২০২৫ সালের ২ জুন তারিখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ডঃ সালেহউদ্দিন ২০২৫–২৬ অর্থ–বছরের বাজেট ঘোষণার সময় স্বৈরশাসক হাসিনা সরকার ভুয়া পরিসংখ্যান উপস্থাপনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি সম্পর্কে যে ফুলানো–ফাঁপানো চিত্র উপস্থাপন করার দুঃখজনক ঐতিহ্য সৃষ্টি করেছিল সেটাকে সংশোধনের সাহসী প্রয়াস নিয়েছেন। ২০০৯–১০ অর্থ–বছর থেকে শুরু করে ২০২৪–২৫ অর্থ–বছর পর্যন্ত উপস্থাপিত প্রতিটি বাজেটে প্রায় প্রত্যেকটি সামষ্টিক পরিসংখ্যানকে (macro statistics) ‘অবিশ্বাস্য ডক্টরিং’ এর শিকারে পরিণত করেছিলেন হাসিনার ২০০৯–১৮ মেয়াদের পরিকল্পনা মন্ত্রী ও ২০১৯–২৪ মেয়াদের অর্থমন্ত্রী লোটাস কামাল। এর জন্য তিনি চালু করেছিলেন অর্থনীতির প্রায় সকল সামষ্টিক পরিসংখ্যানকে (macro statistics) ‘অবিশ্বাস্য রাজনৈতিক ডক্টরিং’ করার একটি সর্বনাশা ব্যবস্থা। এই সাড়ে পনেরো বছরের একটিও গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যানের নাম করা যাবে না যেটা হাসিনার সরকার কর্তৃক বিকৃত করা হয়নি। আইএমএফ, বিশ্ব ব্যাংক, জাতিসংঘ ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এদেশের অনেক পরিসংখ্যানকে গ্রহণযোগ্য মনে না করলেও বিকল্প তথ্য–উপাত্তের সূত্রের অভাবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিক্স বা বিবিএস) পরিসংখ্যানকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। ফলে, দেশে–বিদেশে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিষয়ে একটা কৃত্রিম–উচ্চাশা সৃষ্টি হয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট স্বৈরশাসক হাসিনার পতনের পর গত এক বছরে অর্থনীতির প্রকৃত চিত্রটা ফুটে উঠেছে, যেগুলোর মাধ্যমে হাসিনা সরকারের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংক্রান্ত মিথ্যা বয়ান উন্মোচিত হয়ে চলেছে। ঐসব ভুয়া–পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে পরবর্তী অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলীর উপস্থাপিত ২০২৪–২৫ অর্থ–বছরের বাজেটও যেহেতু নির্মীত হয়েছে তাই ভুয়া–পরিসংখ্যানের দৌরাত্ম্য থেকে ঐ বাজেটও পরিত্রাণ পায়নি। ২০২৫–২৬ অর্থ–বছরের বাজেট উপস্থাপন করতে গিয়ে ডঃ সালেহউদ্দিন অনেকগুলো তিক্ত বাস্তবতার সম্মুখীন হেেয়ছেন:
১) ২০২৪–২৫ অর্থ–বছরের বাজেট উপস্থাপনের সময় দেশের মোট জিডিপি’র পরিমাণ যা বলা হয়েছিল তার চাইতে ২০২৫–২৬ অর্থ–বছরের বাজেটে জিডিপি’র পরিমাণকে কমিয়ে দেখাতে হয়েছে। এই নূতন হিসাব অনুযায়ী ২০২৫ সালের জুনে দেশের মোট জিডিপি প্রাক্কলিত হয়েছে ৪৬২ বিলিয়ন ডলার, যা হাসিনা সরকারের আগের বছরের প্রাক্কলন থেকে কম ছিল।
২) দেশের জনগণের মাথাপিছু জিএনআই নির্ধারিত হয়েছে ২৮২০ ডলার, অথচ হাসিনা সরকারের উপস্থাপিত ২০২৪–২৫ অর্থ–বছরের বাজেটে তা বেশি দেখানো হয়েছিল। হাসিনা সরকার মাথাপিছু জিএনআই বাড়িয়ে দেখানোর জন্য মোট জিডিপির পরিমাণকে মারাত্মকভাবে ফাঁপিয়ে দেখাতো এবং জনসংখ্যাকে কমিয়ে দেখাতো। এই দুটো গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যান ন্যক্কারজনক ‘ডক্টরিং’ এর শিকার হওয়ায় অর্থনীতির প্রকৃত স্বাস্থ্য সম্পর্কে দেশে–বিদেশে মারাত্মক ভুল–ধারণার সৃষ্টি হয়েছিল। বলা হচ্ছিল যে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম উচ্চ–প্রবৃদ্ধির দেশে পরিণত হয়েছে। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের তিন তিনটি একতরফা ভোটের প্রহসনকে জনগণের দৃষ্টির আড়ালে নিয়ে যাওয়ার হাতিয়ার হিসেবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের এহেন ভুয়া–দাবি অপব্যবহৃত হয়েছে হাসিনার স্বৈরশাসনের পুরো মেয়াদে। কিন্তু, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ঐতিহাসিক গণ–অভ্যুত্থান প্রমাণ করে দিয়েছে এই প্রতারণা শেষ পর্যন্ত হাসিনার কোন কাজে আসেনি।
৩) গত ২০২৪–২৫ অর্থ–বছরে জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির হার প্রাক্কলিত হয়েছে ৩.৯৭ শতাংশ, অথচ ২০২৪–২৫ অর্থ–বছরের বাজেট উপস্থাপনের সময় বলা হয়েছিল ২০২৪–২৫ অর্থ–বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার হবে ৬ শতাংশ। বলা বাহুল্য, ঐ উচ্চাশা বাস্তবসম্মত ছিল না। অবশ্য, ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টের গণ–অভ্যুত্থানের টালমাটাল দিনগুলোতে এবং পরবর্তী নয় মাসের বিপর্যস্ত অর্থনীতির পালা–পরিবর্তনের ধকলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াটা মোটেও অস্বাভাবিক নয়। সেদিক্ থেকে বিবেচনা করলে ৩.৯৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি একেবারে ফেল্না বলা যাবে না। এই প্রবৃদ্ধির হারকে আগামী ২০২৫–২৬ অর্থ–বছরে ৫.৫ শতাংশে উন্নীত করার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে অর্থ–উপদেষ্টার বাজেট বক্তৃতায়।
৪) বিগত স্বৈরশাসকের শাসনের শেষের দু’বছর ধরে সরকারের ভাষ্য মোতাবেক দেশের মূল্যস্ফীতির হার মারাত্মকভাবে বেড়ে ১১ শতাংশ অতিক্রম করেছিল। প্রকৃতপক্ষে মূল্যস্ফীতির হার প্রায় ১৪ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল বলে বেশ কয়েকজন অর্থনীতিবিদ মতপ্রকাশ করেছিলেন। সেখান থেকে ২০২৫ সালের আগস্টে মূল্যস্ফীতির হারকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ৮.৫৫ শতাংশে নামিয়ে ফেলেছে, যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। আগামী বছরের জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতির হারকে ৬.৫ শতাংশে টেনে নামানোর লক্ষ্য ঘোষণা করা হয়েছে বাজেট বক্তৃতায়। অনেক বিশ্লেষক এই লক্ষ্যকে উচ্চাভিলাষী আখ্যা দিলেও আমি এটাকে অর্জনযোগ্য বিবেচনা করছি।
৫) স্বৈরশাসক হাসিনা সরকার–ঘোষিত ২০২৪–২৫ অর্থ–বছরের প্রাক্কলিত বাজেট–বরাদ্দ ধরা হয়েছিল ৭,৯৭,০০০ কোটি টাকা। প্রকৃতপক্ষে ঐ প্রস্তাবিত বাজেট–বরাদ্দ অর্জিত হবে না বলে বাজেট ঘোষণার পর থেকেই ধারণা করা হয়েছিল। এবারের বাজেট বক্তৃতায় ঘোষিত ২০২৪–২৫ অর্থ–বছরের সংশোধিত ও সম্পূরক বাজেটে ব্যয়–বরাদ্দ প্রাক্কলিত হয়েছে ৭,৪৪,০০০ কোটি টাকা। আর, ২০২৫–২৬ অর্থ–বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বাজেট–বরাদ্দ প্রাক্কলন করা হয়েছে ৭,৯০,০০০ কোটি টাকা। অনেক বিশ্লেষক বলতে চান, এটা গত বছরের ঘোষিত বাজেট–বরাদ্দ থেকে ৭,০০০ কোটি টাকা কম। এমনকি বলা হচ্ছে, পরবর্তী বছরের বাজেটকে আগের বছরের চাইতে কমিয়ে ফেলা সংকোচনমূলক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক। আমি তা মনে করি না। বরং অমি মনে করি, পরিসংখ্যানের ‘ইচ্ছাকৃত ডক্টরিং’ পরিহার করার সাহসী দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়েছে এই পরিসংখ্যানগত সংশোধন প্রকাশের মাধ্যমে। ২০২৪–২৫ অর্থ–বছরের সম্পুরক বাজেটের চাইতে ৪৬,০০০ কোটি টাকা বেশি প্রস্তাব করা হয়েছে ২০২৫–২৬ সালের বাজেটে, যা অর্থনীতির বর্তমান স্থবিরতা ও বাস্তবতার প্রশংসনীয় স্বীকারোক্তি। আমি খুবই খুশি হবো যদি ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে সত্যিসত্যিই ঘোষিত বাজেট–বরাদ্দ বাস্তবায়িত হয়। ভুয়া বাজেট–বরাদ্দ ঘোষণার দীর্ঘদিনের ‘কালচার’ থেকে জাতি হয়তো মুক্তি পেতে চলেছে এবার!
৬) আগামী ২০২৫–২৬ অর্থ–বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার প্রাক্কলিত হয়েছে ২,৩০,০০০ কোটি টাকা। মনে হতে পারে যে এখানেও সংকোচনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ব্যাপকভাবে অপব্যবহৃত হতো ক্ষমতাসীন দল বা জোটের নেতা–কর্মীদের লুটপাটের খাই মেটানোর জন্য।
অর্থ উপদেষ্টার বাজেট বক্তৃতায় সরকারের বিভিন্ন তথ্য–উপাত্তের উপর্যুক্ত সংশোধনীগুলো আনা হলেও ওগুলোর সূত্র জানানো হয়নি। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, ভবিষ্যতে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক সরকার কর্তৃক পরিসংখ্যানের ‘রাজনৈতিক ডক্টরিং’ স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হলে অপরিহার্য পদক্ষেপ হলো অবিলম্বে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে একটি স্বাধীন পরিসংখ্যান কমিশনে রূপান্তরিত করে তার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের পরিবর্তে রাষ্ট্রপতির কাছে (কিংবা স্বাধীন বিশেষজ্ঞ কমিটির কাছে) অর্পণের ব্যবস্থা করা। দলীয় প্রধানমন্ত্রীর অধীনে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একটি শাখা হিসেবে ভবিষ্যতেও যদ্দিন ‘বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো’ (বিবিএস) চালু থাকবে তদ্দিন ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক প্রয়োজনে বিভিন্ন তথ্য–উপাত্ত ‘ম্যানিপুলেশনের কালচার’ থেকে বিবিএস এর মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললে অত্যুক্তি হবে না। স্বাধীন বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ডক্টরিং শুরু হয়েছিল ১৯৭৬ সাল থেকে, এরপর থেকে প্রতিটি সরকার কমবেশি এই অপকর্মটি করেছে । ১৯৮৩ সালে তৃতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার ‘প্যানেল অব ইকনমিস্টস’ এর সদস্য হিসেবে আমাকে এহেন ম্যানিপুলেশন নিয়ে তৎকালীন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শাহাদতউল্লাহর সাথে উত্তপ্ত তর্ক করতে হয়েছিল। আবার, ১৯৯৮ সালে তদানীন্তন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ডঃ মহিউদ্দিন খান আলমগীরের সাথেও এক সেমিনারে ‘ডাটা ম্যানিপুলেশন’ নিয়ে তর্কে জড়াতে হয়েছিল। বিভিন্ন বিএনপি সরকারের সময় পরিসংখ্যানকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য ম্যানিপুলেট করা হতো বলে পরিকল্পনা কমিশনে কর্মরত আমার ছাত্ররা আমাকে প্রায়ই সাবধান করে দিত। কিন্তু, লোটাস কামাল পরিকল্পনা মন্ত্রী হওয়ার পর এহেন ডাটা–ডক্টরিং খোলামেলা ব্যাপারে পরিণত হয়েছিল।
খুশির খবর হলো, বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে বের করে নিয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে স্বাধীন কমিশনে রূপান্তরিত করার প্রয়োজনীয়তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর জনাব আবদুল মুঈদ চৌধুরীর নেতৃত্বে যে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করেছিল তাদের যে ১৮টি সুপারিশকে সরকার দ্রুত বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে ‘বাংলাদেশ পরিসংখ্যান কমিশনে’ রূপান্তর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই সুপারিশ বাস্তবায়ন কতটুকু এগিয়েছে তা এখনো বোঝা যাচ্ছে না। বরং, এরপর সরকার ২৮ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে ‘বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক উৎপাদিত পরিসংখ্যানের গুণগতমান, স্বচ্ছতা ও প্রাপ্যতা পর্যালোচনা করে প্রতিষ্ঠানটিকে শক্তিশালীকরণের নিমিত্ত সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সাথে আলোচনাপূর্বক সুনির্দিষ্ট ও বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশ প্রণয়নের জন্য’ ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ টাস্কফোর্স গঠন করেছে। টাস্কফোর্সের সভাপতি ও অন্য সদস্যদের যোগ্যতা সম্পর্কে আমাদের কোন আপত্তি নেই। উক্ত টাস্কফোর্স ৯০ দিনের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তারা আরো ৩০দিন সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলো, উক্ত টাস্কফোর্সের ‘টার্মস অব রেফারেন্সে’ সুনির্দিষ্টভাবে যদি ‘বাংলাদেশ পরিসংখ্যান কমিশন’ গঠনের মাধ্যমে তাদের সুপারিশ প্রণয়নের ব্যাপারটি উল্লিখিত হতো তাহলে বিষয়টি নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ থাকতো না।
ওয়াকিবহাল মহলের অজানা নয় যে ইংরেজিতে একটি বহুল–প্রচলিত বচনে তিন ধরনের মিথ্যার কথা বলা হয়ে থাকে, ‘মিথ্যা, নির্জলা মিথ্যা এবং পরিসংখ্যান’ (lies, white lies and statistics)। আমাদের সমাজেও পরিসংখ্যানের বিশ্বাসযোগ্যতাকে খাটো করতে বলা হয়,‘কাজীর গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই’। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সংগৃহীত পরিসংখ্যানকে বিশ্বাসযোগ্য করা অত্যন্ত কঠিন ও ব্যয়সাধ্য চ্যালেঞ্জ, যেজন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পরিসংখ্যান–সংগ্রহ ব্যবস্থাকে বিশ্বাসযোগ্য করার পথে সক্ষমতার ঘাটতি কম–বেশি সব দেশেই বিদ্যমান। উন্নত–শিল্পায়িত দেশে এই ব্যাপারটি সরকারী–নিয়ন্ত্রণের বাইরে রাখার ব্যবস্থাকে অত্যন্ত গুরুত্ব প্রদান করা হয়ে থাকে। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্যুরো অব লেবার স্ট্যাটিস্টিক্স এর চেয়ারম্যানকে অকারণে বরখাস্ত করায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বলা হচ্ছে, স্বাধীনভাবে কাজ করার অপরাধে ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকেও তিনি পদত্যাগ করার জন্য অহেতুক চাপ প্রয়োগ করে চলেছেন। ‘মোনেটারি পলিসি’ নির্ধারণে ফেডারেল রিজার্ভ শুধু তথ্য–উপাত্তের ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা বজায় রেখে চলেছে, প্রেসিডেন্টের খামখেয়ালিপনার ধার ধারে না। ইতোমধ্যেই ফেডারেল রিজার্ভে ট্রাম্প তাঁর খয়েরখাঁ একজনকে সদস্য মনোনীত করেছেন। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে পাওয়েলও পদত্যাগ করবেন। তার মানে, খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও পরিসংখ্যান ম্যানিপুলেশনের জন্য রাজনৈতিক চাপ–প্রয়োগ এড়ানো কঠিন বিষয়। আমাদের দেশে স্বাধীন পরিসংখ্যান কমিশন গঠন করলেই দেশের সামষ্টিক তথ্য–উপাত্তগুলোর ত্রুটি দূর হয়ে যাবে আশা করা দুরাশা হবে। তবে, এদেশে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য হাসিনা–সরকার যেভাবে পুরো পরিসংখ্যান ব্যুরোকে ‘অবিশ্বাস্য রাজনৈতিক ডক্টরিং’ এর সূতিকাগারে পরিণত করেছিলের সেখান থেকে মুক্তির পথটা খুলে যাবে নিংসন্দেহে। সেজন্যই আমি স্বাধীন পরিসংখ্যান কমিশন গঠনকে সময়ের অন্যতম অপরিহার্য প্রয়োজন অভিহিত করেছি।