চট্টগ্রাম বন্দরে নয়া ট্যারিফ নিয়ে ব্যবহারকারী এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের পরস্পর বিরোধী অবস্থানের মাঝে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর এবং বে টার্মিনালের ট্যারিফ নির্ধারণের জন্য আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক এই টেন্ডার আহ্বান করে। টেন্ডারে ট্যারিফ কাঠামো প্রণয়ন এবং প্রস্তাব জমা দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে মানসম্পন্ন কনসালটিং ফার্মের কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানকে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে পরামর্শ করে এমন একটি ট্যারিফ কাঠামো তৈরি করতে হবে, যা বন্দরটির বিনিয়োগ ও পরিচালন ব্যয় পুনরুদ্ধার এবং আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। পাশাপাশি মূলধনী সম্পদের পুনঃস্থাপন কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও বন্দরের উন্নয়নে যৌক্তিক অবদান রাখার উপযোগী প্রস্তাব দিতে হবে। এছাড়া বন্দরের দক্ষতা, বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে উপযুক্ত ট্যারিফ ফ্রেমওয়ার্ক প্রণয়ন এবং বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন তৈরি করাও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত থাকবে। একইসঙ্গে এই শর্তাবলী বে–টার্মিনালের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
বন্দর সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই ন্যূনতম পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতাসহ সমুদ্রবন্দরের ট্যারিফ কাঠামো
নির্ধারণ বা বিশ্লেষণ সংক্রান্ত কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এছাড়া বছরে অন্তত ১০ লাখ কন্টেনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতাসম্পন্ন ও অন্তত ৫০ লাখ টন সাধারণ পণ্য পরিবহন সক্ষমতাসম্পন্ন বন্দরে কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ দুপুর ১২টার মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর ভবনের প্রধান অর্থ ও হিসাব কর্মকর্তার দপ্তরে দরপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান অর্থ ও হিসাব কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুস শাকুর স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর ও বে টার্মিনালের ট্যারিফ নির্ধারণের আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দরপত্র আহবান করা হয়।
সূত্র বলেছে, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রনেই মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর পরিচালিত হচ্ছে। একইভাবে প্রস্তাবিত বে টার্মিনাল প্রকল্প এখনো একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ভবিষ্যতে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষ এবং বে টার্মিনাল আলাদা ভাবে কোন কর্তৃপক্ষের অধীনে পরিচালিত হবে কিনা সেটা নিশ্চিত না হলেও আলাদা ট্যারিফ কাঠামো তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, কোন বন্দরে দুই ধরণের ট্যারিফ আরোপ স্বাভাবিক নয়। নয়া ট্যারিফ কাঠামোর এই উদ্যোগ মাতারবাড়ি এবং বে টার্মিনালকে আলাদা কর্তৃপক্ষের অধীনে দেয়ার প্রাথমিক প্রক্রিয়া হিসেবেও দেখছেন তারা।
তবে বন্দর কর্তৃপক্ষের মতে, মাতারবাড়ি কিংবা বে টার্মিনাল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে থাকবে নাকি দুইটি আলাদা সংস্থার অধীনে থাকবে সেটি সরকারের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। তবে আপাততঃ আমরা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করে ট্যারিফ কাঠামো গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছি। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করলেই যে ট্যারিফ নির্ধারিত হবে ব্যাপারটি এমন নয়। এরজন্য বেশ সময় দরকার। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান রিপোর্ট দেবে, সরকার তা বাস্তবায়নে গেজেট প্রকাশ করবে। এজন্য বেশ সময় লাগে। তাই আমরা আগেভাগে আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের দরপত্র আহ্বান করেছি।
বন্দর সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে ট্যারিফ বাড়ানোর যে ব্যাপারটি নিয়ে ব্যবহারকারীদের সাথে কর্তৃপক্ষের কিছুটা টানাপোড়েন চলছে সেটিও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের রিপোর্টের ভিত্তিতে করা হচ্ছে। ওই পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ২০২০ সালে রিপোর্ট দিয়েছিল। তাদের সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে তৈরি করা ট্যারিফ কাঠামো কার্যকর করতে পাঁচ বছর লাগছে। তাছাড়া পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ট্যারিফ কাঠামো যে পুরোপুরি গ্রহণ করা হবে ব্যাপারটি তেমন নয়। তাদের কাছ থেকে একটি প্রস্তাব নিয়ে সেটির উপর আলাপ আলোচনা করে মাতারবাড়ি এবং বে টার্মিনালের জন্য ট্যারিফ নির্ধারণ করা হবে।
বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক এই দরপত্রের ভিত্তিতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়া হবে। তারা একটি ট্যারিফ কাঠামো তৈরি করে দেবে।