১২ বছরের শিশু শশী ঘোষ। গীতা রানী ঘোষের (৬৫) প্রিয় এ নাতনি বড্ড দাদি পাগল। দাদি–নাতনি একসঙ্গে খেয়েছেন রাতের খাবার। ঘুমিয়েছেনও একসঙ্গে। মধ্যরাতে হঠাৎ আগুন লাগে তাদের বসতঘরে। এতে অগ্নিদগ্ধ হন গীতা রানী। শশীর বাবা বারবার মেয়েকে বাইরে বেরিয়ে আসতে বলেন। কিন্তু দাদিকে ছাড়া বের হবে না সে। শেষ পর্যন্ত অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান গীতা রানী। মারাত্মকভাবে দগ্ধ হয় শশীও। গত সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ৩টার দিকে নগরের চান্দগাঁও থানার মোহরা দিঘির পাড় মৌলভীবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় দগ্ধ হন শশীর বাবা প্রদীপ ঘোষ লক্ষ্মণ (৪৯) ও শশীর মা কণা ঘোষ (৩৬)। অর্থাৎ এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একই পরিবারের চারজন দগ্ধ হন। এর মধ্যে গীতা রানী মারা যান। শশী ও তার মা কণা ঘোষকে প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাদের রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারিতে পাঠানো হয়। আহত প্রদীপ ঘোষ চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেন। অগ্নিকাণ্ডের সময় একই বাসায় শশীর ভাই শরৎ ঘোষ থাকলেও তার কোনো ক্ষতি হয়নি। গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যে ঘরে আগুন লাগে সেটা একতলা সেমিপাকা ঘর। ফায়ার সার্ভিস ও হতাহতদের স্বজনদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এতে ভবনের বাসিন্দারা আটকা পড়েন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস এসে তাদের উদ্ধার করে।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের অপারেটর জানান, রাত পৌনে তিনটার দিকে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে যায় ফায়ার সার্ভিস। ভোর ৪টা ১০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনে বসতঘরের ১০ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা উত্তম দাশ বলেন, আগুন লাগার পর ঘরের ভেতর থেকে চিৎকার শুনতে পাই। আমরা দরজা ভাঙার চেষ্টা করি, কিন্তু তীব্র তাপ আর ধোঁয়ার কারণে ভেতরে ঢোকা সম্ভব হয়নি। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে সবাইকে উদ্ধার করে।
কালুরঘাট ফায়ার স্টেশনের স্টেশন অফিসার ফখরুদ্দীন বলেন, আমাদের দুটি ইউনিট কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
চমেক হাসপাতালে অগ্নিদগ্ধ প্রদীপ ঘোষ কান্নাজড়িত কণ্ঠে আজাদীকে বলেন, আমার ১২ বছরের মেয়ে শশী ঘোষ দাদি পাগল। আগুনে পুড়ে যাওয়ার পরও দাদিকে ছাড়া বাসা থেকে বের হতে চাচ্ছিল না। কিন্তু তখনো আমার ঘরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। মেয়ে আমাকে বলে, বাবা তুমি নিরাপদে থেকো।
প্রদীপ ঘোষের ভাতিজা রাজিব ঘোষ আজাদীকে জানান, শশী ঘোষ ও তার মা কণা ঘোষকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।