নগরের সড়ক সংস্কার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে

| সোমবার , ১১ আগস্ট, ২০২৫ at ৬:১৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম নগরের অনেকগুলো সড়ক এখন বিধ্বস্ত। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে বেহাল হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম নগরের কিছু সড়ক। চলাচলে দুর্ঘটনার ঝুঁকির পাশাপাশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে চালক ও যাত্রীদের। যানবাহন চলাচল দূরে থাক, হাঁটাচলাও দায় হয়ে পড়েছে। গত ৯ আগস্ট দৈনিক আজাদীতে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। যদিও এতে কেবল অক্সিজেনকুয়াইশ সড়কের বর্ণনা আছে। শুধু অক্সিজেনকুয়াইশ সড়ক নয়, নগরের অধিকাংশ সড়ক ক্ষতবিক্ষত। আজাদীর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উঠে গেছে সলিং। নেই ইটের অস্তিত্বও। সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। সেখানে আবার জমে আছে পানি। নগরের অক্সিজেনকুয়াইশ সড়কের একটি অংশে এ দৃশ্য দেখা গেছে। আরেকটু স্পষ্ট করলে, সড়কটির কুয়াইশমুখী অংশের পাশে রয়েছে ফ্রোবেল একাডেমি। এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিপরীতে (অক্সিজেনমুখী অংশ) অল্প আসতেই সড়কটির এ বেহাল দশা চোখে পড়ে। শুধু অংশটি নয়; পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির বেশিরভাগ অংশই ভাঙাচোরা। যেখানে সলিং ও ইট ওঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য ছোটবড় গর্ত। এতে দুর্ভোগে আছেন ওই সড়কের ওপর নির্ভরশীল স্থানীয় বাসিন্দা, পথচারী এবং বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা।

নগরের আরেকটি সড়ক স্ট্র্যান্ড রোড। নগরের সদরঘাট থেকে শুরু হয়ে এই সড়ক মিলিত হয়েছে বারিক বিল্ডিং মোড়ে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, দেড় কিলোমিটারের কম দৈর্ঘ্যের এই সড়কটি পণ্য পরিবহনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই সড়কের পাশেই রয়েছে কর্ণফুলী নদী। আর নদীতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ছোটবড় ২২টি ঘাট রয়েছে। এসব ঘাট থেকে লোহার স্ক্র্যাপ, ভোগ্যপণ্য ও সিমেন্টের ক্লিংকারসহ বিভিন্ন পণ্য খালাস করা হয়। আর এসব পণ্য গাড়ির মাধ্যমে স্ট্র্যান্ড রোড হয়ে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছে যায়। পণ্য পরিবহনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের অবস্থা এখন বেহাল। সড়কজুড়ে ছোটবড় খানাখন্দ। কিছু কিছু অংশে গর্তের আকার এমন বড় হয়েছে, তা দিয়ে গাড়ি চালানো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। মাঝেমধ্যে গাড়ি উল্টে যায় গর্তগুলোতে পড়ে। সড়কের কোথাও কোথাও উঁচুনিচু ঢেউয়ের আকৃতি নিয়েছে।

শুধু স্ট্র্যান্ড রোড নয়, চট্টগ্রাম নগরের অন্তত ৩০ থেকে ৩৫টি সড়ক এখন বেহাল। এর মধ্যে নগরের প্রধান সড়ক যেমন রয়েছে, তেমনি অলিগলির সড়কও রয়েছে। সড়কগুলো যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ভাঙা সড়কের গাড়ি চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে যানজটের সমস্যায় ভুগছেন চালক ও যাত্রীরা। আবার কিছু কিছু সড়কের এমন খারাপ অবস্থা, তাতে হেঁটে চলাচল করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

অবশ্য চট্টগ্রাম নগরীর ভাঙা ও ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক দ্রুত সংস্কারের নির্দেশ দিয়েছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। ভারী বর্ষণ ও বিভিন্ন সেবা সংস্থার প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এসব সড়ক নগরবাসীর দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, এই সড়কগুলো দ্রুত সংস্কার করতে হবে। জনদুর্ভোগ যেন আর না বাড়ে। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল বিভাগকে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করতে হবে। তিনি বলেন, নগরবাসীকে ভোগান্তি থেকে মুক্তি দিতে আমরা দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেব। সড়ক সংস্কার কাজে গাফিলতি বরদাশত করা হবে না। জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত এবং মানসম্মত কাজ নিশ্চিত করতে হবে। যেসব ঠিকাদার ঠিকমতো কাজ করছেন না, তাদের ওয়ার্ক অর্ডার বাতিল করুন। কোনো প্রকৌশলী দায়িত্বে ফাঁকি দিলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিন। যদি লোকবল ঘাটতি থাকে, তবে নতুন নিয়োগের ব্যবস্থা করুন এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনে দ্রুত সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করুন। মেয়র আরও বলেন, সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারে ব্যবহৃত বিটুমিনসহ সকল নির্মাণ সামগ্রীর গুণগত মান নিশ্চিত করতে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করাতে হবে। কোনো ঠিকাদার যদি চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে নিম্নমানের মালামাল সরবরাহ করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে মামলা করুন। কাজের মান বজায় রাখতে কোনো প্রকার আপস করা যাবে না।

আসলে সড়ক সংস্কার কাজ দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করতে হবে। নগরবাসীর দুর্ভোগ কমাতে মানসম্মত ও টেকসই সংস্কার নিশ্চিত করা হবে। সিটি মেয়র যেভাবে নগর উন্নয়নে আন্তরিক, ঠিক সেভাবে বিধ্বস্ত সড়কের সংস্কার কাজেও তাঁর দৃঢ়তা দরকার। তাহলে নগরবাসী ভোড়ান্তি থেকে রেহাই পাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে