নগরবাসীর দুর্ভোগ কমাতে সড়কের টেকসই সংস্কার নিশ্চিত করুন

| বুধবার , ২৭ আগস্ট, ২০২৫ at ৪:৫০ পূর্বাহ্ণ

সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ধীরে ধীরে নগরের অলিগলির সবগুলো সড়ক সংস্কার করার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ইনশাল্লাহ প্রায় ২৩টি বড় সড়ক শিগগিরই নির্মাণ ও সংস্কার কাজ শুরু হবে। এতে চট্টগ্রামের অবকাঠামো উন্নয়নে আমূল পরিবর্তন আসবে। শহরের নালাগুলোকে ‘প্রাইমারি ড্রেনেজ সিস্টেম’ উল্লেখ করে নালার সংস্কার কাজ অব্যাহত থাকবে বলেও ঘোষণা দেন। একইসঙ্গে প্লাস্টিক, পলিথিন, ককশিটসহ অন্যান্য জিনিসপত্র নালায় না ফেলার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, চট্টগ্রামে ভারী বর্ষায় গত চার বছরের মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীতে সবচেয়ে বেশি সড়কের ক্ষতি হয়েছে চলতি বর্ষায়। যার পরিমাণ ১৪২ দশমিক ২৮১ কিলেমিটার সড়ক। ক্ষতিগ্রস্ত এসব সড়ক সংস্কারে প্রয়োজন ৪২৬ কোটি ৮৪ লাখ ২২ হাজার ৭১০ টাকা। এদিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নিজস্ব অ্যাসপল্ট প্ল্যান্ট থেকে তৈরি মিক্সার (ইট, বালি, সিমেন্টে, বিটুমিনের মিশ্রণ) দিয়ে বর্ষায় ক্ষতি হওয়া সড়কের ছোট ছোট গর্ত ভরাট করে থাকে। সংস্থাটির ভাষায় এটি প্যাঁচওয়ার্ক। চলতি ২০২৫২০২৬ অর্থবছরে প্যাচওয়ার্কের মালামাল ক্রয়ে বরাদ্দ রাখা আছে মাত্র ২৬ কোটি টাকা। চসিকের প্রকৌশল বিভাগ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের তালিকা এবং সংস্থাটির ২০২৫২০২৬ অর্থবছরের বাজেট বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। অর্থাৎ যে পরিমাণ সড়ক ক্ষতি হয়েছে তার বিপরীতে প্যাচওয়ার্কের মালামাল ক্রয়ের বরাদ্দ নামমাত্র। এছাড়া অর্থের স্বল্পতা আছে চসিকে। ফলে জরুরি হলেও আর্থিক সংকটসহ নানা সীমাবদ্ধতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের সংস্কার কাজ জরুরি ভিত্তিতে করতে পারছে না চসিক। এই অবস্থায় নগরীর ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে ৫শ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ চেয়েছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। গত সপ্তাহে এ বরাদ্দ চাওয়া হয়। অবশ্য বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে গত মঙ্গলবার লেখা একপত্রে মেয়র সড়ক সংস্কারের পাশাপশি সড়ক, ব্রিজ কালভার্ট ও নালা মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং খালের নিরাপত্তা বেষ্টনি স্থাপনের কথাও বলেছেন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, এবারের বৃষ্টিতে নগরীর ১৪২ কিলোমিটার সড়ক ভেঙেছে। ঝুঁকিপূর্ণ নালা ও খালেও নিরাপত্তাবেষ্টনী দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। এসব কাজে সরকারি বরাদ্দ প্রয়োজন। কেননা সিটি করপোরেশনের টাকায় সব কটি কাজ করা সম্ভব নয়। সরকারি বরাদ্দ পেলে রাস্তার সংস্কারকাজ ও নিরাপত্তাবেষ্টনী দেওয়ার কাজ দ্রুত করা সম্ভব হবে। চট্টগ্রাম মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেছেন, গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো ভেঙে যাওয়ায় মানুষ কষ্ট পাচ্ছেন। আপাতত সিটি করপোরেশনের তহবিল দিয়ে মেরামতের কাজ শুরু করা হয়েছে। কিন্তু এ জন্য যে পরিমাণ অর্থ দরকার তা সিটি করপোরেশনের নেই। তিনি বলেন, আমরা মন্ত্রণালয়কে জরুরি ভিত্তিতে চট্টগ্রাম নগরীর রাস্তাঘাট ঠিক করতে, অরক্ষিত নালানর্দমা ও খালের পাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী দিতে প্রয়োজনীয় ৫শ কোটি টাকা চেয়েছি। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।

গত ১১ আগস্ট আমরা এই সম্পাদকীয়তে লিখেছিলাম, চট্টগ্রাম নগরের অনেকগুলো সড়ক এখন বিধ্বস্ত। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে বেহাল হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম নগরের কিছু সড়ক। চলাচলে দুর্ঘটনার ঝুঁকির পাশাপাশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে চালক ও যাত্রীদের। যানবাহন চলাচল দূরে থাক, হাঁটাচলাও দায় হয়ে পড়েছে। চট্টগ্রাম নগরের অন্তত ৩০ থেকে ৩৫টি সড়ক এখন বেহাল। এর মধ্যে নগরের প্রধান সড়ক যেমন রয়েছে, তেমনি অলিগলির সড়কও রয়েছে। সড়কগুলো যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ভাঙা সড়কে গাড়ি চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে যানজটের সমস্যায় ভুগছেন চালক ও যাত্রীরা। আবার কিছু কিছু সড়কের এমন খারাপ অবস্থা, তাতে হেঁটে চলাচল করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

এ অবস্থায় আমাদের ভরসা হলো সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের আশ্বাসবাণী। তিনি বলেন, নগরবাসীকে ভোগান্তি থেকে মুক্তি দিতে আমরা দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেব। সড়ক সংস্কার কাজে গাফিলতি বরদাশত করা হবে না। জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত এবং মানসম্মত কাজ নিশ্চিত করতে হবে। মেয়র আরও বলেন, সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারে ব্যবহৃত বিটুমিনসহ সকল নির্মাণ সামগ্রীর গুণগত মান নিশ্চিত করতে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করাতে হবে। কোনো ঠিকাদার যদি চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে নিম্নমানের মালামাল সরবরাহ করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে মামলা করুন। কাজের মান বজায় রাখতে কোনো প্রকার আপস করা যাবে না। আসলে সড়ক সংস্কার কাজ দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করতে হবে। নগরবাসীর দুর্ভোগ কমাতে মানসম্মত ও টেকসই সংস্কার নিশ্চিত করা জরুরি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে