বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীর যেকোনো সিদ্ধান্তে একধরনের জটিলতা, দ্বন্দ্ব দেখা যায়। নারীর একক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় সামাজিক চাপে অনুকূল সিদ্ধান্তেই সীমাবদ্ধ থাকতে হয় তাকে। গর্ভধারণ কিংবা গর্ভপাতের মতো একান্ত বিষয়ে এখনো প্রচলিত ধারণাতেই সমাজ চলছে। তর্ক–বিতর্কে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নারীর গর্ভধারণ ও গর্ভপাত নিয়ে একক সিদ্ধান্তে উপনীত হলেও বাংলাদেশে এখনো একে বৈধ ধরা হয় না।
কিন্তু আমাদের আইন কি কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পেরেছে?
নারীর সন্তান গর্ভপাতের অধিকার বিষয়ে দেশভেদে কিছু ভিন্নতা আছে। মূলত নারীর গর্ভপাতের অধিকার তার প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার।
বাংলাদেশের আইনে সরাসরি গর্ভপাত আইনত বৈধ নয়। তবে মেনিস্টুয়াল রেগুলেশন নামক একধরনের প্রক্রিয়ার উল্লেখ আছে যা মূলত নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর মায়ের মৃত্যু ঝুঁকি থাকলেই গর্ভপাতের অনুমতি প্রদান করা হয়। ১৯৭১ সাল থেকে পরিবার পরিকল্পনার অধীনে উক্ত আইন চালু আছে। ফলে নারীর স্বাধীন সিদ্ধান্তে গর্ভপাতের সুযোগ নেই এবং অন্যথায় শাস্তির আশঙ্কা রয়েছে।
আন্তর্জাতিক মহলে ২০২০ সালের পূর্বে এধরনের নীতি থাকলেও বিগত বছরে আন্দোলনের মুখে ভারত, আমেরিকা, ইউরোপ, মধ্য–প্রাচ্যের কিছু দেশ এবং ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে চিকিৎসকের পরামর্শে নারীর গর্ভপাতের অধিকার দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের চিত্রপট এমন যে, আইনের কারণেই অল্পবয়সী নারীদের গর্ভধারণ করতে বাধ্য করার সুযোগ থাকে, জীবনের ঝুঁকি তো থাকেই সাথে নারী নির্যাতনের ঘটনাও বাড়ে। কিন্তু বাংলাদেশে কেন এখনো নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যের এমন গুরুত্বপূর্ণ আইনে সংশোধনী হচ্ছে না? দেশীয় আইনগুলোর রদবদল হলেও আজ সময় এসেছে এধরনের আইনের প্রতিপক্ষে দাঁড়ানোর। কেননা নারীর শরীর–মন সংক্রান্ত যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার তার মৌলিক অধিকার।