অসময়ে টমেটো

চাষে পানির অপচয় রোধ ও শুকনো মৌসুমে কৃষকদের দুর্ভোগ কমাবে ফোঁটা সেচ প্রযুক্তি, প্রথমবারেই সাফল্য

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ২১ আগস্ট, ২০২৫ at ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ

সীতাকুণ্ডে পানির অপচয় রোধে ড্রিপ ইরিগেশন বা ফোঁটা সেচ প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রথমবারের মতো অসময়ে চাষ হচ্ছে গ্রীষ্মকালীন টমেটো বারি৮ জাতের। পানির অপচয় রোধ এবং শুকনো মৌসুমে সেচের দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেতে নতুন এই ড্রিপ ইরিগেশন প্রযুক্তিতে চাষ শুরু হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষক পরিবারগুলো রোদ, বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিভিন্ন রকমের সবজি চাষ করে থাকেন। তবে চলতি মৌসুমে ফোঁটা ফোঁটা পানিতে চাষ হচ্ছে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর।

এ বিষয়ে ইপসার কৃষি কর্মকর্তা মিহির মজুমদার বলেন, সীতাকুণ্ডসহ বাংলাদেশে ভূগর্ভে পানির লেয়ার নিচে নেমে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে সেচের পানির তীব্র সংকটের পড়তে হয় কৃষকদের। তারা জমি চাষাবাদে সমস্যার সম্মুখীন হয়। তাই শুকনো মৌসুমে গাছে অতিরিক্ত পানি দিতে হবে না; এ সমস্যা সমাধানে পিকেএসএফএর সহযোগিতায় এবং ইপসার বাস্তবায়নে উপজেলার কৃষক মো. আবু তাহের তার ৯ শতক জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে পানি সাশ্রয়ী পদ্ধতিতে ড্রিপ ইরিগেশন ব্যবহার করেন। এই ড্রিপ ইরিগেশন প্রযুক্তিটি সীতাকুণ্ডের জন্য নতুন এবং এই প্রথম ব্যবহার করা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে প্রতিটি গাছের গোড়ায় ফোঁটায় ফোঁটায় পানি পড়ে। তাতে প্রত্যেকটি গাছের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণে এবং সুনির্দিষ্টভাবে সেচ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। পানি সাশ্রয়ী পদ্ধতিতে চাষাবাদে পানির অপচয় যেমন কম হয়, ঠিক তেমনিভাবে সেচের সংকটও দূর হয়। এতে প্রান্তিক কৃষক ফসল উৎপাদনে জমির ফসল ঘরে তুলে আর্থিকভাবে অনেক লাভবান হবেন বলে আমার বিশ্বাস।

এ বিষয়ে সীতাকুণ্ড পৌরসভাধীন ২নং ওয়ার্ডের নুনাছড়া এলাকার কৃষক মো. আবু তাহের বলেন, এ প্রথম আমি নতুন প্রযুক্তিতে পাইপের মাধ্যমে পলি হাউজে ফোঁটা ফোঁটা পানিতে জমিতে সেচ দিয়ে অসময়ে টমেটোর চাষ করেছি। আর বাড়তি পানির প্রয়োজন হয় না। চলতি বছরের এপ্রিলের শেষ দিকে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে বারি৮ প্রজাতির ১ হাজার গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চারা সংগ্রহ করে ৯ শতক জমিতে রোপণ করেছিলাম। বর্তমানে প্রায় ২ হাজার কেজি টমেটোর উৎপাদন হয়েছে। এ পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে পাইকারিতে আনুমানিক ২ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করেছি। তবে বিভিন্ন বাবদ খরচ হয়েছে মাত্র ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা। আমাকে এ প্রদর্শনী দিয়েছেন উপজেলা কৃষি অফিস ও ইপসা। টমেটোর ফলন অনেক ভাল হয়েছে এবং সাইজও বেশ বড় হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে পূর্বের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে আকারে অনেক বড় হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, আমরা উপজেলা কৃষি অফিস ও ইপসা পিকেএসএফএর যৌথ উদ্যোগে অসময়ে টমেটোর চাষ করেছি। বর্তমানে এ উপজেলায় পানির ভূগর্ভে পানির লেয়ার নিচে নেমে গেছে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে সেচের পানির তীব্র সংকটের পড়তে হয় কৃষক পরিবারকে। তারা জমি চাষাবাদে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। তাই পানির অপচয় রোধে ড্রিপ ইরিগেশন প্রযুক্তি ব্যবহারে পানির সংকট অনেক দূর হবে। তাই এ প্রযুক্তি দেশের চারদিকে ছড়িয়ে দিতে পারলে একদিকে যেমন জমি চাষাবাদে পানির সংকট থেকে রক্ষা পাবে। অন্যদিকে লাভবান হবেন প্রান্তিক কৃষকরাও।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজাকির হোসেন রোডে ব্লক দিয়ে ওয়ানওয়ে, বেড়েছে দুর্ভোগ
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামসহ সারা দেশে প্যানেল আইনজীবী নিয়োগ দিচ্ছে দুদক