ভোরবেলা। রাস্তায় তখনো শহরের কোলাহল ঢুকে পড়েনি। সাগরের হাওয়া মিশে আছে ঠাণ্ডা বাতাসে। শহরের এক কোণে দেখা যায় একজন মানুষকে– কানে হেডফোন, চোখে দৃঢ়তা, আর পায়ে অবিরাম ছন্দ। তিনি অভিজিৎ দাশ। তিনি একজন আলট্রা রানার– যিনি প্রমাণ করেছেন, ব্যস্ততম কর্মজীবনের মাঝেও নিজের জন্য সময় বের করা সম্ভব। সব সামলিয়েও অভিজিৎ প্রতিদিন নিজেকে শাণিত করেছেন দৌড়ের মাধ্যমে। শুধু নিজে নয়, তিনি আশেপাশের মানুষদেরও অনুপ্রাণিত করেছেন। কর্মজীবনের চাপ, বসে থাকার অভ্যাস আর অলসতাকে জয় করে অনেক সহকর্মী তাঁর দৌড়ের দলে যোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সময় নেই–এটা আসলে অজুহাত। সময় তৈরি করতে হয়, যদি ইচ্ছা থাকে।’
অভিজিৎ দৌড়ের পথ থামিয়ে রাখেননি চট্টগ্রাম শহরের মধ্যেই। বাংলাদেশের নানা প্রান্তে অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়। দেশ পেরিয়ে বিদেশের মাটিতেও রেখেছেন নিজের পদচিহ্ন। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের আন্তর্জাতিক ম্যারাথনে অংশ নিয়ে গলায় ঝুলিয়েছেন ফিনিশার মেডেল। তাঁর কাছে প্রতিটি প্রতিযোগিতা শুধু একটা রেস নয়; এটা একেকটা প্রমাণ– যে শারীরিক সুস্থতা, মানসিক দৃঢ়তা আর অধ্যবসায়ের চেয়ে বড় জয় আর নেই। সমপ্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে তিনি হাসিমুখে বলেন, ‘ফ্রি–তে ডিপিএস করে দেব!’ যেখানে ‘ডিপিএস’ বলতে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, উড়পঃড়ৎ চৎবংপৎরঢ়ঃরড়হ ঝশরঢ়! তাঁর যুক্তি সহজ– নিয়মিত দৌড়ানো বা ব্যায়াম করলে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজনই পড়বে না, কারণ এটাই সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্য বিনিয়োগ। অভিজিৎ বিশ্বাস করেন– বয়স, পেশা বা আর্থিক অবস্থা নয়, জীবনযাত্রার মান ঠিক করে দেয় আপনার ফিটনেসের মাত্রা। তাঁর মতে, প্রতিদিনের মাত্র ৩০ মিনিট দৌড় বা হাঁটাহাঁটিই পারে আপনার শরীর ও মনকে বদলে দিতে।
আজকের ভার্চুয়ালের যুগে কাজ অনেক সহজ হলেও, মানুষ হয়ে পড়ছে অনেক বেশি অলস। অলসতা থেকে মানসিক চাপ বেড়ে যায়, আর সেটি দিয়ে জন্ম নেয় অরাজকতা, বেআইনি কাজ, হিংস্রতা এবং নেশার দিকে ঝোঁক। এর প্রভাব পড়ে আমাদের সমাজে শান্তি নষ্ট হয়, আর ব্যক্তিগত জীবনে অস্থিরতা বাড়ে। তাই অপ্রয়োজনীয় সময় ডিভাইসের সামনে কাটিয়ে না দিয়ে, নেশা থেকে দূরে থেকে এবং নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করাই হতে পারে সুস্থ ও দীর্ঘায়ু জীবনের সবচেয়ে সেরা পথ। অতীতের প্রতিটি পদক্ষেপ আজকের সুস্থতা ও শক্তির ভিত্তি। তাই প্রতিদিনের ছোট্ট সময় দিয়েই নিজের জীবনে বড় পরিবর্তন আনুন। মনে রাখবেন, নিয়মিত চেষ্টা ও ধৈর্যই সত্যিকারের জয় এনে দেয়–নিজের শরীরের সঙ্গে একান্ত বন্ধুত্ব গড়ে তোলাই জীবনের সেরা সম্পদ।
আজকের যুব সমাজের জন্য অভিজিৎ দাশ এক জীবন্ত উদাহরণ– ব্যক্তিগত জীবন আর প্রফেশনালিজমের ভিড়েও জীবনকে সুস্থ ও প্রাণবন্ত রাখা যায়। তাঁর গল্প যেন একটাই বার্তা দেয়– ‘জীবন দৌড়ের মতো; গতি নয়, ধারাবাহিকতাই আপনাকে ফিনিশ লাইনে পৌঁছে দেবে।’










