প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক লাওসকে হারিয়ে এএফসি অনূর্ধ্ব–২০ উইমেন’স এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে শুভ সূচনা করেছিল বাংলাদেশ। এবার তিমুর লেস্তেকে গোল বন্যায় ভাসিয়ে টানা দ্বিতীয় জয় পেয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। গতকাল শুক্রবার লাওস জাতীয় স্টেডিয়ামে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে তিমুর লেস্তের বিপক্ষে ৮–০ গোলে জিতেছে বাংলাদেশ। শিখা সিনহা দলকে এগিয়ে নেওয়ার পর অসাধারণ ‘অলিম্পিক গোলে’ ব্যবধান দ্বিগুণ করেন শান্তি মার্দি। হ্যাটট্রিক উপহার দেন তৃষ্ণা রানী সরকার। এছাড়া গোলের দেখা পেয়েছেন নবীরন খাতুন, সাগরিকা ও মুনকি আক্তার। শুরুতে একটু সাবধানী ফুটবল খেলে মেয়েরা। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মেলে ধরেন নিজেদের। ম্যাচজুড়ে আধিপত্য করে তিমুর লেস্তেকে রীতিমত উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। লাওসকে হারিয়ে ‘এইচ’ গ্রুপে যাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশ। টানা দুই জয়ের পর পিটার জেমস বাটলারের দল আগামীকাল রোববার মুখোমুখি হবে গ্রুপের সবচেয়ে শক্তিশালী দল দক্ষিণ কোরিয়ার।
খেলার অষ্টম মিনিটে ভালো একটি সুযোগ পায় বাংলাদেশ। কিন্তু গোলমুখ থেকে নবীরন দরকারি টোকা দিতে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশও ব্যর্থ হয় গোল পেতে। এরপরই পাল্টা আক্রমণে বাংলাদেশকে বিপদে ফেলতে যাচ্ছিল তিমুর লেস্তে। এমিলি রুটকোভস্কির শট কোনোমতে হাত ছুঁইয়ে কর্নার করে দেন স্বর্ণা রানী মন্ডল। দুই মিনিট পর আবারো আক্রমণ তিমুরের। তাদের আরেকটি আক্রমণে স্বর্ণা পরাস্ত হলেও নিশ্চিত গোল থেকে রক্ষা পায় বাংলাদেশ। একেবারে গোললাইন থেকে হেডে বল ক্লিয়ার করে দেন জয়নব বিবি রিতা। এরপরই আসে বাংলাদেশের জন্য সুযোগ। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সেট–পিস থেকে ২০তম মিনিটে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। কর্নারে দূরের পোস্টে অরক্ষিত শিখা হেডে খুঁজে নেন জাল (১–০)। ৩৩তম মিনিটে আসে শান্তির এক দৃষ্টিনন্দন গোল। এই মিড ফিল্ডারের বাম পায়ের কর্নার বাঁক খেয়ে দূরের পোস্টের ভেতরের দিকে লেগে বল জালে জড়ায় (২–০)। অলিম্পিক গোল বলে বিবেচিত হয় এটি। একটু পরই ব্যবধান আরও বাড়ে। কর্নার থেকেই হেডে লক্ষ্যভেদ করেন নবীরন (৩–০)। সেট–পিস থেকে তিন গোল পাওয়ার পর প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে সাগরিকা–তৃষ্ণার দারুণ বোঝাপড়ায় আবারও গোল উদযাপন করে বাংলাদেশ। বঙে ডান দিকে সাগরিকার কাটব্যাক পেয়ে জালে জড়ান তৃষ্ণা (৪–০)।
চার গোলে এগিয়ে থেকে প্রথমার্ধ শেষ করার পর দ্বিতীয়ার্ধে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ নামে আরো বেপরোয়া হয়ে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে গোলমুখে জটলার ভেতর থেকে বল পেয়ে জালে জড়িয়ে ব্যবধান আরও বাড়ান তৃষ্ণা (৫–০)। ৭৩তম মিনিটে গোলের খাতায় নাম তোলেন আগের ম্যাচে জোড়া গোল করা সাগরিকা। সতীর্থের থ্রু পাস ধরে গোলরক্ষককে কাটিয়ে জাল খুঁজে নেন তিনি (৬–০)। ৮১তম মিনিটের গোলে বড় জয়ের পথে ছুটতে থাকে মেয়েরা। বাম দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠা সাগরিকার আড়াআড়ি পাস টোকায় জালে জড়িয়ে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন তৃষ্ণা (৭–০)। যোগ করা সময়ে মুনকি আক্তার দলের অষ্টম গোলটি করেন (৮–০)।
গত মাসে মিয়ানমারে এশিয়ান বাছাইয়ে নৈপুণ্য দেখিয়ে প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল। লাওসে চলমান অনূর্ধ্ব–২০ এশিয়ান বাছাই পর্ব উতরাতে পারলে জুনিয়ররাও পাবে সে সাফল্য। ‘এইচ’ গ্রুপে থাকা বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–২০ নারী ফুটবল দল পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকতে পারলেই মূল পর্বের টিকিট কাটবে। দ্বিতীয় হলেও বেঁচে থাকবে তাদের আশা। আট গ্রুপের সেরা আট দলের সঙ্গে সেরা তিন গ্রুপ রানার্স আপ দলও পাবে আগামী বছর থাইল্যান্ডে মূল পর্বে খেলার সুযোগ। পরপর দুই জয়ে ৬ পয়েন্ট তুলে নিয়ে শীর্ষে থাকা বাংলাদেশ সেই সুযোগটা দারুণভাবে জিইয়ে রেখেছে। গ্রুপে বাংলাদেশের সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ দক্ষিণ কোরিয়া নিজেদের প্রথম ম্যাচে পূর্ব তিমুরকে হারিয়েছিল ৯–০ গোলে।