সংস্কার নিশ্চিত করে নির্বাচন আয়োজনের দাবি আবারও তুলে ধরে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনও সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুকূল নয়। ভোটের পূর্বশর্ত ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি করতে হবে।
গতকাল রোববার বিকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে জামায়াতের প্রতিনিধি দলের বৈঠক শেষে একথা বলেন তিনি। বৈঠকে নিজের সংসদীয় এলাকা কুমিল্লা ১১ এর প্রস্তাবিত সীমানা নিয়ে আপত্তির কথাও তুলে ধরেছেন জামায়াতের এই নেতা।
ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানার খসড়া প্রকাশ করেছে ইসি। এ নিয়ে দাবি আপত্তি জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল গতকাল রোববার। খবর বিডিনিউজের।
সিইসির সঙ্গে বৈঠকে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনও অনুকূল নয় বলেও দলের অবস্থান তুলে ধরার কথা বলেছেন নায়েবে আমির। তিনি ভোটের আগে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরির আহ্বান জানান। বলেন, খেলার মাঠটা সমান হতে হবে। কারণটা উঁচা–নিচা, এটা হবে না। সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে প্রশাসনসহ সবখানে দক্ষ, নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগের দাবিও করেছেন জামায়াতের এই নেতা।
কুমিল্লা–১১ আসনের প্রস্তাবিত সীমানা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে তা আগের মত রাখার দাবি করার কথা তুলে ধরে নায়েবে আমির বলেন, সে বিষয় নিয়ে আজকে কথা বলতে এসেছি সিইসির সাথে। শুনানি করে নিষ্পত্তি করা হবে বলে জানান সিইসি, এটা খসড়া হয়েছে। আমরা আগের মতো চেয়েছি, যাতে কোনো পরিবর্তন না হয়।
তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবে আলাপকালে দেশের কথা, নির্বাচনের কথা উঠে এসেছে। আমরা বলেছি জামায়াতে ইসলামী সবসময় নির্বাচনের পক্ষে। ফেব্রুয়ারি মাসে যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে সেই তারিখের ব্যাপারে জামায়াতের মৌলিক কোনো আপত্তি নেই।
আব্দুল্লাহ তাহেরের ভাষ্য, কারণ আমরা আগে থেকেই বলছিলাম যে নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হতে পারে, এপ্রিলে হইতে পারে। পরে আমাদের আমির আরেকটা সভায় বলেছিলেন যেটা রোজার আগে হলেই ভালো হয়। আমরা কখনো ডিক্টেট করতে চাইনি। কিন্তু আমরা আমাদের জাতির পক্ষ থেকে উত্তম যেটি প্রস্তাব সেটি দিতে চেয়েছি। সুতরাং ফেব্রুয়ারি ফার্স্ট উইকে নির্বাচন হবে। এখানে আমাদের কোনো আপত্তি নেই এবং জামায়াতে ইসলামী সেই নির্বাচনের তারিখকে আমরা ওয়েলকাম করেছি। আমরা ইতিবাচক বলেছি। তিনি বলেন, অতীতে গণতান্ত্রিক সরকার দলসহ অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে। এবার অন্তর্বর্তী সরকার আগে একটু আলাপ–আলোচনা করলে সেটা সকলের নিজস্বতার বহিঃপ্রকাশের একটা সুযোগ ছিল। এটা আমাদের একটা পর্যবেক্ষণ। দুই নম্বর পর্যবেক্ষণ হচ্ছে নির্বাচনের তারিখ বা মাস নির্ধারিত হয়েছে। ইসি চূড়ান্ত তারিখ ঘোষণা করবে। যেটা উনারা বলেছেন ডিসেম্বরে ঘোষণা করবেন। কিন্তু নির্বাচনের জন্য তো সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি সেটা হচ্ছে একটা বিশ্বাসযোগ্য, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। এটাই গণতন্ত্রের দাবি। এদেশের মানুষের দাবি। তার ভাষ্য, আগের পরপর তিনটি নির্বাচনে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল মানুষের ভেতরে এখনও সে শঙ্কাটা কাটেনি যে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা। সেজন্য আমরা বলেছি সরকারকে অনেকগুলো উদ্যোগ নিতে হবে। যাতে করে মানুষ আস্থা পায় যে এবার নির্বাচনটি সঠিক হবে। আমরা ভোট দিতে যেতে পারব।
দ্বিতীয় পর্যবেক্ষণের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনের। তাহলে নির্বাচনের আগেই আরো দুটো কাজ সারতে হবে। একটা হচ্ছে বিচারকে দৃশ্যমান করতে হবে। সেজন্য ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশকে আইনি ভিত্তি দিয়ে বাস্তবায়ন করা এবং সেই ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন হওয়ার কথা বলেন নায়েবে আমির।
সিইসি ভালো নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিয়েছেন তুলে ধরে তিনি বলেন, তার উপরে এখনও আস্থা রাখতে চায় জামায়াত। নায়েবে আমির বলেন, এখন পর্যন্ত সে ব্যাপারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু এটা হচ্ছে ফার্স্ট রাউন্ড, সেকেন্ড রাউন্ড (ফাইনালের আগে) সেমিফাইনাল তারা কীভাবে করে সেটা আমরা দেখব। যদি এটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য উপযোগী হয় এবং যা যা এদেশের মানুষ আশা করে সুস্থ নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা; সেটা যদি উনারা করেন তাহলেতো কোনো আপত্তি নেই।