অপচয় ও দুর্নীতি কমাতে হবে

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন কার্যক্রম উদ্বোধনে জ্বালানি উপদেষ্টা সিস্টেম লস কমবে, বাঁচবে সময়, বছরে সাশ্রয় হবে ২২৬ কোটি টাকা

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৭ আগস্ট, ২০২৫ at ৬:৩১ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহনের কার্যক্রম উদ্বোধন করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেছেন, সীমিত সম্পদের কথা মাথায় রেখে অপচয়, দুর্নীতি কমাতে হবে। কমাতে হবে দীর্ঘসূত্রতা। এগুলো প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে দেয়। উন্নয়নের পথে প্রকল্প ব্যয় বেশি হওয়াটা একটি বড় সমস্যা।

তিনি বলেন, যেকোনো ইনডিকেটর নেন, আমাদের সড়ক নির্মাণ ব্যয় দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বেশি। আরো বড় সমস্যা হচ্ছে প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেক বিলম্ব হয়। এই (পাইপলাইন) প্রকল্পটিও ২০১৮ সালে নিয়ে ২০২০ সালে সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল। করোনা, রাশিয়াইউক্রেন যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব ঘটলে অবশ্যই ব্যয় বাড়বে। বিশ্বব্যাপী ইকুইপমেন্টের দাম বাড়ে। গতকাল শনিবার সকালে নগরের পতেঙ্গায় ডেসপাস টার্মিনালে সুইচ টিপে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা পর্যন্ত ২৫০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করে জ্বালানি তেল নেয়া হচ্ছে। আগে যে তেল পরিবহনে অন্তত ৪৮ ঘণ্টা লাগত, এখন তা মাত্র ৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পৌঁছবে। এর মধ্যে বিশটি নদীর তলদেশ দিয়ে পাইপ নেয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ মেজর জেনারেল মু. হাসানউজজামান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আমিন উল আহসান। প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্যউপাত্ত তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন প্রকল্প পরিচালক কর্নেল সুলতান মাহমুদ। বক্তব্য রাখেন বিপিসির পরিচালক ড. এ কে এম আজাদুর রহমান।

উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন করা হবে। রাষ্ট্রের এ প্রকল্প প্রযুক্তিগত উন্নতির সঙ্গে সম্পর্কিত। মডার্ন বিশ্বের ভিত্তি টেকনোলজিক্যাল প্রগ্রেস। মনে রাখতে হবে আমাদের কিন্তু খুব একটা সম্পদ নেই। আমাদের কিছু প্রাকৃতিক গ্যাস ছিল, সেটা এখন ফুরিয়ে আসছে। মানবসম্পদ ছাড়া আমাদের উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ আর নেই। সেক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উন্নতি দিয়ে আমাদের এগোতে হবে। আমাদের সম্পদ এমনিতে কম, যা আছে সেটারও সুষ্ঠু ব্যবহার করতে পারছি না দুটি কারণে। একটি দুর্নীতি, আরেকটি অপচয়। যদি আমরা দুর্নীতি ও অপচয় কমাতে পারি, টেকনোলজিক্যাল প্রগ্রেস করতে পারি, তাহলে বিপুল জনসংখ্যার জন্য গ্রোথ এচিভমেন্ট সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, আগে পেট্রোলিয়াম প্রোডাক্ট আমদানি খাতে চারপাঁচজন বিড করতে পারত। আমরা এটা পরিবর্তন করেছি। ফলে এখন ১০১২টি প্রতিষ্ঠান বিড করে। আমরা বছরে ১৪০০১৫০০ কোটি টাকা সেভ করতে সক্ষম হয়েছি। এভাবে আমি যে তিনটি মন্ত্রণালয় দেখি সেখানে আমরা ৪৫ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করতে সক্ষম হয়েছি।

ফাওজুল কবির খান বলেন, আমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে অভিনন্দিত করতে চাই, দুরূহ প্রকল্পটি সমাপ্ত করেছে। আমি আশা করব সামনের প্রকল্পগুলোতে তারা প্রকল্প ব্যয় সাশ্রয়ী হবে এবং দ্রুততম সময়ে করবে। দ্রুততম সময়ে করলেই কিন্তু ব্যয় সাশ্রয়ী হবে। যেমন বলা হয়, কান টানলে মাথা আসে। এ প্রকল্পেরও তিনবার রিভিশন হয়েছে। এমন এমন প্রকল্প আছে ১৭ বছর, ১৮ বছর হয়ে গেছে। এখনো প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি। এ ধরনের প্রকল্প আর টেনে নেওয়া সম্ভব না। আমাদের যেকোনো প্রকল্পে নিজস্ব ভ্যালু এডিশন খুব কম। সামনের দিনে নিজস্ব ভ্যালু এডিশন বাড়াতে না পারলে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হব। দেখুন, আমাদের কত ইঞ্জিনিয়ার বেকার। নয়তো এমন কাজ করছে যেটা ইঞ্জিনিয়ারের কাজ নয়। এসব জিনিস নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। অন্য দেশের ঠিকাদারদের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে।

তিনি প্রশ্ন করেন, আর কতদিন আমরা চীন কিংবা ভারত থেকে লোক এনে আমাদের কাজ করাব? বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ৫৪ বছর ধরেই বিদেশিরা করে আসছে। অথচ আমাদের প্রকৌশলীরা কোনোদিন চেষ্টাও করেননি। এবার আমি তাদের করতে বললাম, তারা এখন একটি লাইন করছেন। নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। পাইপলাইন রক্ষণাবেক্ষণে গুরুত্ব দিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোনো সমস্যা হলে যাতে দ্রুত সমাধান করতে পারে।

প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা পর্যন্ত ২৪৯ দশমিক ৪২ কিলোমিটার পাইপলাইন তৈরি করা হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে গোদনাইল পর্যন্ত পাইপের ব্যাস ১৬ ইঞ্চি, গোদনাইল থেকে ফতুল্লা ১০ ইঞ্চি। ৯ কিলোমিটার পাইপলাইন গেছে নদীর ১৮ মিটার নিচ দিয়ে। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রতি ঘণ্টায় ৪ লাখ লিটার ডিজেল চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাঠানো যাবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নকালে মোট ২৭৮ দশমিক ৩ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।

বিপিসির কর্মকর্তারা জানান, ২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পাইপলাইনে নিয়মিত জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হলে তেল পরিবহন বাবদ বছরে সাশ্রয় হবে অন্তত ২২৬ কোটি টাকা। এই সাশ্রয়ের মাধ্যমে ১৬ বছরের মধ্যে পাইপলাইন নির্মাণের খরচ উঠে আসবে। পাইপলাইনটি দিয়ে কেবল ডিজেল পরিবাহিত হবে। পেট্রোলিয়াম ট্যাংকারে তেল পরিবহনের ফলে আগে লোডিং এবং আনলোডিং প্রক্রিয়ার সময় দুইবার সময় ব্যয় হতো। সিস্টেম লসের পাশাপাশি পরিবেশের ক্ষতি হতো। এখন থেকে পাইপলাইন ব্যবহারের ফলে সময় সাশ্রয়ের পাশাপাশি সিস্টেম লস একেবারে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। পরিবেশ দূষণ থাকবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রধানমন্ত্রী হলে থাকা যাবে না দলীয় প্রধানের পদে
পরবর্তী নিবন্ধবোয়ালখালীতে পুকুরে বিষ দিয়ে মাছ লুট