চালের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিতে হবে

| রবিবার , ২৪ আগস্ট, ২০২৫ at ৭:৫৯ পূর্বাহ্ণ

চালের মূল্যবৃদ্ধি কারো কাম্য নয়। কেননা চালের দামের সাথে অনেক বিষয় জড়িত। চাল এমন একটি পণ্য, এর দাম বাড়লে সবচেয়ে বেশি চাপে পড়ে শ্রমজীবী ও গরিব মানুষ। অতএব, চালের দাম যাতে কোনোভাবে না বাড়ে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। আমদানি করতে হবে। তা না হলে খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়ে এবং সরকারি গুদামে প্রয়োজনীয় ধানচাল মজুত করেই বাজার স্থিতিশীল রাখার ওপর জোর দিতে হবে। খোলাবাজারে কম দামে পর্যাপ্ত চাল বিক্রিও পরিস্থিতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। তবে আশার কথা হলো, দেশে কয়েক মাস ধরে ঊর্ধ্বমুখী থাকা চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার ভারত থেকে চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, ১২ আগস্ট হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি শুরু হলেও শুল্ক সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ব্যবসায়ীরা তা খালাস করতে পারেননি। এরপর ১৮ আগস্ট এনবিআর শুল্ক কমিয়ে ২ শতাংশ এআইটি নির্ধারণ করে এবং খালাস শুরু হয়। তবে ভারতের চাল বাজারে আসার পরও দাম কমেনি। নাজিরশাইলে চালের দাম এখনও ৮৫৯০ টাকা, মিনিকেট ৮০ টাকা, আর ব্রি২৮ ও ২৯ চাল ৬০৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতের চাল আরও বেশি পরিমাণে ঢুকলে দাম কমতে পারে। এদিকে চার মাস পর বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৩১৫ মেট্রিক টন মোটা চাল আমদানি হয়েছে। এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘বাজার স্থিতিশীল রাখতে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির অনুমতি দিতে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করা হয়েছিল। আমাদের অনুমতিপত্র পাওয়ার পর ৯টি ট্রাকে চাল আমদানি শুরু হয়েছে। অনুমতিপ্রাপ্ত আরও ব্যবসায়ীরা পর্যায়ক্রমে এলসি খুলছেন, ফলে রবিবার থেকে আমদানির পরিমাণ বাড়বে।’ বেনাপোল বন্দরের আমদানিরপ্তানিকারক সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন, ‘শুরুর প্রথম দিনে ৯ ট্রাকে ৩১৫ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। আরও অনেক চালবোঝাই ট্রাক বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে।’ ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, ভারতের চাল আমদানির ফলে দেশের বাজারে কেজিপ্রতি ৫৭ টাকা পর্যন্ত দাম কমতে পারে। ভালো মানের চিকন জাতের চাল ৬৭৭০ টাকার মধ্যে, মোটা স্বর্ণা জাতের চাল ৫০৫২ টাকার মধ্যে বিক্রি হবে।

বিশ্লেষকেরা বলেন, চাল উৎপাদনে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। সে ক্ষেত্রে ঠিক সময় আমদানি করতে হবে, যেন চাহিদাজনিত চাপ চালের বাজারে আলাদা সংকট সৃষ্টি করতে না পারে। সরবরাহ ঠিক থাকলে বাজারে কারসাজির সুযোগ কমে যায়। কিন্তু বাংলাদেশে চাল আমদানি সাধারণত নিষিদ্ধ থাকে। সরকার বিশেষ অনুমতি দিয়ে চাল আমদানি করে। সময়মতো আমদানি না হলে বাজারে কারসাজির সুযোগ সৃষ্টি হয় বলে জানা যায়। চাল দেশের মানুষের প্রধান খাদ্যশস্য। চালের দাম বাড়লে মূল্যস্ফীতির ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে। দরিদ্র পরিবারে ব্যয়ের বড় খাত হলো চাল। সে কারণে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নানামুখী উদ্যোগেও কমেনি চাঁদাবাজি। হাতবদলের পরে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে চাঁদাবাজরা। যার প্রভাব পড়ছে বাজারগুলোতে। ফলশ্রুতিতে বাড়ছে চালের দাম। হাসিনা সরকারের পতনের পর মাসখানেক বন্ধ থাকলেও চাঁদাবাজরা ভোল পাল্টে আবার মাঠে সক্রিয় হয়েছে। এ কারণে চালসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যই চড়া দামে বাজারে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। একজন ব্যবসায়ীকে হাটে, বাজারে, সড়কে, মহাসড়কে, আড়তে, পাইকারি বাজারে, খুচরা বাজারে এবং মহল্লার দোকানে পর্যন্ত বিভিন্ন কায়দায় চাঁদা দিতে হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলেন, বাজার সিন্ডিকেট ও চাঁদাবাজির কারণে পণ্যের দাম ৩০ শতাংশ বাড়ে। চাল সিন্ডিকেটের ভিত খুবই শক্ত। তারা মৌসুমের সময় কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে মজুদ করে। অভিযোগ রয়েছে, কৃষকের হাতে সামান্য যে ধান থাকে সেগুলোর মজুদ ফুরালে শুরু হয় করপোরেট ও মজুদদারের খেলা। এরপর বাজার চলে যায় তাদের নিয়ন্ত্রণে।

চালের দাম বৃদ্ধির পেছনে অনেকেই এই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট অতি মুনাফালোভীদের দায়ী করছেন। যতদূর জানি, সরকারের পক্ষে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। যেন কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে কেউ মূল্য বৃদ্ধি করতে না পারে। চালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ায়। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে আমদানি বাড়াতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে