বউ সেজে স্বামীর ঘরে যাওয়া হলো না শেখার

চন্দনাইশ প্রতিনিধি | শনিবার , ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ

বিয়ের প্রায় ৫ মাস পরও বউ সেজে স্বামীর ঘরে যাওয়া হলো না সালিমা সুলতানা শেখার (১৮)। গতকাল শুক্রবার শ্বশুর বাড়ি থেকে স্বামী বের হওয়ার পরপর নব বিবাহিত স্ত্রী সালিমার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি জনপথ ধোপাছড়ি ইউনিয়নের চিরিংঘাটা ৯নং ওয়ার্ড সিকদার বাড়ী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত সালিমা সুলতানা শেখা ওই এলাকার কামাল উদ্দিনের মেয়ে। এ ঘটনার পর থেকে স্বামী মোঃ সাইফুল ইসলাম (২৫) পলাতক রয়েছে। সে একই এলাকার লোকমান গনির ছেলে।

স্থানীয়ভাবে জানা যায়, ভিকটিম সালিমা সুলতানা গত এসএসসি পরীক্ষায় সাতকানিয়ার পুরানগড় শাহ সরফুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অংশ নিয়ে কৃতিত্বের সাথে পাশ করে। এদিকে সালিমার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে একই এলাকার মোঃ সাইফুল ইসলাম (২৫) নামে এক যুবকের। গত ঈদুল আযহার আগে তাদের প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি জানাজানি হলে আনুমানিক ৫ মাস পূর্বে সামাজিকভাবে তাদের আকদ ও ৬ লক্ষ টাকা কাবিনের মাধ্যমে বিবাহ সম্পন্ন করা হয়। এরপর সাইফুল মাঝেমধ্যে শ্বশুর বাড়ি আসতো। কনে পক্ষের অভিযোগ বিয়ের সময় কথা মতো স্বামীকে ইতিমধ্যে ৩ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। কিন্তু ছেলে পক্ষ কনেকে এ পর্যন্ত ঘরে তুলে নেয়নি। বিয়ে হওয়ার পরও মেয়েকে তুলে না নিয়ে বিয়ে ভেঙে দেয়ার জন্য নানা টালবাহানা করছিল বলেও অভিযোগ মেয়ে পক্ষের। ভিকটিম সালিমার চাচি জান্নাত আরা বেগম জানান, গতকাল শুক্রবার বিকেলে পূর্বের মতোই সাইফুল তাদের বাড়িতে আসে। এসেই সালিমাকে নিয়ে রুমে প্রবেশ করে। স্বামী তার স্ত্রীকে নিয়ে রুমে প্রবেশ করায় তারাও বাঁধা দেননি। পরবর্তীতে তিনি গরুকে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যায়। এরমধ্যে তার ছেলে তাকে জানায় সালিমা ঘরের মধ্যে ঝুলে রয়েছে। সাইফুল ঘরের পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গেছে। সালিমার মা খাইরুন্নেছা জানান, গত কোরবানের আগে সাইফুলের সাথে তার মেয়ের বিয়ে হয়। পরবর্তীতে সাইফুল বিদেশ যাওয়ার কথা বলে ৩ লাখ টাকা নেয়। বিদেশ থেকে এসে তার মেয়েকে ঘরে নিয়ে যাবে বলেও জানায়। কিন্তু সে বিদেশ যায়নি এবং মেয়েকেও এ পর্যন্ত ঘরে তুলে নেয়নি। গতকাল শুক্রবার বিকেলে সাইফুল তাদের ঘরে এসে সালিমাকে নিয়ে রুমে প্রবেশ করে ঘন্টাখানেক পর ঘর থেকে বের হয়ে পিছনের দরজা দিয়ে দ্রুত চলে যায়। এরও কিছুক্ষণ পর তিনি ঘরে ডুকে বিছানা অগোচালে দেখতে পান। কিন্তু মেয়েকে না দেখে ঘরে খুজতে থাকেন। এক পর্যায়ে ঘরের দরজার পিছনে বিমের সাথে রশিতে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় মেয়েকে দেখতে পেয়ে চিৎকার দেন। এসময় পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা ছুটে এসে রশি কেটে সালিমাকে উদ্ধার করে দোহাজারী হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। এ বিয়েতে সাইফুলের মা রাজি ছিলেন না বলেও জানান তিনি।

এদিকে ঘটনার পর থেকে সালিমার স্বামী সাইফুল পলাতক রয়েছে। খবর পেয়ে চন্দনাইশ থানা পুলিশ দোহাজারী হাসপাতালে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করে ময়না তদন্তের জন্য চমেক হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সাইফুলের বড় ভাই রুবেলের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে জানান। চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সারোয়ার জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ভিকটিমের লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করে ময়না তদন্তের জন্য লাশ মর্গে প্রেরণ করে। এ ব্যাপারে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দেয়া হলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী পেল নেপাল, শপথ নিলেন সুশীলা কার্কি
পরবর্তী নিবন্ধআজ বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা