল : দ্বিতীয় দিনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, চবি শাখার নেতৃবৃন্দও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তবে তারা সবাই এককভাবে মনোনয়ন নিয়েছেন। এখনও ঘোষণা করা হয়নি ছাত্রদলের দলীয় প্যানেল। আজ কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের উপস্থিতিতে প্যানেল ঘোষণা করার কথা জানিয়েছে সংগঠনটি।
গতকাল সোমবার দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে চাকসু ভবনে নির্বাচন কমিশনের অফিস থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন ছাত্রদল নেতারা। ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের মতো একক প্যানেল ঘোষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। ইতোমধ্যে সহ–সভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস), সহ–সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদসহ প্রায় সব পদেই প্রার্থী নিশ্চিত হয়েছে। সহ–সভাপতি পদপ্রত্যাশী শাখা ছাত্রদল নেতা মো. শাফায়াত বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী আজকে নিজেদের মতো মনোনয়ন নিয়েছি। আগামীকাল আমাদের প্যানেল ঘোষণা করা হবে।
শিবিরসহ অন্যান্য সংগঠনের প্যানেল আজ : অন্যদিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল গঠনে তোড়জোড় শুরু করেছে ছাত্রশিবির, ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র অধিকার পরিষদসহ অন্যান্য ছাত্রসংগঠন। এরই মধ্যে ইসলামি ছাত্র আন্দোলন ‘সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ’ নামে এবং ছাত্র অধিকার পরিষদ ‘চাকসু ফর র্যাপিড চেঞ্জ’ নামে প্যানেল ঘোষণার কথা জানিয়েছে।
ছাত্র অধিকার পরিষদের চবি শাখা সদস্য সচিব রোমান রহমান বলেন, আমরা দুটি বড় ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল ও শিবিরের সাথে কথা বলছি, তারা যদি আমাদের প্রাপ্ত সম্মান দেখায় আমরা তাদের সাথে নির্বাচনে যেতে রাজি আছি। তাদের সাথে কথা বলার পাশাপাশি আমরা নিজেরাও ইনক্লুসিভ প্যানেল গঠনের জন্য ক্যাম্পাসের বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের অগ্রভাগের সৈনিকদের সাথে কথা বলছি। আগামীকাল আমরা মনোনয়ন নেওয়ার চিন্তা করেছি।
এমফিল–পিএইচডি শিক্ষার্থীরাও প্রার্থী হতে পারবেন : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে এমফিল ও পিএইচডি পর্যায়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৪৮ জন। এর মধ্যে এমফিলের শিক্ষার্থী রয়েছেন ২২২ জন এবং পিএইচডির শিক্ষার্থী রয়েছেন ১২৬ জন। তারা সবাই আসন্ন চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটার এবং প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি এমফিল–পিএইচডির শিক্ষার্থী রয়েছেন কলা ও মানববিদ্যা অনুষদে। অনুষদটিতে এমফিল শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০৬ এবং পিএইচডির সংখ্যা ৬০। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আরবি বিভাগে এখানে এমফিল শিক্ষার্থী ৫৯ জন ও পিএইচডি ৩১ জন। ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে এমফিল ৪১ জন ও পিএইচডি ১৬ জন, বিজ্ঞান অনুষদে এমফিল ২০ জন ও পিএইচডি ২১ জন, সমাজবিজ্ঞান অনুষদে এমফিল ২২ জন ও পিএইচডি ১৫ জন, জীববিজ্ঞান অনুষদে এমফিল ১৭ জন ও পিএইচডি ৭জন, ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে এমফিল ১০ জন ও পিএইচডি ৫ জন এবং মেরিন সায়েন্সেস ইনস্টিটিউটে এমফিল ৬ জন ও পিএইচডি ২ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন।
তফসিল অনুযায়ী, ১৫ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন প্রার্থীরা। ২১ সেপ্টেম্বর প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হবে। ২৩ সেপ্টেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন এবং ২৫ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। প্রার্থীদের জন্য নিজ খরচে মাদক পরীক্ষা (ডোপ টেস্ট) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পরীক্ষার ফল ইতিবাচক হলে প্রার্থিতা বাতিল বলে গণ্য হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে আমরা উৎসবমুখর পরিবেশ দেখতে পাচ্ছি। দুইদিনে আমরা ১৬৯টি মনোনয়নপত্র বিতরণ করেছি। আমরা আশাবাদী, একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ শিক্ষার্থীবান্ধব চাকসু নির্বাচন উপহার দিতে পারব।
১৪টি হল সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি হবে হোস্টেল সংসদ নির্বাচনও: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন ও হল সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি হোস্টেল সংসদ নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে। হোস্টেল সংসদ নির্বাচনের অনুমোদন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে চাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. এ কে এম আরিফুল হক সিদ্দিকী এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ১৪টি হলের পাশাপাশি ১টি হোস্টেল রয়েছে। যা শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেল নামে পরিচিত। শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেল চবির মূূল ক্যাম্পাস থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে নগরীর মেহেদীবাগে অবস্থিত। যা চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ ছিল।
চাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. এ কে এম আরিফুল হক সিদ্দিকী বলেন, চাকসু নির্বাচনে ১৪টি হল সংসদের পাশাপাশি হোস্টেল সংসদেরও অনুমোদন দিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার। একইদিনে অনুষ্ঠিত হবে হোস্টেল সংসদ নির্বাচন।
হোস্টেল ছাত্র সংসদের কার্যনির্বাহী কমিটিতে মোট ১২টি পদ রাখা হয়েছে তবে নির্বাচন হবে ১০টি পদে। ২ জন নির্বাহী সদস্য নিয়ে গঠিত কমিটিতে সভাপতি, কোষাধ্যক্ষ, সহ–সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম–সাধারণ সম্পাদক, খেলাধুলা, ক্রীড়া ও ক্যান্টিন বিষয়ক সম্পাদক, শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক, দপ্তর সম্পাদক, স্বাস্থ্য, আবাসন ও যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক, সমাজসেবা, পরিবেশ ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক ও নির্বাহী সদস্য ২ টি পদ রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রায় তিন যুগ পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চাকসু নির্বাচন। আগামী ১২ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে শিক্ষার্থীদের বহুল আকাঙ্ক্ষিত এই চাকসু নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সংসদের ২৮টি এবং প্রতিটি হল সংসদের ১৬টি পদে ভোট গ্রহণ হবে। মোট ভোটার সংখ্যা ২৭ হাজার ৬৩৪ জন।












