চট্টগ্রাম মহানগরের টেকসই উন্নয়ন, সমন্বিত নগর পরিকল্পনা এবং দক্ষ প্রশাসনিক কাঠামো গঠনের লক্ষ্যে কর্ণফুলী সেতু হতে আনোয়ারা কালাবিবির দীঘি পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলকে সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত করা সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে। এই দাবি শুধু প্রশাসনিক নয়, এটি অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং নাগরিক কল্যাণের দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অবকাঠামোগত অগ্রগতি ও সংযোগের প্রসার : শাহ আমানত সেতু (তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু) ২০১০ সালে চালু হওয়ার পর দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া, কর্ণফুলী ও আনোয়ারা উপজেলাকে নগরের মূল অংশের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত করেছে। কর্ণফুলী টানেল, দেশের প্রথম নদী পারাপারের টানেল, ২০২৩ সালে চালু হয়। এটি উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের মধ্যে যাতায়াত সময় এক ঘণ্টা থেকে কমিয়ে মাত্র ১০–১৫ মিনিটে নামিয়ে এনেছে। এই অবকাঠামো উন্নয়ন দক্ষিণাঞ্চলে শিল্প, পর্যটন ও জনবসতির দ্রুত বিস্তার ঘটিয়েছে।
শিল্পায়ন ও জনবসতির দ্রুত বৃদ্ধি: কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরে আনোয়ারা ও কালাবিবির দিঘি পর্যন্ত এলাকায় গড়ে উঠেছে বহু শিল্পকারখানা, গুদাম ও লজিস্টিক হাব। সড়ক ও গণপরিবহন নেটওয়ার্কের সমপ্রসারণ, রাস্তাঘাটের মানোন্নয়ন এবং নিরাপদ শিল্পপণ্য পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিনোদন কেন্দ্র, উদ্যান ও পুনর্বাসন প্রকল্পের সম্ভাবনা বেড়েছে। শিল্পায়ন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে যাতায়াতের চাপ, নাগরিক সেবা ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ বেড়েছে।
সিটি কর্পোরেশনের আওতায় এলে: অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ব্যবস্থাপনায় উন্নতি হবে। দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া সময় কমবে। টোল, কর ও ইজারা ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আসবে। টানেল রক্ষণাবেক্ষণ ও টারিফ রিভিউ কার্যকরভাবে পরিচালিত হবে। উন্নত পানি সরবরাহ, নিকাশী ব্যবস্থা, আবর্জনা ব্যবস্থাপনা ও স্যানিটেশন কার্যক্রম নিশ্চিত হবে। ই–গভর্ন্যান্স, স্বাস্থ্যসেবা, জরুরি সেবা এবং কর্মসংস্থান সমপ্রসারিত হবে। ভূমি রেকর্ড, রাজস্ব আদায় ও পরিকল্পিত শাসন সুসংহত হবে। টেকসই নগর উন্নয়নের পথ চট্টগ্রামকে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে। এই পেক্ষাপটে দক্ষিণ চট্টগ্রামকে সিটি কর্পোরেশনের আওতায় আনা অপরিহার্য। এটি শুধু একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ যা চট্টগ্রামের ঐতিহ্য, অর্থনীতি ও নাগরিক জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।












