৩৬ বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহুল প্রত্যাশিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। এ উপলক্ষে পুরো ক্যাম্পাসে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। গতকাল রবিবার সকালে শুরু হয়েছে মনোনয়নপত্র বিতরণ কার্যক্রম, যা চলেছে বিকাল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত। একইদিনে প্রকাশিত হয়েছে চূড়ান্ত ভোটার তালিকাও।
প্রথম প্যানেল ‘দ্রোহ পর্ষদ’ ঘোষণা : চাকসুর প্রথম জোট প্যানেল হিসেবে মনোনয়ন নিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের জোট প্যানেল ‘দ্রোহ পর্ষদ’। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ইফাজউদ্দিন ইমু। তিনি জানান, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সমন্বয়ে গঠিত এই জোট প্যানেলে সহ–সভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাট্যকলা বিভাগের ঋজুলক্ষ্মী অবরোধ এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে লড়বেন ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ব্যাংকিং এন্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের ইয়াজউদ্দিন ইমু। এছাড়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ছাত্র ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শেখ জুনায়েদ কবির। ইফাজ উদ্দিন বলেন, শাটল ট্রেন, আবাসনসংকট, গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধি, লাইব্রেরি আধুনিকায়ন ও সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা কাজ করব। চাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কারও আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে যারা সিনেটে যাবেন, তাঁদের দায়িত্ব হবে উপাচার্যকে দেওয়া একক ক্ষমতা সংশোধন করা। এর মাধ্যমেই শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার আদায় সম্ভব হবে।
দ্বিতীয় প্যানেল ‘চাকসু ফর র্যাপিড চেঞ্জ’: অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা গণ অধিকার পরিষদ চাকসু নির্বাচনে এককভাবে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তাদের প্যানেলের নাম রাখা হয়েছে ‘চাকসু ফর র্যাপিড চেঞ্জ’।
এতে সহসভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সংগঠনের আহ্বায়ক ইইই বিভাগের তামজিদ উদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে লড়বেন বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগের রোমান রহমান।
তামজিদ উদ্দিন বলেন, আমরা ১৬ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ফরম নেব। আমাদের প্রায় ৫৪ জন প্রার্থী রয়েছেন। তবে কে কোন পদে লড়বেন, সেটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
প্রথম দিনে মনোনয়নপত্র বিতরণে ভিড় : সকাল ৯টা থেকে চাকসু ভবনের দ্বিতীয় তলায় নির্বাচন কমিশনারের কক্ষ থেকে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হয়। প্রথম দিনেই জমে ওঠে ক্যাম্পাস। অনেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে ফরম সংগ্রহ করেন।
প্রথম দিনে মোট ২৮টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে মনোনয়ন নিয়েছেন ২৬ জন এবং হল সংসদে ২ জন। হল সংসদের দুইজনের একজন ছাত্র হলে আরেকজন ছাত্রী হলে।
কেন্দ্রীয় সংসদে মনোনয়ন নেওয়া ২৬ জনের মধ্যে সহসভাপতি পদে সাত জন, সাধারণ সম্পাদক পদে একজন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে একজন, খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে দুইজন, সহ খেলাধুলা সম্পাদক পদে একজন, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক পদে একজন, সহ সাহিত্য সম্পাদক পদে একজন, দপ্তর সম্পাদক পদে একজন, ছাত্রীকল্যাণ সম্পাদক পদে একজন, সমাজসেবা ও পরিবেশ সম্পাদক পদে একজন, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে একজন, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট ও আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে একজন, যোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক পদে একজন, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক পদে একজন মনোনয়ন নিয়েছেন।
মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় ভিপি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হাবিবুর রহমান বলেন, আমি একজন শিক্ষার্থী হিসেবে কোনো দলীয় বলয়ে না গিয়ে নিজে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করব। আমার প্রতিশ্রুতি হলো শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করব।
প্রথম মনোনয়ন নিলেন খেলোয়াড় তায়েফুল :
৩৬ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া চাকসু নির্বাচনে প্রথম মনোনয়ন নিয়েছেন ব্যবস্থাপনা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী তায়েফুল আলম। তিনি কেন্দ্রীয় সংসদের ক্রীড়া সম্পাদক পদে লড়বেন।
তায়েফুল বলেন, আমি বাংলাদেশ জাতীয় ভলিবল দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভলিবল দলের অধিনায়ক। আমি অনেক দিন ধরে খেলোয়াড়দের জন্য কাজ করছি। আমার মনে হয়েছে, খেলোয়াড়দের জন্য কিছু করা দরকার। এ কারণে আমি চাকসুতে লড়ছি।
প্রথম দিনের মনোনয়ন বিতরণ সম্পর্কে জানতে চাইলে চাকসু নির্বাচন কমিশনার ও সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. এ কে এম আরিফুল হক সিদ্দিকী বলেন, প্রথম দিনে মনোনয়ন বিতরণে শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ লক্ষ্য করেছি। এতদিন পর চাকসু নির্বাচন হচ্ছে, তাই শিক্ষার্থীরা আগ্রহ নিয়ে অংশ নিচ্ছে। আমরা সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ : মনোনয়ন বিতরণের পাশাপাশি গতকাল সকালে প্রকাশিত হয়েছে চূড়ান্ত ভোটার তালিকাও। এতে ভোটার বেড়েছে ১ হাজার ৮০৮ জন। ফলে ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ৬৩৪ জন। এর আগে গত ১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত খসড়া তালিকায় ভোটার ছিলেন ২৫ হাজার ৮৬৬ জন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, খসড়া তালিকা প্রকাশের পর শিক্ষার্থীদের দাবি ও আপত্তি পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আগামী নির্বাচনে এই তালিকা অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯০ সালে। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হতে যাচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন। মনোনয়ন বিতরণ শুরু হতেই পুরো ক্যাম্পাস নির্বাচনী উত্তাপে মুখর হয়ে উঠেছে।












