নগরীর আকবরশাহ থানাধীন সিটি গেট এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি কাভার্ডভ্যানের পেছনে পিকআপের ধাক্কায় ৫ মাছ ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো ৫ জন। নিহতদের মধ্যে তিনজন সীতাকুণ্ড উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নের ফৌজদারহাট জেলেপাড়ার বাসিন্দা। গতকাল সোমবার ভোর পৌনে ৫টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ও আহতরা সবাই মাছ ব্যবসায়ী। তারা ভোরে সীতাকুণ্ড থেকে পিকআপযোগে নগরের ফিশারিঘাটে মাছ আনতে যাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনায় দুমড়ে মুচড়ে যায় পিকআপটি।
নিহতরা হলেন ফৌজদারহাট জেলে পাড়ার বাসিন্দা হরিকমল দাশের ছেলে রনি দাস (৪০), একই এলাকার বালি দাসের ছেলে আকাশ দাস (২৬), কালাবাশি দাসের ছেলে অজিত দাস (৪০), সোনাইছড়ি ইউনিয়নের খোকন জলদাসের ছেলে জুয়েল জলদাস (১৮) ও পিকআপ চালক মৃত শহীদুল ইসলামের ছেলে মো. সোহাগ (৩০)। সবাই সীতাকুণ্ড এলাকার বাসিন্দা। এ দুর্ঘটনায় একই পাড়ার গুরুতর আহত অবস্থায় আরও পাঁচজন চমেক হাসপাতালে ভর্তি আছেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দুইজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে।
পুলিশ জানায়, পিকআপ ভ্যানটির সামনে তিনজন ও পেছনে সাতজন যাত্রী ছিলেন। নগরের সিটি গেইট এলাকায় এটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি কাভার্ডভ্যানের পেছনে ধাক্কা দেয়। এ সময় ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হন। পরে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ও আহতরা সবাই মাছ ব্যবসায়ী বলে জানা গেছে। এদের তিনজনের বাড়ি একই পাড়ায় (ফৌজদারহাটে জেলপাড়ার বাসিন্দা)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পিকআপ ভ্যানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কাভার্ডভ্যানের নিচে ঢুকে পড়ে। ফলে চালকসহ সামনে থাকা তিনজন ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯–এ ফোন করা হয়। এরপর ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ হতাহতদের উদ্ধার করে। সরেজমিনে নগরের সিটি গেইট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দুর্ঘটনায় দুমড়ে মুচড়ে গেছে পিকআপটি। দুর্ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। পুলিশ জানায়, গাড়িটি জব্দ করে থানা এরিয়ায় নিয়ে রাখা হবে।
আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের (এফএসসিডি) উপ–সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর হোসেন জানান, সিটি গেইট এলাকায় ভোর ৪টা ৫৫ মিনিটের দিকে মাছ ব্যবসায়ীদের বহনকারী একটি পিকআপ ভ্যান সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা একটি কাভার্ড ভ্যানটিকে পেছনে ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ভোর ৫টা ৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের আগ্রাবাদ ফায়ার স্টেশনের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা চালায়। এ ঘটনায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন দুজন–তিনজন।
নগরের আকবর শাহ থানার এসআই মো. সাজ্জাদ বলেন, ৯৯৯–এ ফোন পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। দুর্ঘটনায় নিহতদের লাশ পুলিশি হেফাজতে হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হাসপাতালে ছেলে জুয়েল দাসের লাশের খোঁজে এসে গোপাল দাস কান্নায় ভেঙে পড়েন। এসময় তার কাছ থেকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই কাঁদছেন আর বলছেন, আমার ছেলে জুয়েল মনসাপূজায় বন্ধুদের সঙ্গে বের হয়েছিল। বের হওয়ার সময় ১০০ টাকা নিয়ে গেছে। ছেলেকে দ্রুত ফিরতে বলেছিলাম। সকালে শুনি আমার ছেলে আর নেই।
তিনি বলেন, এখন সাগরে মাছ না পাওয়ার কারণে আমাদের পাড়ার কয়েকজন মিলে চট্টগ্রামের মাছের আড়ত ফিশারি ঘাট থেকে মাছ এনে বিক্রি করতে যাচ্ছিলেন। আমাদের পড়ার সবাই খুবই দরিদ্র। দিনের মাছ দিনে বিক্রি করে চলে। আমার ছেলেও তাদের সাথে যাচ্ছিল। আমার ছেলে আমাকে বলে যায়নি। ছেলেকে চিরদিনের মত হারিয়ে ফেললাম…বলতে বলতেই মুর্চ্ছা যাচ্ছিলেন তিনি।
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, মর্মান্তিক এ ঘটনায় আমরা সবাই শোকাহত। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছি। আসলে তাদের সান্তনা দেয়ার মতো কোন ভাষা আমার ছিল না।