প্রতিদিন জমে ৫০ টন ময়লা,দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ পথচারীরা

দুই নম্বর গেট ভোগান্তি কমাতে এসটিএস নির্মাণের পরিকল্পনা মেয়রের

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১৬ আগস্ট, ২০২৫ at ৫:৩৯ পূর্বাহ্ণ

নগরের ৮ নম্বর শুলকবহর ওয়ার্ডের বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও হোটেলরেস্টুরেন্ট থেকে সংগৃহীত ময়লাআবর্জনা এনে রাখা হয় দুই নম্বর গেট মোড়ে রক্ষিত দুইটি কন্টেনার ও একটি ময়লাবাহী কম্পেক্টরে। যার পরিমাণ ৫০ টন (দৈনিক)। পরবর্তীতে কন্টেনারগুলো নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) আবর্জনাগারে। তবে কন্টেনার লোড বা পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত ময়লা আবর্জনাগারে নিয়ে যাওয়া হয় না। এতে ছড়ায় দুর্গন্ধ, অতিষ্ঠ হয়ে উঠে পথচারীরা।

এ অবস্থায় পথচারীদের ভোগান্তি কমাতে দুই নম্বর গেটে এসটিএস (সেকেন্ডারি ডাম্পিং স্টেশন) নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন আজাদীকে বলেন, এসটিএসএ ময়লা এমনভাবে সংরক্ষণ করা হয় যার দুর্গন্ধ বাইরে যাবে না। বাসাবাড়ি থেকে ময়লা এনে এসটিএসএ রাখা হবে। এরপর এসটিএস থেকে মূল বর্জ্যাগারে নেয়া হবে। চসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা (জোন) আবু তাহের ছিদ্দিকী আজাদীকে বলেন, আউট সোর্সিয়ের মাধ্যমে যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে তারা দুই নম্বর গেট মোড়ে থাকা দুুটি কন্টেনার ও একটি কম্পেটক্টরে ময়লা ফেলে। সেখান থেকে আবর্জনাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি বলেন, আগে ময়লা অপসারণে এখানে পে লোডার ব্যবহার করা হত। এতে নিচে ভেঙে গর্তের মত হয়ে যায়। সেখানে ময়লা জমে থাকলে দুর্গন্ধ হত। গত ১২ তারিখ সেটা আমরা ঘেরাও করে দিয়েছি। ভাঙাগুলো মেরামত করা হয়েছে। তাই সেখানে আর ময়লা পড়ে থাকে না।

এদিকে স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, দুই নম্বর গেট মোড় থেকে বহদ্দারহাট যাওয়ার পথে মূল সড়কের পাশেই দীর্ঘদিন ধরে জায়গা করে নেওয়া ডাস্টবিনগুলো পথচারীদের ভোগান্তির বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্ধারিত স্থানের বাইরে ছড়িয়ে থাকে পচা খাবার, প্লাস্টিক, পলিথিন ও অন্যান্য বর্জ্য। যা পথচারী ও যানবাহন চালকদের জন্য অসহনীয় পরিস্থিতি তৈরি করছে। বৃষ্টি হলে জমে যাওয়া নোংরা পানিতে ভাসতে থাকে এসব ময়লা। স্রোতের সাথে ছড়িয়ে পড়ছে শহরে নানা অলিগলি। এতে জনস্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে।পথচারীরা বলছেন, শহরের গুরুত্বপূর্ণ এই মোড় অতিক্রম করে প্রতিদিন পতেঙ্গা, ইপিজেড, কাস্টমস, আগ্রাবাদ, হালিশহরসহ বিভিন্ন রুটের কয়েক হাজার গাড়ি চলাচল করছে। এ ছাড়া ছোটবড় সিএনজি, শহরে চলাচলকারী বিভিন্ন রুটের টেম্পো, রিকশাও যাতায়াত করে। কখনো রাঙামাটি, কাপ্তাই এবং কঙবাজার রুটের বড় বাসগুলোকেও এই মোড় দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়। কন্টেনারের ময়লার দুর্গন্ধে যাত্রীদের নাক চেপে থাকতে হয়। আহমেদ করিম নামে এক দোকানদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বৃষ্টি হলে ময়লাগুলো পচে খুব বাজে গন্ধ হয়। দোকানে আসতে চায় না লোকজন। ইপিজেডের চাকরিজীবী সৈকত মাহমুদ বলেন, আমার বাসা মুরাদপুর। এই মোড়টি অতিক্রম করার সময় দম বন্ধ হয়ে আসে। সিটি কর্পোরেশনের লোকজন এখানে ময়লা ফেলছে। অনেকে রাত হলেই এখানে এসে ভ্যানগাড়িতে করে ময়লা ফেলে চলে যায়। শহরের মতো এমন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ময়লার ভাগাড় থেকে রেহাই নেই যেন আমাদের।

বহদ্দারহাট রুটের বাস চালক ইরফানুল হক বলেন, আমাদের চলাচলে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। এই রাস্তায় অনেক ছাত্রছাত্রী ও বৃদ্ধ মানুষ যাতায়াত করেন। রাস্তাটা সংকুচিত হয়ে গেছে, ময়লাগুলো একদম সড়কে চলে এসেছে। এক সারিতে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। নবম শ্রেণির ছাত্র শামীম জানান, ময়লার জন্য নিশ্বাস পর্যন্ত নেওয়া যায় না। দম বন্ধ করে কোনোমতে দুর্গন্ধের এলাকা পাড়ি দিই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যস্ত সড়কের পাশে খোলা ডাস্টবিন রাখা নগর ব্যবস্থাপনার একটি মারাত্মক ত্রুটি। তারা দ্রুত বর্জ্য অপসারণ ও আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয়রা চান, ডাস্টবিনগুলো যেন সড়কের মূল অংশ থেকে সরিয়ে আবাসিক এলাকা ও জনসমাগম থেকে দূরে স্থাপন করা হয় এবং নিয়মিত পরিষ্কার রাখা হয়।

এছাড়া ডাস্টবিনগুলোর দুই পাশেই রয়েছে অসংখ্য দোকানপাট, রেস্টুরেন্ট ও ঘনবসতিপূর্ণ লোকালয়। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দুর্গন্ধ ও নোংরা পরিবেশের কারণে ক্রেতারা অনেক সময় দোকানে আসতে অনীহা দেখান। রেস্টুরেন্ট মালিকদের মতে, খাবারের ব্যবসা হওয়া সত্ত্বেও পাশে জমে থাকা আবর্জনার কারণে তাদের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এলাকাবাসী বলেন, প্রতিদিন এই দুর্গন্ধ ও অপরিচ্ছন্ন রাস্তা পেরিয়ে চলাচল করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য।

স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে সড়কটিতে ময়লা ফেলছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। দিন যত যাচ্ছে, ময়লা ফেলার জায়গাটির আকার তত বড় হচ্ছে। কারণ ময়লার স্তূপের বিপরীত পাশেই বেশ কয়েকটি সরকারিবেসরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। এছাড়া কিছুদূর গেলেই ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশন। ময়লার দুর্গন্ধে সবচেয়ে বেশি নাকাল পথচারী ও স্থানীয়রাই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচন্দনাইশের পাহাড়ি অঞ্চলে এখন পেয়ারা আর পেয়ারা
পরবর্তী নিবন্ধখালেদা জিয়ার জন্মদিনে ফুল পাঠালেন ড. ইউনূস