রাঙ্গুনিয়ায় কর্ণফুলী নদীতে বালি উত্তোলনের সময় কয়েকটি ড্রেজারে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। রোববার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার সরফভাটা পাইট্টেলিকুল ও পোমরা বাচা বাবার মাজার সংলগ্ন এলাকায় পৃথক এই ঘটনা ঘটেছে। ড্রেজার পোড়ানোর ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা দাবি করেছেন, চাঁদা চেয়ে না পেয়ে একটি পক্ষ সংঘবদ্ধ হয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে অন্য একটি পক্ষের দাবি, বালি উত্তোলনের ফলে সরফভাটায় তীব্র নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে এবং অন্যদিকে বাচা বাবার মাজারসহ এলাকাটিও ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। এতে স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে মসজিদের মাইকে ডেকে সংঘবদ্ধ হয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। তবে একাধিক সূত্র বলছে, বালি উত্তোলনকারীদের একাধিক পক্ষ নিজেদের অন্তর্কোন্দলের ফলেই এই হামলার ঘটনা ঘটে। জানা যায়, কর্ণফুলী নদীতে ৫টি বালু উত্তোলনের ড্রেজারে অজ্ঞাত ৩৫/৪০ জন ব্যক্তি আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় ড্রেজারে থাকা মো. মামুন (৩০) ও মো. রাকিব (২১) নামে দুইজন শ্রমিককে তারা মারধর করে। এছাড়াও তারা ড্রেজারে থাকা ৫টি গেট বলের মধ্যে ২টি পুড়িয়ে দেয়। আহত শ্রমিকদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
ক্ষতিগ্রস্ত ড্রেজারগুলো বালি উত্তোলনের ইজারাদার আহম্মদ মোস্তফা ট্রেডার্সের মালিকানাধীন জানিয়ে এই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মো. দিদারুল ইসলাম দাবি করেন, তারা বৈধ উপায়ে বালি উত্তোলন করছেন। একটি পক্ষ তাদের কাছ চাঁদা দাবি করে না পেয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এতে তাদের ৩টি ড্রেজার পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। দুটি ড্রেজার মেশিন নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া একটি স্পিডবোট ডুবিয়ে দেয়া হয়েছে। যাওয়ার সময় শ্রমিকদের একাধিক মোবাইল এবং নগদ টাকাও লুট করে নিয়ে গেছে হামলাকারীরা। এই ঘটনায় শ্রমিক মামুন ও রাকিবের বাইরেও লিয়াকত মাঝি ও ফয়সাল নামে আরও দু’জন আহত হয়েছেন। এই দুজন চট্টগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসাধীন। এই ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরফভাটা পাইট্টেলিকুল এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, দীর্ঘদিন ধরে বেপরোয়া বালি উত্তোলনের ফলে সরফভাটা মৌলানা গ্রামে তীব্র নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। আগে রাতে বালি উত্তোলনকালে এলাকাবাসী পাহারা দিয়ে এসব প্রতিহতের চেষ্টা করে। এমনকি নদীর পাড় এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধে এবং বালি উত্তোলন বন্ধে মানববন্ধন, ইউএনও ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হয়। কিন্তু প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় বালি উত্তোলনকারীরা আরও বেপরোয়া হয়ে প্রকাশ্যে একাধিক আধুনিক ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে দিনেরাতে সমানতালে বালি উত্তোলন করছে। এতে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী এই ঘটনা ঘটিয়েছে। বালি উত্তোলন বন্ধ না হলে এলাকার মানুষ বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবে বলে জানান তারা।
এই ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুল হাসান বলেন, সকালে ক্ষতিগ্রস্ত একটি পক্ষ মৌখিকভাবে অভিযোগ করে। এটা নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পাঠিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়। বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।