ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে প্রশাসনের অভিযানেও থামছে না ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) স্লিপ কেনাবেচার দৌরাত্ম্য। এসব ডিও কেনাবেচায় সহায়তা করে কিছু চিহ্নিত ব্রোকার। ব্রোকাররা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ইস্যু করা স্লিপ এক সপ্তাহ থেকে শুরু করে এক মাস মেয়াদে বিক্রি করে থাকেন। তবে এই স্লিপে থাকে না কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম। শুধুমাত্র পণ্যের দাম ও নাম লিখা থাকে। ফলে কোন প্রতিষ্ঠান থেকে এই স্লিপ ইস্যু করা হয়েছে সেটি কারো পক্ষে বুঝার উপায় থাকে না।
বলা যায়, স্লিপ বিক্রির মাধ্যমে পণ্যের নামে এক টুকরো কাগজের হাতবদল হয় বারবার। এতে খাতুনগঞ্জে পণ্য বেচাকেনার নামে একপ্রকার জুয়া চলে প্রতিনিয়ত। দেখা যায়, বিক্রেতার কাছে পণ্য আছে ১০০ টন, তিনি বাজারে ৫০০ টন পণ্যের ডিও স্লিপ করে ফেলেছেন। শেষে যখন ক্রেতারা সেই পণ্য ডেলিভারি নিতে যান, তখন বিক্রেতারা আর ডেলিভারি দিতে পারে না।
এদিকে স্লিপ বাণিজ্যের বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা কয়েকবার অভিযান পরিচালনা করেন। তবে এতে বিশেষ সুরাহা মেলে না। তারা বলছেন, খাতুনগঞ্জে ডিও স্লিপ নিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ড লেবেলে একটা বাণিজ্য হচ্ছে– এমন অভিযোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে গেলে কেউ নির্দিষ্ট করে আমাদেরকে প্রমাণ দেখাতে পারে না। ডিও স্লিপে পণ্যের নাম ও দাম ছাড়া আর কিছুই লিখা থাকে না। আমরা যখন অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানে যাই তখন সেই প্রতিষ্ঠান স্লিপ তাদের নয় বলে জানায়। কারণ কাগজে প্রতিষ্ঠানের নাম, সিল ও স্বাক্ষর কিছুই থাকে না।
জানা গেছে, খাতুনগঞ্জে বর্তমানে তেল, চিনি, এলাচ, মটর ও গমের ডিও স্লিপের কেনাবেচা করছে। বাজারে পণ্য আসার আগেই কয়েক দফা হাতবদল হয় এসব স্লিপের। ফলে এক প্রকার ‘হাওয়ার’ ওপর এসব পণ্যের বাজার উঠানামা করে। অভিযোগ রয়েছে– ডিও স্লিপ বিক্রির পর যে দরে পণ্যের ডিও বিক্রি হয়, কোনো কারণে যদি বাজার দর যদি বেড়ে যায়, তখন পণ্যের ডেলিভারি দিতে তারা গড়িমসি করে। আবার দেখা যায়, কোম্পানির পণ্যই আসেনি, কিন্তু আমদানিকারক তার মনোনীত প্রতিনিধির মাধ্যমে ডিও বিক্রি স্লিপ করে রেখেছেন অনেক বেশি। এর ফলেও কোম্পানি বাজারে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে না।
জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের উপ–পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ডিও স্লিপের বিষয়ে আমরা বিভিন্ন সময় খাতুনগঞ্জে অভিযান চালিয়েছি। ডিও স্লিপ যেখান থেকে ইস্যু হয়, সেখানে গেলে ওই প্রতিষ্ঠান বলে আমরা এসব পণ্যের ব্যবসা করি না। বিশেষ করে খাতুনগঞ্জের সোনা মিয়া মার্কেটে এই কাজটি বেশি হচ্ছে। আমরা অভিযানে যখন যাই, তখন তারা দোকানপাট বন্ধ করে পালায়।