কাপ্তাই লেকের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলার কিছু এলাকা প্লাবিত হয়ে আছে। হ্রদে পানির চাপ কিছুটা কমলেও ভোগান্তি কমেনি এখনও। এছাড়া কাপ্তাই হ্রদের অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দেওয়ার কারণে কর্ণফুলী নদীতে বেড়েছে পানি ও স্রোত। এতে চন্দ্রঘোনা–লিচুবাগানে টানা ২ দিন ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে গতকাল রাত থেকে কাপ্তাই হ্রদের পানি ছাড়ার পরিমাণ কমিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, এক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি খাগড়াছড়ির মহালছড়ির কয়েকটি গ্রামের ২০০ পরিবার। তবে প্লাবিত এলাকা থেকে পানি কিছুটা কমলেও পুরোপুরি ভোগান্তি কমেনি। উপজেলার সিলেটিপাড়া, চট্টগ্রামপাড়া, ব্রিজপাড়া পাড়া, কাপ্তাইপাড়া ও কেয়াংঘাট সাতঘড়িয়াপাড়া থেকে পানি নামছে ধীরগতিতে। স্থানীয়রা জানান, বৃষ্টি না থাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় প্লাবিত এলাকা থেকে ৫–৭ ইঞ্চি পানি কমলেও পুরোপুরি ভোগান্তি কমেনি। এছাড়া সড়ক থেকে পানি না নামায় এখনো মুবাছড়ি ইউনিয়নের সাথে মহালছড়ি সদর উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে মুবাছড়ির ১৯টি গ্রামের বাসিন্দারা। পানিতে ডুবে যাওয়া মহালছড়ি দাখিল মাদ্রাসায় আশ্রয় নিয়েছে ১২ পরিবার।
দুর্গত এলাকায় খাদ্য সহায়তা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। মহালছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু রায়হান জানান, কাপ্তাই লেকের পানি না কমায় সদর ও মুবাছড়ি ইউনিয়নের ব্রিজ পাড়া, কাপ্তাই পাড়া, সিলেটি পাড়া, চট্টগ্রাম পাড়ার প্রায় ২০০ পরিবার পানিতে ডুবে গেছে। তাদের খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। এছাড়া মহালছড়ি দাখিল মাদ্রাসা আশ্রয় কেন্দ্রে ১২টি পরিবারের ৩৪ জন আশ্রয় নিয়েছে। তাদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রান্না করা খাবার দেয়া হচ্ছে। আমরা আশা করছি পানি নেমে গেলে দুর্ভোগ কমে আসবে।
রাঙামাটি : রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, কাপ্তাই হ্রদের পানির চাপ কিছুটা কমলেও বিপদ সীমার কাছাকাছি থাকায় জেলার বিভিন্ন উপজেলার কিছু এলাকা প্লাবিত হয়ে আছে। পানিতে ঘরবন্দি হয়ে আছেন বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ। রাঙামাটি জেলা শহরের আসামবস্তি ব্রাহ্মণটিলা, শান্তি নগরসহ কিছু এলাকায় পানি উঠে আছে। রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, জেলার ২০ ইউনিয়নের ৮১টি গ্রাম, ৫ হাজার ৭০০ পরিবার এবং ১৮ হাজার ১৪৭ জন মানুষ পানিতে প্লাবিত। জেলায় ৫৪৮টি ঘর, ৬১টি সড়ক, ২টি ব্রিজ–কালভার্ট, ৯৮ একর ফসলি জমি, ৪৩টি মৎস্য খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলায় ২৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পানিবন্দি এলাকায় সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
এদিকে কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে গতকাল রাত ৮টার আগ পর্যন্ত সাড়ে ৩ ফুট জলকপাট খোলা থাকলেও ৮টার পর কমিয়ে সেটি ৩ ফুট করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সহকারী প্রকৌশলী মো. তারেক আহমেদ জানান, শুক্রবার রাত ৮টা থেকে গেইট ওপেনিং ৩ ফুট করা হয়েছে। রাত ১০টা পর্যন্ত হ্রদের পানির উচ্চতা ১০৮ দশমিক ৫৪ এমএসএল।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) এসএম মান্না জানান, জেলার সদর, লংগদু, বাঘাইছড়িসহ অন্যান্য উপজেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরি খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার এবং ২ হাজার কেজি চাল বন্যা কবলিতদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। যে কোনো ক্ষতি এড়াতে জেলায় মোট ২৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে জানান তিনি।
চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাট : কাপ্তাই প্রতিনিধি জানান, কাপ্তাই হ্রদের পানি ছাড়ায় কর্ণফুলী নদীতে স্রোতের তীব্রতার কারণে বৃহস্পতিবারের মতো গতকাল শুক্রবারও চন্দ্রঘোনায় ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। ফেরি চলাচল বন্ধের কারণে সরাসরি বান্দরবানের সঙ্গে রাঙামাটির যাত্রীবাহী বাস চলাচল দ্বিতীয় দিনের মতো বন্ধ ছিল। রাঙামাটি সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, নদীতে পানির স্রোত না কমা পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ থাকবে। তীব্র স্রোতে ঝুঁকি নিয়ে ফেরি চলাচল করবে না।
গতকাল সকাল ১১টায় সরেজমিনে দেখা গেছে ফেরির পন্টুন এখনও ৩ ফুট পানির নিচে ডুবে আছে। চন্দ্রঘোনা ফেরির ইনচার্জ মো. আকরাম বলেন, নদীতে স্রোত বৃদ্ধি পাওয়ায় ফেরি চলাচল বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে।
চন্দ্রঘোনা থানার ওসি মো. শাহজাহান কামাল বলেন, ফেরি বন্ধ থাকায় কর্ণফুলী নদীর লিচুবাগান এবং রাইখালী অংশে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিপুল সংখ্যক যানবাহন আটকা পড়েছিল। আইনশৃক্সখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নদীর পাড়ে রাইখালী অংশে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
বান্দরবান–রাঙ্গামাটি সড়কে বাসচালক মো. সুরুজ মিয়া বলেন, ভারী বৃষ্টি হলেই লিচুবাগানে ফেরির পন্টুন পানিতে ডুবে যায়। এর ফলে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে আমরা সবসময় ভোগান্তিতে পড়ি। বছরের পর বছর ধরে শুনে আসছি লিচুবাগানে নতুন সেতু নির্মিত হবে। কিন্তু বিগত ৩ দশকেও লিচুবাগানে সেতু নির্মাণের কোনো লক্ষণ দেখলাম না। আর আমাদের দুর্ভোগও কখনো কমল না।