পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের টানা ৬ দিনের কর্ম বিরতির কারণে আনোয়ারা উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের লক্ষাধিক গ্রাহক চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন। বন্ধ হয়ে গেছে বিভিন্ন সেবা কার্যক্রম। এতে পল্লী বিদ্যুৎ ঘিরে ক্ষোভে ফুঁসছে লাখো মানুষ। বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ বিপর্যয়, বিদ্যুতের ভূতুড়ে বিল, সেবাপ্রার্থীদের সাথে দুর্ব্যবহার নিয়মে পরিণত হয়েছে।
কর্মবিরতিতে পল্লী বিদ্যুতের বটতলী সাব–স্টেশনে অফিসের ভেতরে কর্মচারীদের একটি জুয়ার আসরের ছবি ভাইরাল হলে সমালোচনার ঝড় উঠে। অস্তিত্ব বিহীন পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক সমিতি বাতিলসহ প্রতি মাসে ১০ টাকা হারে সমিতির নামে মিটার ভাড়া আদায় বন্ধ করার জোর দাবি জানিয়েছেন সাধারণ গ্রাহকরা। সব মিলিয়ে যেকোনো সময় বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আশংকা সংশ্লিষ্টদের। আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের বিরুদ্ধে গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ আমাদের কোনো কথা শুনে না, পরিষদের সমন্বয় সভায় নোটিশ দিলেও আসে না।
গণছুটি নিয়ে কর্ম বিরতিতে যাওয়া কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কারণে পুরো বিদ্যুৎ বিভাগ অরক্ষিত হয়ে পড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ ঘটনায় পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম এক প্রকার নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে আনোয়ারা পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের অনিয়ম–দুর্নীতির লাগাম টানবে কে–সে প্রশ্ন এখন সকলের মুখে মুখে। এদিকে কর্মকর্তা কর্মচারীদের গণছুটি ও আন্দোলনে প্রকাশ্যে নেতৃত্বে দিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগকে অস্থিতিশীল করার কাজে সারা দেশে জড়িত কর্মকর্তাদের সাথে আনোয়ারা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের এজিএম (কম) শাহীন আলমের নামও প্রকাশ করেছে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। গত ৯ আগস্ট এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ বিভাগের স্থিতিশীলতা বজায় ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মো. কবির উদ্দিন হাওলাদার। এদিকে অভিযুক্ত শাহীন আলমকে বদলি ও তার সকল অপকর্ম তদন্তপূর্বক বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
আনোয়ারা পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম মোরশেদুল ইসলাম পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের চলমান আন্দোলন নিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগকে অস্থিতিশীল করার জন্য যেসব কর্মকর্তাদের দায়ী করে সরকার তালিকা করেছে তাদের মধ্যে আনোয়ারা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের এজিএম (কম) শাহীন আলমের নামও রয়েছে বলে স্বীকার করেন। তিনি জানান, পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে কর্মকর্তা কর্মচারীদের টানা কর্মবিরতির কারণে বিদ্যুৎ বিভাগের কার্যক্রম চালানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে আনোয়ারা পল্লী বিদ্যুতের অধীনে ১০৩ জন কর্মকর্তা–কর্মচারী রয়েছেন জানিয়ে তাদের মধ্যে ৭৮ জন ‘গণছুটি’ নিয়ে কর্মবিরতি পালন করছেন বলে জানান ডিজিএম মোরশেদুল ইসলাম। তিনি বলেন, বর্তমানে ৫ জন লাইনম্যানসহ মোট ২৫ জন লোক আনোয়ারা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসসহ ৩ টি সাব স্টেশন, ২টি অভিযোগ কেন্দ্র পরিচালনা করছেন। এভাবে কতক্ষণ চালাতে পারবো জানি না। তিনি আরো জানান, একমাত্র বিশেষ জরুরি মেরামত ছাড়া কোনো ধরনের গ্রাহক সেবা উপজেলার ১১ ইউনিয়নে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। পল্লী বিদ্যুতের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল আদায়ের বিষয়ে তিনি জানান, তীব্র গরমের কারণে মানুষ অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে, অনেক সময় মিটারে ত্রুটি থাকে বা মিটার রিডার যারা বিল রিডিং করে অফিসে জমা দেন তাদেরও ভুল হতে পারে। সে কারণে হয়তো বিদ্যুৎ বিল বাড়তে পারে, এ ব্যাপারে গ্রাহক অভিযোগ করলে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। অনেক ক্ষেত্রে লোকবলের অভাবে গ্রাহকদের পর্যাপ্ত সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। হয়রানির বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। কর্মবিরতি পালনকালে পল্লী বিদ্যুতের বটতলী সাব স্টেশনের অফিসে জুয়া খেলার বিষয়ে তিনি জানেন না বলে জানান।
জুঁইদন্ডি ইউনিয়নের প্রবাসী ইসহাকের পরিবারের অভিযোগ, তাদের ঘরের আবাসিক মিটারে সর্বোচ্চ ১২/১৪ শত টাকা বিলের স্থলে ৬ লক্ষ টাকার বিল প্রদান করা হয়। বিষয়টি বিলদাতাকে জানালে তিনি বিলটি ফেরত নেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকার মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
মেহেদি হাসান নামের এক গ্রাহক অভিযোগ করেন, তিনি পল্লী বিদ্যুতের বটতলী সাব স্টেশনে গেলে সেখানে তারা কোনো সেবা দিতে অস্বীকৃতি জানান। কিন্তু কর্মবিরতির নামে কর্মচারীরা অফিসে জুয়ার আসর বসিয়েছেন। পরে আমি তাদের ভিডিও চিত্র ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করি।
আরিফুল ইসলাম নামে একজন গ্রাহকের অভিযোগ মাত্র ৮২৬ টাকার বিদ্যুৎ বিলে আমাকে ৮ হাজার ২২৬ টাকা বিল দেওয়া হয়। পরে কয়েকবার গিয়ে এ বিল কারেকশন করি। আমি জানতে চাই এ ধরনের ভূতূড়ে বিল কেন করবে পল্লী বিদ্যুৎ অফিস।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পল্লী বিদ্যুতের এক কর্মকর্তা অভিযুক্ত এজিএম শাহিন আলমের অপকর্মের বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন।
এলাকায় গ্রাহক হয়রানি ও ভূতুড়ে বিল প্রদানের বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের বিরুদ্ধে এলাকার গ্রাহকের শত শত অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে কর্মবিরতির কারণে উপজেলার ১১ ইউনিয়নের অনেক এলাকায় শত শত গ্রাহকের ঘরে বিদ্যুৎ নেই।
আনোয়ারা সচেতন নাগরিক ফোরামের আহ্বায়ক আশরাফ উদ্দীন চৌধুরী কুসুমের অভিযোগ, পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে গ্রাহক হয়রানির কথা বলে শেষ করা যাবে না। তার মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগের জন্ম লগ্ন থেকে ১০ টাকা করে মিটার ভাড়া নেওয়া হচ্ছে, আমরা মিটার ভাড়া বন্ধের জোর দাবি জানাচ্ছি।
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের বিরুদ্ধে স্থানীয় গ্রাহকদের অভিযোগ শুনতে শুনতে আমি ক্লান্ত, এসব বিষয়ে পল্লী বিদ্যুৎ আমাদের কোনো কথা শুনে না। উপজেলা সমন্বয় সভার বৈঠকে তারা আসেন না। তাই পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের নানা অভিযোগ ও গ্রাহক হয়রানির বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা সমন্বয় সভায় আমি আমার বক্তব্য উপস্থাপন করেছি।











