বাড়ছে চাল-ডাল ও ডিম-পেঁয়াজের দাম

সংসার চালাতে মধ্যবিত্তের হিমশিম

জাহেদুল কবির | বুধবার , ১৩ আগস্ট, ২০২৫ at ৫:২৪ পূর্বাহ্ণ

সবজিসহ নিত্যপণ্যের দামের উর্ধ্বগতিতে নাকাল হয়ে পড়ছেন মধ্যবিত্ত শ্রেণী। খরচ কমাতে অনেকে পরিবারের সদস্যদের গ্রামে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। আয়ের সাথে ব্যয়ের ব্যবধানে দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় সংসার চালাতে নাভিশ্বাস উঠেছে অধিকাংশের। অন্যদিকে নিম্নবিত্ত শ্রেণীর কান্না দেখার যেন কেউ নেই। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মশুর ডাল, ডিম ও পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। এক ডজন ডিম কিনতে এখন খরচ হচ্ছে ১৫০ টাকা। অন্যদিকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ কিনতে খরচ হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা পর্যন্ত। বাজারে ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। এছাড়া ঘর ভাড়া, ছেলে মেয়েদের পড়ালেখার খরচ এবং ওষুধ খরচ তো আছেই। কাজীর দেউরি মোড়ে কথা হয় দিনমজুর হোসেন আলীর সাথে। তিনি জানান, ঘরে বউ বাচ্চাসহ ৭ জনের সংসার। এখন আয় কমে গেছে। এরমধ্যে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। নিজে একবেলা কম খেয়ে হলেও বাচ্চাদের খাওয়াতে হচ্ছে।

আনিসুল ইসলাম নামের একজন বেসরকারি চাকরিজীবী জানান, সর্বসাকুল্যে বেতন পাই ২৫ হাজার টাকা। বাসা ভাড়া ও গ্যাসবিদ্যুৎ বিল পরিশোধেই বেতনের অর্ধেকের বেশি টাকা খরচ হয়ে যায়। বাকি টাকা দিয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে আত্মীয় স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে ধারদেনা করে চলতে হচ্ছে। এখন আবার সবার খরচ বাড়ছে, ধারদেনা পাওয়াটাও কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

বেসরকারি স্কুল শিক্ষক খোরশেদুল আলম বলেন, স্কুল থেকে যে বেতন পাই, এতে সংসার চলে না। তাই বাধ্য হয়ে টিউশন করতে হয়। তারপরেও যে আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। ৫০৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। এদিকে খুচরা বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বর্তমানে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকায়, পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়, চীনা রসুন ১৪০ টাকা, আদা ২৪০ টাকা, সয়াবিন তেল এক লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৮৮ টাকা। এছাড়া বাজারে মোটা সিদ্ধ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়, আতপ চাল বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৬০ থেকে ৯০ টাকায়। এছাড়া সিদ্ধ চালের মধ্যে পাইজাম সিদ্ধ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়, মিনিকেট সিদ্ধ ৭০ টাকা, নাজিরশাইল সিদ্ধ ৯০ টাকা এবং জিরাশাইল সিদ্ধ বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকায়।

অপরদিকে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়। এছাড়া পাঙ্গাস মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা এবং রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম আগের চেয়ে কমেছে। তবে আমাদের দেশে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমদানির খরচ বেড়ে গেছে। কোনো ব্যবসায়ী তো আর লোকসান দিয়ে ব্যবসা করবে না। অপরদিকে খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিমত, পাইকারদের থেকে একটা নির্দিষ্ট মুনাফায় খুচরা ব্যবসায়ীরা পণ্য কিনে। বর্তমানে দোকান ভাড়া, গ্যাস বিদ্যুৎ খরচ বেড়েছে। আমাদের অতি মুনাফা করার সুযোগ নেই। তবে ভোক্তাদের দাবি, সরকার শুধুমাত্র রমজান এলেই বাজার মনিটরিং করে। মনিটরিংয়ের অভাবে ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ইচ্ছে মতো বাড়ায়। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানান তারা।

সাধারণ মানুষের অভিমত, দেশের চাকরি বাজারে এখনো বেশিরভাগ মানুষের বেতনসীমা ১৫ থেকে ২৫ হাজারের ঘরে। আজ থেকে ৫ বছর আগে সেই টাকায় মোটামুটি সংসারের ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব ছিল। এখন এই সময়ের ব্যবধানে প্রত্যেক পণ্যের দামই দ্বিগুণ কিংবা ক্ষেত্র বিশেষে দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে গেছে। নিত্যপণ্যের সাথে বাসা ভাড়া, সন্তানের পড়াশুনোর খরচ, যাতায়াত ও চিকিৎসার খরচ মেটাতে মাসের প্রথম সপ্তাহে ৯০ শতাংশ টাকা শেষ। বাকি সময়টা আত্মীয় স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে ধারদেনা করে করে চলতে হচ্ছে মধ্যবিত্তশ্রেণীর।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় টেক্সি ট্রাকের নিচে
পরবর্তী নিবন্ধবেড়েছে ভোটার, বাড়তে পারে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যাও