বন্দরের নতুন ট্যারিফ নিয়ে পর্যালোচনা হবে মন্ত্রণালয়ে

২৫ আগস্ট সভায় অংশ নেবেন নৌ-উপদেষ্টাসহ বন্দরব্যবহারকারী ও স্টেকহোল্ডাররা

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২২ আগস্ট, ২০২৫ at ৭:১০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরে বিভিন্ন সেবার নতুন ট্যারিফ নিয়ে আলোচনার জন্য বন্দরব্যবহারকারীসহ স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলোচনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) . এম সাখাওয়াত হোসেনের সভাপতিত্বে আগামী ২৫ আগস্ট মন্ত্রণালয়ে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রায় চল্লিশ বছর পর বিভিন্ন সেবার ট্যারিফ বাড়ানো হচ্ছে। অপরদিকে ব্যবহারকারীদের পক্ষ থেকে এই বক্তব্যকে নাকচ করে দিয়ে বলা হয়েছে, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের সাথে সাথেই প্রতিবছরই বন্দরের ট্যারিফ বৃদ্ধি পেয়েছে। ট্যারিফ নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং ব্যবহারকারীদের পরস্পরবিরোধী অবস্থানের মাঝে মন্ত্রণালয় এই পর্যালোচনা সভার উদ্যোগ নিয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য নিয়ে আসা একটি জাহাজ আবার ফিরতি পথের নোঙর তোলা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ৫৬ ধরনের সেবা দিয়ে থাকে। এর মধ্যে প্রতিটি জাহাজের সব ধরনের সেবার প্রয়োজন না হলেও অধিকাংশই সেবাই সমুদ্রগামী জাহাজগুলো গ্রহণ করে থাকে। বিদেশের কোন বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছার পর জাহাজটিকে জেটিতে আনার জন্য পাইলট পাঠানো, টাগবোট সার্ভিস, পানি সরবরাহ, ক্রেন চার্জ, জাহাজ ভিড়ানো, জাহাজ থেকে কন্টেনার নামানো কিংবা উঠানো, খোলা পণ্য উঠানোনামানোসহ পণ্য ডেলিভারি পর্যন্ত বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে। প্রতিটি কাজের জন্যই বন্দর কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট হারে মাশুল আদায় করে। ইউএস ডলারে নেয়া এই অর্থকেই বন্দরের ট্যারিফ বা সেবার মূল্য বলা হয়ে থাকে।

বতর্মানে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ যে ট্যারিফ আদায় করছে তা ১৯৮৬ সালে নির্ধারণ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ২০০৮ অর্থবছরে ৫টি খাতে ট্যারিফ বাড়ানো হয়। তবে বাকি ৫১ খাতের ট্যারিফ আদায় করা হয় ১৯৮৬ সালে নির্ধারিত হারেই। বন্দর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময় ট্যারিফ বাড়ানোর আলোচনা বা চিন্তাভাবনা করলেও তা সম্ভব হয়নি। ২০১৩ সালে ট্যারিফ পুনঃনির্ধারণের উদ্যোগ নেয়া হলেও মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন জুটেনি। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে বন্দর কর্তৃপক্ষ ট্যারিফ বাড়ানোর প্রস্তাব দাখিল করলে মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন দিয়ে আন্তর্জাতিক একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যামে ট্যারিফ কাঠামো তৈরির নির্দেশনা প্রদান করে। সরকারের নির্দেশনায় বন্দর কর্তৃপক্ষ স্পেনভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আইডিএম কনসাল্টিং ও লোকিকফোরাম’কে ট্যারিফ কাঠামো নির্ধারণের পরামর্শক নিয়োগ করে।

ওই প্রতিষ্ঠান নানা বিষয়ে পর্যালোচনা এবং বিভিন্ন দেশের বন্দরের সেবার মূল্য পর্যালোচনা করে একটি প্রস্তাব দাখিল করে। ২০২০ সালে জমা দেয়া ওই প্রস্তাবনার প্রেক্ষিতেই পাঁচ বছর পর নতুন ট্যারিফ কাঠামো তৈরি এবং কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

নয়া ট্যারিফ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। তারা বলেছেন, নয়া ট্যারিফের যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা অযৌক্তিক। বন্দর সেবামূলক একটি প্রতিষ্ঠান। এভাবে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মতো সবগুলো খাতেই চড়া ট্যারিফ আদায় করলে শিপিং বাণিজ্যে খরচ বেড়ে যাবে, যার যোগান মূলতঃ দেশের সাধারণ ভোক্তাদেরই দিতে হবে।

পরস্পর বিরোধী এই অবস্থানের মাঝে আগামী ২৫ আগস্ট নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে উচ্চ পর্যায়ের একটি পর্যালোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। নৌ পরিবহন উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠাতব্য উক্ত সভায় মন্ত্রণালয় এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের শীর্ষ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন অংশীজনের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের চবক শাখার উপসচিব মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ইতোমধ্যে পর্যালোচনা সভার দাওয়াতপত্র ইস্যু করে সংশ্লিষ্টদের প্রেরণ করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআগামী ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন,পরবর্তী সরকারে অংশ হব না
পরবর্তী নিবন্ধজাতিসংঘের জুলাই প্রতিবেদনকে ঐতিহাসিক দলিল ঘোষণার নির্দেশ হাই কোর্টের