ঋষিণ দস্তিদারের দুটি কবিতা

| শুক্রবার , ১৫ আগস্ট, ২০২৫ at ১০:৫২ পূর্বাহ্ণ

নরম মন্ডল

এই যে স্থির শহরটা চালচুলোহীন

নিজের ভেতরেই দন্ডী কেটে ঘুরপাকে মত্ত

কোথাও যেতে চাইছে না বহুদিন ধরে

যখন, মাথার উপরে একদিন

পরিকল্পিত মেঘমন্ডল মোষরঙা

একটা হুলস্থুল ঝড়ঝঞ্ঝা দারুণ বৃষ্টি

অন্ধকার হয়ে ভীষণ নেমে পড়েছে হুটহাট

চৌমাথায় স্টেশনারির শেডে আমি

ঠিকই বেকায়দায়, দাঁড়িয়ে আছি জবুথবু

ঝাপসা চশমা দেখছে দোকানির উদাসীন মুখ

আশেপাশে শরণার্থীসব্জিওয়ালা ভিখারির

লঘুতর কথাবার্তার ভেতরে এঁকেবেঁকে

বিপুল ছাঁট মিলিয়ে যাচ্ছে ধোঁয়ার বেশে

বিবেচনা ছাড়াই যখন আকাশের ভ্রুকুটি

আর অসময়ের এক দুর্যোগ আমায়

চুপসে দিচ্ছে, আরো কোণঠাসা করছে

মনে পড়ল, জানালার পাশে রাখা খাতা

ভিজে মন্ড, অক্ষর গলে পড়ছে কার্ণিশে

এমন বেঁচে থাকার দিকে হাওয়ার বিদ্রুপ

ছুটে আসছে যেন পর পর

ভাবছি, ছাতা জীবন সামলাতে পারে কিনা?

তখন, জলজমা রাস্তায় ঘরঘরে যন্ত্রযান

নীল আগুন ঝলসায় শব্দে

আর নরম মন্ডল ডেকে বলছেন : শুনুন,

ভেতরে এসে দাঁড়ান, কিছু লাগবে কি ?

এই যে আমার কার্ডআর মনে রাখবেন

যেকোনো অনুষ্ঠানে গানবাজনা পরিবেশন

করে থাকিএকদম ভাববেন না।

 

সকাল থেকে

বর্ষায় ভালো থাকা বাগান আর

খারাপ দিনকালের ভেতর দিয়ে

এমন হাওয়া বয়ে আসছে একনাগাড়ে।

জানালার নিচে বোকা কৃষ্ণচূড়া

দূরে আবছায়া জাহাজ মাস্তুল

পর্দা ফুলে উঠছে পালের মতো

মনে হলো, এই নীরব ঝিরিঝিরি দমক

উড়ে আসা ভেজা অধ্যবসায়

এসবই নদীর সাধ্য, গৌণধর্ম

এদিকে অনেকক্ষণ বকাঝকার শেষে আয়না

তখন : যা ইচ্ছা কর; আর কিছুই বলব না

সুঁইসুতো হাতে দৃষ্টিহীন বালক বসে আছে

সেই সকাল থেকে, আর বোতামটাও খুঁজে

পাওয়া গেল না এই অবধি

তবে আনাড়ি আয়োজন তো চাই

তীক্ষ্ম ছোট ফলা হাতে রঙিন সুতো আর

অনুজ্জ্বল আলোয় চুপচাপ স্থৈর্য্যপ্রতিমা

সেই সকাল থেকেএই ভালো থাকা

আর নাথাকার মধ্যিখানে বিরতিহীন

ঠান্ডা হাওয়ার ভাষায় মেঘের কুশলসংবাদ

জানাচ্ছে কর্ণফুলি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজুম’আর খুতবা
পরবর্তী নিবন্ধশামসুর রাহমানকে লেখা আল মাহমুদের দুর্লভ চিঠি