দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের জন্য একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা দীপংকর বর বলেন, দ্বীপটির জন্য একটি মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। এর পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য বিকল্প আয়ের উপায় নির্ধারণের কর্মসূচিও হাতে নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, দ্বীপটির প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারের জন্য (দ্বীপের প্রকৃতির ক্ষতি কমিয়ে আবার সুস্থ ও জীবন্ত করে তোলার লক্ষ্যে) সেখানে পর্যটন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এদিকে গতকাল মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত এক বছরে পরিবেশ সুরক্ষা, বন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় মন্ত্রণালয় বেশ কিছু যুগান্তকারী উদ্যোগ নিয়েছে। দূষণ কমাতে সারা দেশের শপিংমলগুলোতে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করা হয়েছে। পলিথিন উৎপাদন কারখানা, কাঁচাবাজার ও অন্যান্য স্থানে এর ব্যবহার রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যৌথ অভিযান চলছে। পাশাপাশি পলিথিনের বিকল্প হিসেবে সাশ্রয়ী মূল্যে পাটের ব্যাগ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি যৌথ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। খবর বাসসের।
বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে ‘জাতীয় বায়ুমান ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এছাড়া ৮৩০টি অবৈধ ইটভাটা ভেঙে দেওয়া হয়েছে এবং ঢাকার সাভার ও আশুলিয়াকে ‘দূষিত বায়ুমণ্ডল’ এলাকা হিসেবে ঘোষণার প্রক্রিয়া চলছে। অবৈধ সীসা কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং শব্দ দূষণ প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে তরুণদের যুক্ত করা হয়েছে।
গাজীপুরের গাছা খাল দূষণকারী নয়টি কারখানার সংযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে এবং সব পলিথিন উৎপাদনকারী কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পরিবেশ অধিদপ্তরের জন্য নতুন কর্মসূচি অনুমোদিত হয়েছে এবং এর নিজস্ব ৩৭টি অফিস ভবন নির্মাণের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
পাহাড় সংরক্ষণের জন্য ১৬টি জেলার তালিকাভুক্ত পাহাড়ের তথ্য অনলাইন ডেটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং নিয়মিত নজরদারি চলছে। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের আওতায় ৩৫১ কোটি টাকার ৪১টি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। এছাড়া ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ’ চূড়ান্ত হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ডের ওপর আলোকপাত করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। কঙবাজার ও সোনাদিয়ায় বিভিন্ন কাজে বরাদ্দকৃত ১০ হাজার ৩২২ একর বনভূমি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। পূর্বাচলে ১৪৪ একর এলাকাকে বিশেষ জীববৈচিত্র্য এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। গত এক বছরে বেদখল হওয়া ৫ হাজার ৯৩ একর বনভূমি পুনরুদ্ধার করে সেখানে আবার বনায়ন করা হয়েছে।
ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছের চারা উৎপাদন ও রোপণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মধুপুর শালবন পুনরুদ্ধারে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। হাতির চলাচলের পথ তৈরি এবং জীববৈচিত্র্য বাড়ানোর জন্য চুনতি ও শেরপুরের বন পুনরুদ্ধারের কাজও চলছে।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে মানব–হাতি সংঘাত কমাতে ১৫৯টি ‘এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম (ইআরটি)’ গঠন করা হয়েছে। বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় ময়ূর ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, বিপন্ন প্রজাতিগুলোকে সুরক্ষিত করা হচ্ছে, জলাভূমিগুলোকে অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে ও ২৯৩টি বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন অভিযানে ৫ হাজার ৬৮৪টি প্রাণীকে উদ্ধার করা হয়েছে। জাতীয় উদ্যান ও ইকোপার্কগুলোতে প্লাস্টিক ব্যবহার ও পিকনিক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বন্যপ্রাণী আইন আধুনিকীকরণ এবং নতুন আইন, বিধি ও নির্দেশিকা প্রণয়নের কাজও চলছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মন্ত্রণালয়ের এসব উদ্যোগ দেশের পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষায় নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এগুলো একটি জলবায়ু প্রতিরোধী ও টেকসই বাংলাদেশ গড়ার পথে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।