সিডিএ-চসিকের ঠেলাঠেলিতে বাড়ছে জনদুর্ভোগ

অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়ক । বিভিন্ন অংশে বড় বড় গর্তে জমে আছে পানি । ক্ষোভ সাধারণ মানুষের

মোরশেদ তালুকদার | শনিবার , ৯ আগস্ট, ২০২৫ at ৬:৪৩ পূর্বাহ্ণ

ওঠে গেছে সলিং। নেই ইটের অস্তিত্বও। সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। সেখানে আবার জমে আছে পানি। নগরের অক্সিজেনকুয়াইশ সড়কের একটি অংশে এ দৃশ্য দেখা গেছে। আরেকটু স্পষ্ট করলে, সড়কটির কুয়াইশমুখী অংশের পাশে রয়েছে ফ্রোবেল একাডেমি। এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিপরীতে (অক্সিজেনমুখী অংশ) অল্প আসতেই সড়কটির এ বেহাল দশা চোখে পড়ে। শুধু অংশটি নয়; পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির বেশিরভাগ অংশই ভাঙাচোরা। যেখানে সলিং ও ইট ওঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য ছোটবড় গড়। এতে দুর্ভোগে আছেন ওই সড়কের ওপর নির্ভরশীল স্থানীয় বাসিন্দা, পথচারী এবং বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা।

জানা গেছে, সড়কটি বর্তমানে সিডিএ’র তত্ত্বাবধানে রয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণ খাতে বরাদ্দ না থাকায় সংস্থাটি এটি মেরামত করতে পারছে না। আবার আইনগতভাবে এখতেয়ার না থাকায় সিডিএ’র ক্ষতিগ্রস্ত এ সড়কে সংস্কার কাজ করতে পারছে না চসিক। সিডিএ’র দাবি, তারা সড়কটি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে (চসিক) বুঝিয়ে দিতে চায়। এজন্য কয়েক দফা চিঠিও দেয়া হয় চসিককে। কিন্তু এতে সাড়া দিচ্ছে না চসিক। বিপরীতে চসিকের প্রকৌশলীরা বলছেন, সড়কটির প্রায় পুরোটই ভাঙা। নিয়ম অনুযায়ী, সড়ক নির্মাণের পর পর নতুন অবস্থায় বুঝিয়ে দিলে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গ্রহণ করা হয়। তাছাড়া এ সড়কে ড্রেনেজ ব্যবস্থাও পর্যাপ্ত নেই। অনেক জায়গায় পানি জমে থাকে। ফুটপাতও পাকা করা হয়নি। কিছু জায়গায় মিড আইল্যান্ডও ভাঙা। তাছাড়া সড়কটির একটি অংশে চলছে ব্রিজ নির্মাণ কাজ। ব্রিজটির নির্মাণ শেষে সড়কটি সম্পূর্ণ মেরামত করে বুঝিয়ে দিলে গ্রহণ করবে চসিক এবং এরপর থেকে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। যা সিডিএ’কে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে।

এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ও সিডিএ’র ঠেলাঠেলির কারণেই সড়কটির অবস্থা দিন দিন আরো খারাপ হচ্ছে। সাধারণ লোকজন জানিয়েছেন, কার সড়ক সেটা তাদের দেখার বিষয় না। তারা সড়কটির দ্রুত মেরামত চান।

সরেজমিন চিত্র : গত বুধবার সরেজমিন পরিদর্শনকালে সড়কটির কুয়াইশমুখী অংশে ফ্রোবেল একাডেমির আগে বিশাল অংশজুড়ে ভাঙা দেখা গেছে। সেখানে জমেছিল পানি। এছাড়া বিপরীত পাশে (অক্সিজেনমুখী অংশ) ফ্রোবেল একাডেমি পার হয়ে অল্প আসতেও সড়ক ভেঙে সৃষ্ট বিশাল গর্তে জমেছিল পানি। এটা দেখতে অনেকটা মিনি পুকুরে পরিণত হয়েছে।

এছাড়া কুয়াইশমুখী অংশে একটি হাসপাতালের সামনে ভাঙা দেখা গেছে। এছাড়া ওয়ালটন হাইসেন্স, ফেরদৌস ফ্যাশন টেইলার্স এর সামনে গর্ত দেখা গেছে। পানি জমে থাকতে দেখা গেছে বাটাএপেক্স এর সামনে হালকা পানি জমে থাকতে দেখা গেছে।

সড়কটির কুয়াইশ থেকে অক্সিজেনমুখী অংশটির অবস্থা ছিল বেহাল। এর মধ্যে কুয়াইশ নতুন রাস্তার মাথা পার হয়ে অল্প আসতেই বড় বড় গর্ত দেখা গেছে। এখানে ফেবুলাস নামে একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের সামনের অবস্থা ছিল বেহাল। ওই অংশে বিসমিল্লাহ গ্যারেজ পার হয়ে আসতেই সড়কটি মেরামত করতে দেখা গেছে। এতে অংশে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে ফ্রোবেল একাডেমির সামনের অংশে (কুয়াইশমুখী) দিয়ে দুইপাশের যান চলাচল করায় সেখানে যানজট লেগে যায়। সড়কটির এই অংশে (অক্সিজেনমুখী) শাহ আমানত জামে মসজিদের পূর্ব পাশেও ভাঙাচোরা দেখা গেছে। এখান থেকে অক্সিজেন মোড় পর্যন্ত পুরো অংশেই ছোটবড় অসংখ্য গর্ত রয়েছে।

সড়কটি একটি অংশে দেখা গেছে জামিয়া ওমর ফারুক চট্টগ্রাম বাংলাদেশ নামে একটি সাইনবোর্ড। এর সামনে অংশের সিডিএ’র জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় একটি কালভার্ট নির্মাণ কাজ চলছে। সেজন্য সড়কটি সেখানে ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছে। ওই অংশটির অবস্থা সবচেয়ে বেহাল। পুরোটাই ভাঙা, সেখানে রয়েছে বড় বড় গর্ত। একপাশে গর্তে পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। বাকি অংশ কাঁদায় একাকার। সেখানে যানজট লেগে থাকতেও দেখা গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহেদ আজাদীকে জানান, ক্ষতিগ্রস্ত অক্সিজেনকুয়াইশ সড়ক নিয়ে এলাকাবাসীর কষ্টের শেষ নেই। যাতায়াতে তীব্র ভোগান্তি হচ্ছে। মোবিন নামে এক পথচারী বলেন, এ সড়কের যেন কোনো মাবাপ নেই। দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট হয়ে থাকলেও কেউ মেরামত করছে না।

জানা গেছে, চট্টগ্রামহাটহাজারী সড়কের অক্সিজেন মোড় থেকে চট্টগ্রামকাপ্তাই সড়ককে কুয়াইশ অংশে যুক্ত করেছে সড়কটি। উত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা ও পার্বত্য জেলা থেকে নগরীতে প্রবেশ না করে উত্তরের অন্যান্য উপজেলা ও দক্ষিণ চট্টগ্রামে যাতায়াতের জন্য সড়কটি বাইপাস হিসেবে ব্যবহার হয়। এই সড়কে ফ্রোবেল একাডেমিসহ প্রায় ১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আছে একটি হাসপাতাল। সড়কের দুই পাশে আছে জনবসতিও। এখানে গড়ে উঠে অনন্যা আবাসিক এলাকা। তাই সড়কটি জনগুরুত্বপূর্ণ।

সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, অক্সিজেনকুয়াইশ সড়ক সম্প্রসারণ উন্নয়নে ২০১৩ সালের জুলাইয়ে প্রকল্প গ্রহণ করে সিডিএ। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে এর কাজ শেষ হয়। এতে ব্যয় হয় ৪৫ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের ৩০ জানুয়ারি সম্প্রসারিত সড়কটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী। চার লেইনের সড়কটির প্রস্থ ৬০ ফুট। উদ্বোধনের পর পর সড়কটি চসিকে বুঝিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয়নি সিডিএ। এরপর পাইপ লাইন বসানোর জন্য ২০১৮ সালে সড়কটি কাটে ওয়াসা। অবশ্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে একই বছরের ৮ এপ্রিল সংস্থাটি সিডিএকে ৭ কোটি ৮৯ লাখ পরিশোধ করে। পরে সিডিএ সড়কটি মেরামত করলেও তা বছর না ঘুরতেই নষ্ট হয়ে যায়। এরপরও বিভিন্ন সময়ে সংস্কার করে সিডিএ।

কী বলছে চসিকসিডিএ :

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস আজাদীকে বলেন, রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমাদের ফান্ড নেই। তারপরও আমরা মেরামত করব। এখন বৃষ্টির মধ্যে কার্পেটিং করা যাবে না। বৃষ্টি কমলেই কাজ করব। তিনি বলেন, আমরা সড়কটি বুঝে নিতে সিটি কর্পোরেশনকে ৪/৫ বার লিখেছি। ফোনে কথা বলেছি। কিন্তু তারা বুঝে নিচ্ছে না।

চসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান আজাদীকে বলেন, সড়কটি সিডিএ’র। তাই আমরা সেখানে কাজ করতে পারছি না। ‘সড়ক বুঝে নিতে সিডিএ’র চিঠি প্রসঙ্গে’ জানতে চাইলে বলেন, চিঠি দিলে তো হবে না। সড়কটি ভাঙা। ভাঙা সড়ক কিভাবে বুঝে নেব। এক্সেস রোড নতুন অবস্থায় আমাদেরে বুঝে নিতে বলেছে, আমরা বুঝে নিয়েছি। এটাও সব ঠিক করে দিলে আমরা বুঝে নেব।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চসিকের এক প্রকৌশলী আজাদীকে বলেন, তারা ২০১৫ সালে রোডটি করেছে। নিয়ম হচ্ছে তখন বুঝিয়ে দেয়া। কিন্তু তা না করে নষ্ট হয়ে যাওয়ার প্রায় ৯ বছর পর আমাদের বুঝে নিতে চিঠি দিয়েছে। আমরা যে জবাব দিয়েছি সেখানে বিষয়গুলো তুলে ধরেছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহত্যায় নিজের সম্পৃক্ততা ও নির্দেশনার কথা স্বীকার
পরবর্তী নিবন্ধএখন করণীয় কী? শরিকদের নিয়ে তারেকের বৈঠক