নারীর জীবনে হরমোন একটি অদৃশ্য নিয়ন্ত্রকশক্তি। কৈশোর থেকে মেনোপজ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপেই হরমোনের ওঠানামা তাদের শরীর, মন এবং জীবনযাত্রাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। সামপ্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা নারীদের নানা জটিল স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
প্রথমত, প্রজনন স্বাস্থ্য সরাসরি হরমোনের সঙ্গে যুক্ত। ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের অস্বাভাবিক ওঠানামা মাসিক অনিয়ম, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বা বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষ করে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (চঈঙঝ) নামক সমস্যা বর্তমানে বিশ্বব্যাপী প্রতি ১০ জন নারীর মধ্যে প্রায় ১ জনকে আক্রান্ত করছে। এর ফলে স্থূলতা, ব্রণ, চুল পড়া, এমনকি ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
দ্বিতীয়ত, থাইরয়েড হরমোনের অসামঞ্জস্য নারীর শরীরে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। গবেষণায় দেখা যায়, নারীরা পুরুষদের তুলনায় পাঁচগুণ বেশি থাইরয়েড সমস্যায় ভোগেন। এর ফলে ওজন বৃদ্ধি, অতিরিক্ত ক্লান্তি, স্মৃতিশক্তি হ্রাস ও মানসিক অবসাদ দেখা দেয়।
তৃতীয়ত, হরমোন পরিবর্তনের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যও গভীরভাবে যুক্ত। মাসিক পূর্ববর্তী সময়, গর্ভধারণ বা প্রসব–পরবর্তী সময়ে হরমোন ওঠানামার কারণে অনেক নারী উদ্বেগ, হতাশা বা বিষণ্নতায় আক্রান্ত হন। বিশেষত প্রসবোত্তর বিষণ্নতা (চড়ংঃঢ়ধৎঃঁস উবঢ়ৎবংংরড়হ) অনেক মায়ের জীবনমানকে নষ্ট করে দেয়।
মেনোপজ–পরবর্তী সময়ে ইস্ট্রোজেনের ঘাটতি আরেকটি বড় ঝুঁকি সৃষ্টি করে–অস্টিওপোরোসিস বা হাড় ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে প্রতি তিনজন নারীর একজন এই সমস্যায় ভোগেন। পাশাপাশি, হৃদরোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। সব মিলিয়ে বলা যায়, হরমোন কেবল নারীর প্রজনন নয়, বরং সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও মানসিক স্থিতির প্রধান নিয়ামক। তাই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সচেতনতা বৃদ্ধি ও জীবনধারায় পরিবর্তনের মাধ্যমে হরমোনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলা করা জরুরি। গবেষণা বলছে, নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় হরমোন ব্যবস্থাপনা এখন একটি বৈশ্বিক অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।