প্রবাসীসহ ভোটের সময় যাদের নিজ এলাকার বাইরে থাকতে হয়, তাদের জন্য তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা সূচক পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থা নিয়ে একগুচ্ছ কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে ইসি। বিদ্যমান পোস্টাল ব্যালট ভোটিং অকার্যকর হওয়ায় ব্যালট আবেদন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন এনে নতুন ব্যবস্থা সাজানো হচ্ছে। প্রচলিত পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কাছে কাগুজে আবেদন করতে হলেও নতুন পদ্ধতিতে অনলাইনে নিবন্ধনের মাধ্যমে সেই প্রক্রিয়া সেরে ফেলার কথা ভাবা হচ্ছে। এর বাইরে ভোটদান প্রক্রিয়া আগের মতই থাকছে। এ নতুন ব্যবস্থার জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) সংশোধনী এনে অনলাইন নিবন্ধন ও ভোটদান পদ্ধতি ঠিক করা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
আর তা বাস্তবায়নে ৪৯ কোটি ৪৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকার পোস্টাল ব্যালটে প্রবাসীদের ভোটদান সিস্টেম উন্নয়ন ও বাস্তবায়ন (ওসিভি–এসডিআই) প্রকল্প হাতে নিয়েছে ইসি। এখন বিপুল সংখ্যক প্রবাসীর পোস্টাল ব্যালট আনা–নেওয়া, মুদ্রণসহ প্রাসঙ্গিক ব্যয় ঠিক করা হচ্ছে। প্রবাসীদের পোস্টাল ভোটিং সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য ও পরামর্শক সালিম আহমাদ খান বলেন, আউট অব কান্ট্রি ভোটিং–ওসিভি নিয়ে কাজ চলছে; মডিউল নিয়ে প্রচারণায় যাবে। প্রায় ১০ লাখ ভোটারের টার্গেট রয়েছে, চ্যালেঞ্জের বিষয়ও রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে, প্রযুক্তিগত বিষয়েগুলো চূড়ান্ত হলে ধাপে ধাপে জানানো হবে।
ইসি সচিবালয়ের নির্বাচন পরিচালনা শাখা এবং বাজেট ও ব্যয় নিয়ন্ত্রণ শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, ইসি সচিবালয় খাতওয়ারি ব্যয় প্রাক্কলন করে দিলেই বরাদ্দের জন্য সরকারের কাছে তা পাঠানো হবে। জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ মঙ্গলবার বলেন, এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। অনলাইন নিবন্ধনে অ্যাপ তৈরিসহ প্রাসঙ্গিক বিষয় রয়েছে এতে। আর প্রবাসীদের ভোটিংয়ের ব্যালট আনা নেওয়া ও মুদ্রণসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে মাত্র আলোচনা শুরু হচ্ছে; সব মিলিয়ে কত ব্যয় হবে এমন ধারণা এখন দেওয়াও মুশকিল হবে।
প্রবাসীদের (ওসিভি) পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে (আইসিপিভি) সরকারি কর্মকর্তা, নির্বাচনি দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি এবং জেলে বা আইনি হেফাজতে থাকা ব্যক্তিদের পোস্টাল ব্যালটে ভোটের বিধান রয়েছে। রোজার আগে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটের লক্ষ্যে কাজ করছে ইসি। ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল হতে পারে। সেক্ষেত্রে ৫ জানুয়ারির মধ্যে কাজ গুছিয়ে এনে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ওসিভি ও আইসিপিভি’র জন্য প্রচারণা, উদ্বুদ্ধকরণ ও ভোটার শিক্ষা কার্যক্রম সূচি রাখা হয়েছে।
প্রবাসী ভোটারদের ব্যালট আনা–নেওয়ায় ডাক বিভাগ শেষ পর্যন্ত কত খরচের প্রস্তাব রাখছে, সেদিকেও তাকিয়ে রয়েছে ইসি। আর কতজন ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধন করছে, তার ভিত্তিতে ব্যয় ঠিক করা হবে। ৮–১০ লাখ প্রবাসীর সাড়া পাওয়া যাবে– এমন ধারণা দিয়ে অন্তত ৪০০ কোটি টাকার মতো ব্যয় হতে পারে বলে ধারণা করছেন ইসি কর্মকর্তারা।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, ডাক বিভাগ থেকে ফাইনাল চাহিদা ও আমাদের কারিগরি কমিটির আলোচনার পর একটা ব্যয় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। এখনও অনেক সময় রয়েছে। প্রাথমিক যে ধারণা দেওয়া হয়েছিল, তার চেয়ে কম হতে পারে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় যেহেতু হবে, কেমন ভোটার নিবন্ধন করে তা দেখতে হবে। দেখা যাক।
গেল জুন মাসে ডাক বিভাগ বলেছিল, ইএমএস/রেজিস্টার্ড সার্ভিসে একজন ভোটারের ব্যালট পেপার প্রবাসে পাঠানো এবং ফেরত আনতে ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা ব্যয় হতে পারে। পরে ৭ আগস্ট নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছিলেন, শুধু একটা পোস্টাল ব্যালট আনা–নেওয়া করতে গড়ে লাগবে আনুমানিক ৫০০ টাকা। এর বাইরেও ১০০ থেকে ২০০ টাকা খরচ হবে। প্রতি এক লাখ ভোটারের জন্য ছয় থেকে সাত কোটি টাকা লাগবে। আমরা একটা প্রাক্কলিত বাজেট সরকারের কাছে চাইব।
ইসির কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরের মধ্যে পোস্টাল ব্যালট সংক্রান্ত প্রকল্প অনুমোদন এবং সফটওয়্যার পরিকল্পনা ও ইসির অনুমোদন সম্পন্নের ভাবনা রয়েছে। ওসিভি–আউট অব কান্ট্রি ভোটিং: মোবাইল অ্যাপের লোগো, খামের নকশা ও মুদ্রণের সংখ্যা, আইন, আরপিও সংস্কার। ভোটদান নিশ্চিতে সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে।