উপহারে ‘লোভ’ হয়, তবুও ফিরিয়ে দেন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির

| শনিবার , ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ

মন্ত্রীর মর্যাদায় উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় উপহার পাওয়ার বিড়ম্বনার কথা তুলে ধরে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, কোনো কোনো সময় তিনি নিজ ‘বিবেচনা’ মতো উপহার ফেরত দেন।

উপহার প্রাপ্তির নানা ঘটনা তুলে ধরে গতকাল শুক্রবার সকালে নিজের ফেসবুকে ‘প্রলোভন’ শিরোনামে একটি পোস্ট দিয়েছেন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির। এই মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি রেল পথ, সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণায়ের দায়িত্বও সামলাচ্ছেন তিনি। উপদেষ্টার ওই বক্তব্য অনুসারীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। তার পোস্টটি প্রায় এক হাজার শেয়ার হয়েছে। ১২ হাজার ফেসবুক অনুসারী রয়েছে তার। খবর বিডিনিউজের।

ফেসবুক পোস্টের শেষ দিকে এসে উপদেষ্টা লিখেছেন, আমার মনে হয়েছে, প্রলোভনের ঊর্ধ্বে ওঠাই জনপ্রতিনিধিদের প্রধান কাজ। এটা করতে পারলেই অন্য সব কাজ সহজ হয়ে যায়। আশা করি আসন্ন নির্বাচনে জনগণ নির্লোভ জনপ্রতিনিধিদের নির্বাচিত করবেন।

নিজের শ্রীলংকা সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ফাওজুল কবির লিখেছেন, কিছুদিন আগে শ্রীলংকায় এক মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকে গেলে সেখানকার বিদ্যুৎমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আয়োজকদের পক্ষ থেকে আমাকে একটি উপহার প্রদান করা হয়। হোটেলে ফিরে গিফট বক্স খুলে দেখি একটি দামি ব্র্যান্ডের হাতঘড়ি। ঘড়িটি আমি হাতে পরি, পছন্দ হয়, লোভ হয়। দেশে ফিরে এসে, মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে চিঠি লিখে ঘড়িটি তোশাখানায় জমা দেওয়ার জন্য পাঠাই।

ভারতীয় একটি কোম্পানির কাছে থেকেও একই অভিজ্ঞতা হওয়ার কথা বলেছেন তিনি। বিদ্যুতের বকেয়া পরিশোধের কারণে খুশি হয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন ওই কোম্পানির শীর্ষ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা। সঙ্গে করে উপহার হিসেবে নিয়ে এসেছিলেন একটি আইপ্যাড। সেই উপহার হাতে তুলে নেড়েচেড়ে পছন্দ হওয়ার কথাও বলেছেন উপদেষ্টা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত উপহারটি ফেরত দিয়েছেন তিনি। গত পরশু আবার এক ভারতীয় বিদ্যুৎ কোম্পানির প্রধান (আদানি নয়) আমার সাথে দেখা করেন, আমাদের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানকে সাথে নিয়ে। দীর্ঘদিনের পাওনা বকেয়া পরিশোধ করায় কৃতজ্ঞতা জানতে এসেছেন। ফেরার সময় বলেন, সামান্য উপহার নিয়ে এসেছি। আমি তাঁকে বলি উপহার গ্রহণের ক্ষেত্রে একটি নির্ধারিত মূল্যসীমা আছে। উপহারটি খুলে দেখি একটি আইপ্যাড। বাসার আইপ্যাডটি পুরনো হয়ে গেছে, তাই লোভ হয়। আইপ্যাডটি তাঁকে ফিরিয়ে দিই। পাশে সোফায় বসে আমার কাণ্ড দেখে অন্য একজন উপদেষ্টা মিটি মিটি হাসছেন।

উপহার হিসেবে চকোলেট যে পছন্দ করেন সেই কথাও লিখেছেন এই উপদেষ্টা। তিনি লিখেন, তবে কোনো উপহারই গ্রহণ করি না, এমন নয়। বিদেশী মন্ত্রী, রাষ্ট্রদূতরা দেখা করার সময় স্যুভেনির, বই নিয়ে আসেন। অবাণিজ্যিক পণ্য, বা মূল্যসীমার মধ্যে কোনো খাবার, যেমন, চকোলেট। সেগুলো গ্রহণ করি। বিনিময়ে তাদের নিজের লেখা বই উপহার দিই। ভাগ্যিস কয়েকটা বই লিখেছিলাম!

উপহার কতটা দামি হলে গ্রহণ করা যায়? প্রশ্ন করলে ফাওজুল কবির বলেন, ৫০০ কিংবা হাজার টাকার উপহার হলে সেটা নেওয়ার মতো। কিন্তু এর চেয়ে দামি উপহার গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করি না। উপহারের সীমা সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আরও ভালো বলতে পারবে।

যোগাযোগ করা হলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তোশাখানা শাখার দায়িত্বে থাকা উপসচিব সরওয়ার কামাল বলেন, উপহার গ্রহণের অনেক নিয়ম আছে। ৫০ হাজার টাকার কম মূল্যের উপহার গ্রহণ করতে পারেন মন্ত্রী পর্যায়ের কর্মকর্তারা। এরচেয়ে বেশি মূল্যের হলে সেটা বাড়তি মূল্য পরিশোধ করে উপহার নিজের কাছে রেখে দিতে পারেন। আবার ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় অনেকে এরচেয়ে কম মূল্যের স্মারক উপহারও তোশাখানায় জমা করে থাকেন।

প্রায় দুই মাস ধরে এই দায়িত্ব পালন করছেন সরওয়ার কামাল। এই সময়ের মধ্যে জ্বালানি উপদেষ্টার এই উপহারসহ রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের একটি এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের বেশ কিছু উপহার তোশাখানায় জমা পড়ার কথা জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমার্কস অলরাউন্ডার আঞ্চলিক পর্ব শুরু হয়েছে চট্টগ্রাম থেকে
পরবর্তী নিবন্ধঅপরিকল্পিত গতিরোধক বাড়াচ্ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি